
পুঁজিক্ষুধার্ত বাংলাদেশে কীভাবে বিনিয়োগ আসবে
অন্য অনেক বিকাশমান অর্থনীতির মতো বাংলাদেশও পুঁজিক্ষুধার্ত, হোক সেটি মূলধন বা ঋণ। সমপর্যায়ের অনেক দেশের মতো আমাদের এখানেও স্থানীয় পুঁজির স্বল্পতা পূরণ করে বিদেশি পুঁজি বা বিনিয়োগ। তবে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য আবার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য।
রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা যখন বিরাজ করে, তখন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ ও দ্বিধা তৈরি হয়। তারা নিশ্চিত হতে পারে না, তাদের বিনিয়োগ কতটা নিরাপদ থাকবে কিংবা ভবিষ্যতে সরকারের নীতিমালায় কোনো হঠাৎ পরিবর্তন আসবে কি না। রাজনৈতিক সহিংসতা কিংবা সরকার পরিবর্তনের শঙ্কা একটি দেশের ব্যবসাবান্ধব পরিবেশকে হুমকিতে ফেলে।
বিনিয়োগকারীরা সাধারণত স্থিতিশীলতা ও নীতির ধারাবাহিকতা চায়, যাতে তারা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারে। তাই যেকোনো সরকারের দায়িত্ব হলো একটি বিশ্বাসযোগ্য, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ প্রশাসনিক এবং আইনি কাঠামো গড়ে তোলা, যাতে ব্যবসায়ীরা নিরাপদ পরিবেশে কাজ করতে পারেন।
চব্বিশের অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে দেশের রাজনীতিতে এখনো একধরনের অস্থিরতা ও আস্থার অভাব বিরাজ করছে। দাবি আদায়ে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ মাঠপর্যায়ে আন্দোলন করছেন। পোশাকশিল্পের কারখানায় বেড়েছে শ্রমিকপক্ষের অসন্তোষ। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসেনি। মব সন্ত্রাসে বাড়ছে সামাজিক অস্থিরতা। এ পরিস্থিতিতে আস্থাহীনতায় পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। দেশি বিনিয়োগের অবস্থাও নাজুক। এতে কমেছে শিল্পের উৎপাদন। ব্যবসায় চলছে মন্থরগতি, কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিপরীতে বাড়ছে বেকারত্বের হার।
এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বাড়ানোর বিকল্প নেই। অনেকেই প্রত্যাশা করছেন, দেশে নির্বাচিত ও একটি সংবেদনশীল সরকার ক্ষমতায় এলে দীর্ঘমেয়াদি নীতি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। তখন বিনিয়োগে মনোযোগী হবেন উদ্যোক্তারা।
একটি ভালো দিক হলো বর্তমান বাংলাদেশে শুধু রাজনীতিবিদ নন, সবার কাছেই অগ্রাধিকার পাচ্ছে অর্থনীতি। সংকটের মধ্যেও ঘুরে দাঁড়ানোর অন্তর্নিহিত শক্তি আছে দেশের অর্থনীতির। বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ফরেন ইনভেস্টরস সামিটে বক্তারাও এসব কথা বলেন।