ডেঙ্গু বিস্তার রোধে আমরা কি তৎপর?

ঢাকা পোষ্ট কবিরুল বাশার প্রকাশিত: ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২:৫৪

বছরের শুরু থেকেই ডেঙ্গু তার আগ্রাসী রূপ দেখাতে শুরু করেছে। জানুয়ারি মাস থেকেই আক্রান্তের সংখ্যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কয়েক দিন ধরে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৪০০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।


এই হিসাব মূলত ঢাকার ৭৭টি হাসপাতাল এবং অন্যান্য জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে বাস্তব চিত্র আরও বিস্তৃত, কারণ দেশের বহু ছোট-বড় বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক, যারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে তথ্য প্রেরণ করে না, তাদের রোগীরা এই পরিসংখ্যানে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন না।


স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টারের তথ্যমতে, ২০২৫ সালের ১৯ জুলাই পর্যন্ত দেশে মোট ১৬,৭৮৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং দুঃখজনকভাবে ইতোমধ্যে ৬২ জনের মৃত্যু ঘটেছে। এর বাইরে আরও অনেকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন, যাদের সংখ্যা সরকারি হিসাবের বাইরে রয়ে গেছে, ফলে প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা আরও অনেক বেশি।


ডেঙ্গু একটি বহুল পরিচিত ভাইরাসজনিত রোগ, যা দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশসহ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশগুলোর জন্য এক বড় জনস্বাস্থ্য সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে। এটি Flaviviridae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত একটি RNA ভাইরাস, যার চারটি ভিন্ন সেরোটাইপ রয়েছে; DENV-1, DENV-2, DENV-3 এবং DENV-4।


যে ব্যক্তি একবার কোনো একটি সেরোটাইপে আক্রান্ত হয়, তার শরীরে ওই সেরোটাইপের বিরুদ্ধে আজীবন প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। কিন্তু ভিন্ন সেরোটাইপে দ্বিতীয়বার সংক্রমিত হলে তা মারাত্মক আকারে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে রূপ নিতে পারে।


এই ভাইরাস মূলত Aedes aegypti নামক একটি মশার মাধ্যমে ছড়ায়, তবে কিছু ক্ষেত্রে Aedes albopictus প্রজাতিটিও ভূমিকা রাখে। এই মশাগুলো দিনে কামড়ায় এবং মানুষের আশেপাশে, বিশেষ করে ঘরের ভেতর ও আশপাশে পানি জমে থাকা স্থানেই এদের প্রজনন ঘটে। শুধু ডেঙ্গুই নয়, এই মশাগুলো চিকুনগুনিয়া, জিকা এবং ইয়েলো ফিভারের মতো মারাত্মক ভাইরাসও ছড়াতে সক্ষম।



বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২৫ বছরে বিশ্বজুড়ে ডেঙ্গুর সংক্রমণ প্রায় ৩০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বৃদ্ধি কোনো একক কারণের ফল নয়। গ্লোবালাইজেশন, নগরায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং জনসংখ্যা ঘনত্ব এই বিস্তারে প্রভাব ফেলেছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বৃষ্টিপাতের অনিয়মিত ধরণ এবং আর্দ্রতার পরিবর্তন ডেঙ্গুর বাহক মশার প্রজনন, ভাইরাসের ইনকিউবেশন সময় এবং সংক্রমণ ক্ষমতা সরাসরি প্রভাবিত করে।


বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, শুধু বর্ষাকালেই নয়, শীতকালেও ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে। এর প্রধান কারণ হলো, নগরজীবনে পানি সরবরাহের অনিয়মিত ব্যবস্থা এবং নির্মাণাধীন ভবনে পানি জমে থাকা। বৃষ্টি হোক বা না হোক, পানি জমে থাকলেই এডিস মশার বংশবৃদ্ধির অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়।


প্রকৃতপক্ষে, বাংলাদেশে ডেঙ্গুর বিস্তার এখন শুধু প্রাকৃতিক ঋতু পরিবর্তনের ওপর নির্ভর করে না। মশার জীবনচক্র তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার ওপর যেমন নির্ভরশীল, তেমনি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই ভেক্টরগুলোর প্রজনন মৌসুমও প্রসারিত হয়েছে। হালকা বৃষ্টিপাত মশার প্রজননস্থলগুলো পুনরায় সক্রিয় করে এবং প্রাপ্তবয়স্ক মশার আয়ু ও বিস্তার বাড়িয়ে দেয়।


অন্যদিকে, অতি ভারী বৃষ্টি অনেক সময় মশার ডিম বা লার্ভাকে ধ্বংস করে দিতে পারে। এই জটিলতা বোঝার জন্য এবং ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ আবহাওয়া-ভিত্তিক পূর্বাভাস মডেল গড়ে তোলা আবশ্যক।


বাংলাদেশে ডেঙ্গু সংক্রমণের বিস্তার নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনসেক্ট রেয়ারিং এন্ড এক্সপেরিমেন্টাল স্টেশন (Insect Rearing and Experimental Station-IRES) দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে কাজ করছে। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে এডিস মশার ঘনত্ব আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে।


মশার ঘনত্ব পরিমাপের একটি মাপকাঠি হচ্ছে “ব্রুটো ইনডেক্স”। কোনো এলাকায় এই ইনডেক্স যদি ২০ বা তার বেশি হয়, সেটিকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়। বর্তমানে ঢাকার অনেক এলাকাতেই এই ইনডেক্স ২০-এর ওপরে এবং কিছু এলাকায় তা ৫০ ছাড়িয়ে গেছে। শুধু ঢাকা নয়, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বরিশাল, খুলনা, বরগুনা, পিরোজপুর, নরসিংদী, ময়মনসিংহ ও চাঁদপুরে এডিস মশার ঘনত্ব বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও