You have reached your daily news limit

Please log in to continue


ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ অসাংবিধানিক ও অবাস্তব

ঐকমত্য কমিশন তাদের ৮৪টি সুপারিশ সম্পর্কিত একটি দলিল প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দিয়েছে এবং এতে তারা সবাই স্বাক্ষর করেছেন। সংবাদমাধ্যম থেকে জানতে পেরেছি, ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে ৪৮টিই সংবিধানসংক্রান্ত। এবং বলা হয়েছে, এ প্রস্তাবগুলোর ওপরে গণভোট হবে। গণভোট কবে হবে, সেটি নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে। কেউ চাচ্ছে আগে, কেউ চাচ্ছে পরে, কেউ চাচ্ছে একই দিনে। এ বিতর্ক কীভাবে সমাধান হবে, সেটিতে আমরা যাব না।

সংবিধানসংক্রান্ত যে ৪৮টি সংস্কারের কথা বলা হয়েছে, সংবাদমাধ্যমে তার গুটিকয় বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে। যেমন-

* দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ হবে।

* প্রধানমন্ত্রী দুই মেয়াদের বেশি থাকতে পারবেন না। এবং

* একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় দলীয়প্রধান হতে পারবেন না।

আরও অন্যান্য প্রস্তাব আছে। এখন প্রশ্ন হলো, এ ৪৮টি সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাবগুলো-দেখে, পড়ে, বুঝে মতামত দিতে পারবেন কয়জন লোকে? সংবিধানের চর্চা কিন্তু জেলা আদালতে হয় না। জেলা আদালতে হয় দেওয়ানি মামলা আর ফৌজদারি মামলা। সংবিধানের চর্চা হয় শুধু সুপ্রিমকোর্টে। অর্থাৎ আমরা যারা সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী, তাদেরই মামলা-মোকদ্দমার জন্য সংবিধান নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে হয়। এটি জেলা আদালতের বিচারক এবং আইনজীবীদের সাধারণত করতে হয় না। যেখানে দুই-চার-পাঁচ হাজার আইনজীবীর মধ্যেই সংবিধানটা সীমাবদ্ধ, সেখানে অন্য দেশের সাধারণ জনগণ, এমনকি সুপ্রিমকোর্টের বাইরে থাকা অন্যান্য আদালতের আইনজীবীরাও যেহেতু এটা চর্চা করেন না, অতএব তাদের পক্ষেও এটি পড়ে বুঝে মতামত তৈরি করা বা সিদ্ধান্তে আসা খুবই দুষ্কর হবে।

আর এ ৪৮টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে যতগুলো সংবাদমাধ্যমে আসছে, তাতে দেখছি, সবই বর্তমান সংবিধানের পরিপন্থি বা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাহলে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগবে, একটি সংবিধানে দুই ধরনের কথা থাকতে পারে কিনা? যেমন-সংবিধানে বলা আছে যে আমাদের এক কক্ষবিশিষ্ট সংসদ হবে। সংস্কার প্রস্তাবে বলা হচ্ছে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ হবে। দুটো তো একসঙ্গে থাকতে পারে না।

আর সংসদীয় ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্দিষ্ট করা আছে কোন দেশে? কোনো দেশে নির্দিষ্ট করা আছে বলে আমার জানা নেই। রাষ্ট্রপতিশাসিত দেশ যেমন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ওইখানে রাষ্ট্রপতির মেয়াদ এবং আফ্রিকার অনেক দেশের রাষ্ট্রপতিশাসিত দেশে মেয়াদ সুনির্দিষ্ট করা আছে। কিন্তু কানাডা, যুক্তরাজ্য, নিউজিল্যান্ড বা অন্যান্য দেশ যারা সংসদীয় পদ্ধতিতে চলে, সেখানে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্দিষ্ট করে দেওয়া নেই। তারপরে আবার বলা হচ্ছে, কয়েকটি বিভাগে হাইকোর্ট স্থাপিত হবে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে ছয়টি বিভাগে হাইকোর্ট স্থাপন করা হয়েছিল, যেটি সুপ্রিমকোর্ট বলেছেন অসাংবিধানিক। হাইকোর্ট একমাত্র ঢাকাতেই থাকবে।

