বিবাহবিচ্ছেদ বাড়ছে কেন?

ঢাকা পোষ্ট জেসান আরা প্রকাশিত: ২৪ আগস্ট ২০২৫, ১২:৩৯

বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানে পারিবারিক বন্ধন, সামাজিক সম্পর্ক এবং সুখী পারিবারিক জীবনকে দীর্ঘদিন ধরে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এই বাস্তবতা এখন পরিবর্তিত হচ্ছে। কয়েক বছরে বিবাহবিচ্ছেদের হার ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন কারণে এই পরিবর্তন ঘটছে, যা আধুনিক সমাজে নতুন সামাজিক সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে।


বাংলাদেশে বিবাহবিচ্ছেদের প্রাদুর্ভাবের পরিসংখ্যান দিন দিন আরও উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। ডিএনসিসি এবং ডিএসসিসি’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ঢাকায় প্রতিদিনই নতুন বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন জমা পড়ছে এবং এর মধ্যে নারীদের উদ্যোগে দাখিলকৃত আবেদনের সংখ্যা পুরুষদের তুলনায় দ্বিগুণ।


গ্রামীণ এলাকায় এই হার তুলনামূলক কম হলেও ধীরে ধীরে তা বাড়ছে। শহরাঞ্চলে নারীদের উদ্যোগে বিবাহবিচ্ছেদ বেশি হচ্ছে, আর গ্রামে পুরুষদের উদ্যোগে কিছুটা বেশি। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ২০২০ সালে শুধুমাত্র একটি সিটি কর্পোরেশনে ৬,৩৪৫টি বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন জমা পড়ে। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ আবেদন করেছেন নারীরা।


২০২১ সালে এই সংখ্যা আরও ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পায়, যেখানে প্রায় ৬৫ শতাংশ আবেদনকারী ছিলেন নারী। ২০২২ সালেই ঢাকা শহরে ১৩,০০০-এর বেশি বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন জমা পড়ে। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালে মোট ৭,৯১৩টি বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ৫,৭৬৪টি স্ত্রীর আবেদনে এবং ২,১৪৯টি স্বামীর আবেদনে হয়েছে। শিক্ষিত ও কর্মজীবী দম্পতিদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের হার তুলনামূলকভাবে বেশি।


বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (BBS) জানিয়েছে, সাত বছরে দেশে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন প্রায় ৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজশাহী বিভাগে সর্বাধিক সংখ্যক বিবাহবিচ্ছেদ লক্ষ্য করা গেছে, যা একটি জাতীয় সংকটের ইঙ্গিত দেয়। ছয় বছরে শুধুমাত্র ঢাকা শহরেই প্রায় ৫০,০০০ আবেদন জমা হয়েছে, অর্থাৎ প্রায় প্রতি ঘণ্টায় একটি করে মামলা দায়ের হয়েছে। এটি স্পষ্ট যে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী সমাজে বিবাহ ভাঙনের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। এই প্রবণতা প্রমাণ করে যে বিবাহবিচ্ছেদ এখন আর কেবল শহরকেন্দ্রিক সমস্যা নয় বরং এটি সমগ্র দেশের সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে উঠছে। অতএব, দ্রুততম সময়ে সমাজকে এই সংকট মোকাবিলায় উদ্যোগ নিতে হবে।


বিবাহবিচ্ছেদের কারণসমূহ—


বিবাহবিচ্ছেদের পেছনে একাধিক মনস্তাত্ত্বিক কারণ কাজ করে, যা অনেক সময় সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবের সঙ্গে মিলে দাম্পত্য জীবনের ভাঙনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হলো—


১. যোগাযোগ ও বোঝাপড়ার অভাব: স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আবেগ প্রকাশ, সমস্যার সমাধান ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে খোলামেলা যোগাযোগ না থাকলে দাম্পত্য সম্পর্ক দুর্বল হয়ে যায়। দীর্ঘমেয়াদে ভুল বোঝাবুঝি ও মানসিক দূরত্ব বাড়তে থাকে, যা বিচ্ছেদের দিকে নিয়ে যায়।


২. বিশ্বাসঘাতকতা ও বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক: দাম্পত্য জীবনে পারস্পরিক আস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বিশ্বাসঘাতকতা করার কারণে অনেকেরই বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক দাম্পত্য জীবন ধ্বংস করে দেয় এবং মুহূর্তেই সাজানো সংসার ভেঙে ফেলে। এতে শুধু স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক নয়, সন্তানের মানসিক স্থিতিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।


৩. নির্যাতন ও আসক্তি (অ্যালকোহল, ড্রাগ, জুয়া ইত্যাদি): শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন অনেক নারীর জন্য বিবাহবিচ্ছেদের প্রধান কারণ। বিশেষ করে যৌতুক, আসক্তি (মাদক/জুয়া) এবং লিঙ্গ বৈষম্য পরিবারে অশান্তি বাড়ায়। আর অ্যালকোহল, ড্রাগ বা অন্য আসক্তিতে ভোগা ব্যক্তিরা প্রায়ই সম্পর্কগুলো ধরে রাখতে ব্যর্থ হন। আসক্তির কারণে মেজাজের অস্থিরতা, হঠাৎ আচরণের পরিবর্তন, ঘুম ও ক্ষুধার ব্যাঘাত, দায়িত্বে অবহেলা, অর্থের অপচয়, সম্পর্ক ও সামাজিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়। সব মিলিয়ে দাম্পত্য জীবনে অসন্তোষ ও অশান্তি তৈরি হয়, যা অনেক সময় বিচ্ছেদে গিয়ে শেষ হয়।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও