ইউরোপের বিরুদ্ধে রাশিয়ার হাইব্রিড যুদ্ধ কোন পথে
১৪ নভেম্বর দুই ব্যক্তি ওয়ারশ থেকে ইউক্রেনে যাওয়ার রেললাইনে নাশকতার চেষ্টা করেন। মিকা নামের একটি গ্রামের কাছে বিস্ফোরণে রেললাইনের একটি অংশ ভেঙে যায়। আরেকটি ঘটনায় গোওয়াম স্টেশনের কাছে বিদ্যুতের তার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ৪৭৫ জন যাত্রী বহনকারী একটি ট্রেনকে জরুরি ভিত্তিতে থামতে হয়। চালক দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে মৃত্যুর ঘটনা ঘটত।
পরে গণমাধ্যমে জানা যায়, রেললাইনে কয়েক সেন্টিমিটার দূরত্বে তিনটি বিস্ফোরক রাখা হয়েছিল।
এই ঘটনার পর পোলিশ প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক পার্লামেন্টে জানান, পোল্যান্ডের প্রসিকিউটর অফিস এবং বিশেষ সংস্থার তদন্তে (মিত্রদেশগুলোকে নিয়ে) দেখা গেছে, যাঁরা এই নাশকতা ঘটাতে চেয়েছেন, তাঁরা হলেন ইউক্রেনের নাগরিক ইয়েভহেনি ইভানভ ও ওলেক্সান্দর কোনোনভ। তাঁরা বেলারুশ থেকে পোল্যান্ডে এসে নাশকতার পর বেলারুশে ফিরে যান।
বেলারুশ হলো রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র। দুজনের মধ্যে একজন আগে লভিভ শহরে নাশকতার জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। অন্যজন রাশিয়া–নিয়ন্ত্রিত দনবাস অঞ্চলের বাসিন্দা।
রাশিয়া সাধারণত পোল্যান্ডে হামলা করতে ইউক্রেনীয়দের ব্যবহার করে। পোলিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাদোসোয়াভ সিকোরস্কি বলেছেন, এটি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ। দখল করা এলাকাগুলো থেকে লোকজনকে বেছে নেওয়া হয়। তাঁদের পরিবারকে হুমকি দিয়ে কাজ করানো সহজ। এই ঘটনার ক্ষেত্রেও পোলিশ কর্তৃপক্ষ আগেই দুই নাশকতাকারীর পরিচয় ও ছবি পেয়ে গেছে। তারা বলছে—দুজনই রাশিয়ার পক্ষে কাজ করেছে।
তাঁরা সামরিক মানের সি-ফোর বিস্ফোরক ব্যবহার করেছিলেন। ৩০০ মিটার দূরের তার দিয়ে ট্রেন যখন পাশ দিয়ে যাচ্ছিল, তখন বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। রাশিয়ার আগের নাশকতার সঙ্গেও এটির মিল আছে। রেললাইনের বাঁকানো জায়গায়, উঁচু বাঁধের ওপর বিস্ফোরক রাখা হয়েছিল। এতে ট্রেন লাইনচ্যুত করার উদ্দেশ্য ছিল বলে মনে হয়। এভাবে রাশিয়া দেখাতে চেয়েছে—ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানোর রেলপথে তারা বড় ক্ষতি করতে পারে।
পোল্যান্ডে রাশিয়ার উসকানি বাড়ছে এবং আরও বিপজ্জনক হচ্ছে। মে ২০২৪-এ রাশিয়ার পক্ষে কাজ করা লোকজন ওয়ারশর মারিভিলস্কা স্ট্রিটের একটি বড় শপিং সেন্টারে আগুন দেয়। তারা ভ্রোৎসোয়াভের একটি পেইন্ট কারখানাতেও আগুন লাগায়। হাজার হাজার মানুষ তাদের সম্পদ ও চাকরি হারায়। দুই ক্ষেত্রেই অপরাধীরা ধরা পড়ে এবং দোষী সাব্যস্ত হয়। এরপর ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে ১৯টি ড্রোন পোল্যান্ডের আকাশসীমায় ঢোকে। এই ঘটনা বিশ্বব্যাপী সংবাদমাধ্যমে আলোচিত হয়।
এসব ঘটনায় প্রাণহানি হয়নি, কিন্তু হতে পারত। কিন্তু সর্বশেষ নাশকতার উদ্দেশ্যই ছিল মানুষ হত্যা।
এখন আরও উত্তেজনা বাড়ার আশঙ্কা আছে। শান্তি ও যুদ্ধের মাঝের ধূসর জায়গা দ্রুত ছোট হয়ে আসছে। রাশিয়ার লক্ষ্য হলো পোল্যান্ড ও ইউক্রেনের মধ্যে সন্দেহ তৈরি করা, পোল্যান্ডের ভেতরে রাজনৈতিক বিভাজন আরও বাড়ানো, এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নবিরোধী দলগুলোকে শক্তিশালী করা। যারা বলছে পোল্যান্ড ইইউ থেকে বেরিয়ে যাক—তাদের প্রভাবও বাড়ছে, এবং তারা কিছু বড় ধরনের সাফল্যও পাচ্ছে।
১১ নভেম্বর পোল্যান্ডের স্বাধীনতা দিবসে একটি ভাষণ দেন নতুন ডানপন্থী প্রেসিডেন্ট কারোল নাভরোকি। তিনি একবারও রাশিয়াকে হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেননি। বরং তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) আক্রমণ করেন।
তিনি বলেন, ‘পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট কখনোই আমাদের আবার সেই “ময়ূর আর তোতা” বানাতে দেবেন না, যারা পশ্চিমের কথা শুধু নকল করে।’ তাঁর মতে, কিছু পোলিশ রাজনীতিবিদ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এক টুকরা করে বিদেশি প্রতিষ্ঠান, আদালত ও ইইউর হাতে তুলে দিচ্ছেন। বারবার আমন্ত্রণ পেলেও তিনি এখনো ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করতে কিয়েভ যাননি।
- ট্যাগ:
- মতামত
- যুদ্ধ ও সংঘাত
- ইউক্রেন সংকট