এ কয়েকটি উদাহরণ থেকে যেটা বোঝাতে চাচ্ছি, তা হলো, বর্তমান সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক অনেক ধারা যুক্ত করার প্রস্তাব তারা দিয়েছেন। এখন ঐকমত্য কমিশন কি গণপরিষদ? যে তারা সংবিধানে কী থাকবে না থাকবে সেটা বলে দেবে? তাদের এ ক্ষমতা কে দিয়েছে? সংবিধান সংশোধন করতে পারে, সংবিধান বাতিল করে দিলে নতুন সংবিধান লিখতে পারে গণপরিষদ, যেটা আমাদের ৭২ সালে হয়েছিল অথবা সংবিধান সংশোধন করতে পারে সংসদ। ঐকমত্য কমিশন সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা কোথা থেকে পেল, সেটা-ও একটি বিরাট প্রশ্ন। আর গণভোট সাধারণত সারা দুনিয়ায় অর্থাৎ যেসব দেশে গণভোটের রেওয়াজ আছে, গণভোটের আগে কোনো একটা বিষয় সাধারণত সংসদকে পাশ করতে হয়।

ঠিক আছে, আমরা এখন উদাহরণস্বরূপ সংসদীয় ব্যবস্থা থেকে রাষ্ট্রপতিশাসিত ব্যবস্থায় যাব। সংবিধানের এ সংশোধন আগে সংসদে পাশ করতে হবে। তারপরে এটি গণভোটে যাবে। এ প্রশ্নটা নিয়ে যে, আপনারা সংসদীয় গণতন্ত্র থেকে রাষ্ট্রপতিশাসিত ব্যবস্থায় পরিবর্তন করতে চাচ্ছেন, সেটির সঙ্গে আপনি একমত কিনা, সেটি গণভোটের প্রশ্ন। অর্থাৎ সাধারণত গণভোটের আগে একটি প্রতিনিধিত্বশীল প্রতিষ্ঠান; যেমন, সংসদ, ওইটা সম্পর্কে একটা সিদ্ধান্তে আসে। তারপরে ওই সিদ্ধান্তটা যাচাই-বাছাই করার জন্য গণভোটের আয়োজন করা হয়। তো এখন তো এইটা গণভোট হবে ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে। তো ঐকমত্য কমিশন তো নির্বাচিত কোনো প্রতিষ্ঠান না। তারা এটি গণভোটে কেমন করে দেবে? প্রথমে যেটা বলেছিলাম, গণভোটের এরকম একটি অবাস্তব প্রস্তাব, ৪৮টি সংবিধানের ৪৮টি ধারার সংশোধনের প্রস্তাব, এটি তো গণভোটে দেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না।

হ্যাঁ, তাদের মতামতগুলো যদি বাস্তবায়ন করতে হয়, তার একমাত্র পন্থা হবে বর্তমান সংবিধান বাতিল করে দেওয়া। কারণ যে কথাগুলো বলা হচ্ছে, সেটা তো বর্তমান সংবিধানের পরিপন্থি। হ্যাঁ, সংবিধান বাতিল বহু দেশ করেছে। আমার জানামতে, ডোমিনিকান রিপাবলিক ৩২ বার সংবিধান করেছে। ভেনিজুয়েলা করেছে ২৬ বার। হাইতি করেছে ২২ বার। কিন্তু যারা সংবিধান বারবার সংশোধন করে, তারা কেউই গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিমূলক বা উন্নয়নশীল দেশ হতে পারেনি। বরং সংবিধান ছাড়াই যেমন-যুক্তরাজ্য, কানাডা, নিউজিল্যান্ড-তারা উন্নত দেশ বা গণতান্ত্রিক দেশ। অর্থাৎ আমাদের প্রথম থেকেই ডায়াগনোসিসটা ভুল হয়েছে। ধরেন একজন রোগীর জ্বর হয়েছে...তো ডাক্তার ভুল করে রোগ নির্ণয় করল যে, তার ডেঙ্গু হয়েছে এবং ডেঙ্গুর চিকিৎসা দিল। তাতে তো রোগী মানে এ ভুল চিকিৎসার কারণে রোগীর অবস্থার সঙ্গিন হতে পারে। আমাদেরও যেটা হয়েছে, ঐকমত্য কমিশন মনে করেছে, সব সমস্যার মূলে হলো সংবিধান। সংবিধান ঠিক করলেই দেশের সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এটি শুরুতেই একটি ভুল ডায়াগনোসিস। ভালো সংবিধানের ওপরে যদি গণতন্ত্র, জবাবদিহিতা, দেশের উন্নয়ন নির্ভর করত, তাহলে তো দুনিয়ার কোনো দেশই অনুন্নত, অগণতান্ত্রিক বা স্বৈরাচারী শাসনে পড়ত না। দুনিয়ার সব দেশেই সংবিধানে ভালো ভালো কথা লেখা আছে। সংবিধানে বাকস্বাধীনতার কথা বলা আছে, ন্যায়বিচারের কথা বলা আছে, সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলা আছে-মানে মৌলিক অধিকারের কথা বলা আছে। কিন্তু দুনিয়ার ১০০টি দেশে তো এসব অবস্থা নেই।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন