চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান : ইতিহাসের দায়

যুগান্তর শায়রুল কবির খান প্রকাশিত: ১৭ জুলাই ২০২৫, ১৩:০৮

২০২৪ সালের ১ জুলাই, একটি আপাতদৃষ্টিতে শান্তিপূর্ণ ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়েছিল সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে। কিন্তু কেউ কি জানত, এ সাধারণ দাবিই মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে রূপ নেবে এক রক্তাক্ত গণ-অভ্যুত্থানে? যার পরিণতিতে বদলে যাবে দেশের ক্ষমতার চিত্রপট, আর দীর্ঘ ১৬ বছরের একক শাসককে বাধ্য করবে দেশ ছেড়ে পালাতে? হ্যাঁ, ১৫ জুলাই থেকে সেই আন্দোলনে নামল গুলি, ছিটল রক্ত, আর ঢাকঢোল ভেঙে উঠল জনতার স্বর : ‘গণতন্ত্র চাই!’ শেষ পর্যন্ত, ৫ আগস্টে পতন হলো শেখ হাসিনা সরকারের-এক নজিরবিহীন, অনিবার্য পতন।


রক্তাক্ত রাজপথের স্লোগান ও শহীদের আত্মত্যাগ


সেই ৩৬ দিন রাজপথজুড়ে উচ্চারিত হচ্ছিল এমন সব স্লোগান, যা কেবল রাজনীতি নয়, জাতির আত্মাকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। রাজপথ যে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত ছিল : ‘জাস্টিস জাস্টিস উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’, ‘আমার খায় আমার পরে, আমার বুকে গুলি করে’, ‘তোর কোটা তুই নে, আমার ভাইকে ফিরিয়ে দে’, ‘লাশের ভেতর জীবন দে, নইলে গদি ছেড়ে দে’, ‘চেয়ে দেখ এই চোখের আগুন, এই ফাল্গুনেই হবে দ্বিগুণ’, ‘আমি কে, তুমি কে, রাজাকার, রাজাকার, কে বলেছে, কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার।’


জুলাই ও আগস্টের সেই ৩৬ দিন কোনো সাধারণ রাজনৈতিক মোড় ছিল না, এটি ছিল এক যুগান্তকারী গণ-আন্দোলনের বিস্ফোরণ। শহরের অলিগলি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল, গ্রামীণ হাট থেকে দেশের প্রশাসনিক ভবন পর্যন্ত প্রতিটি জায়গা রূপ নিয়েছিল সংগ্রামের মঞ্চে। নির্মম সত্য হলো-এ বিপ্লব আছে শহীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে।


জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শুরু থেকে প্রতিদিন গণমাধ্যমে শহীদদের তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশের হাসপাতাল থেকে বিএনপির উদ্যোগে একটি তালিকা তৈরি করা হয়। পরবর্তীকালে অন্তর্বর্তী সরকারও শহীদদের তালিকা তৈরির উদ্যোগ নেয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৭ মে পর্যন্ত খসড়া তালিকা অনুযায়ী শহীদের সংখ্যা ৮৩৪। অন্যদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের তথ্যানুসন্ধানী দলের প্রতিবেদনে বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ১৫ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত বিক্ষোভসংশ্লিষ্ট মৃত্যুর সংখ্যা ১ হাজার ৪০০ পর্যন্ত হতে পারে। এর মধ্যে কতশত মা-বাবা তাদের সন্তানের লাশ কোলেপিঠে করে বাড়ি ফিরেছেন, কত পরিবার আজও শোকে কুঁকড়ে আছে-তার কোনো পরিসংখ্যান নেই।



শুধু সংখ্যাই নয়, বরং প্রতিটি নামের পেছনে আছে এক করুণ গল্প। এ গণ-আন্দোলনসংক্রান্ত জাতীয় গণমাধ্যমের অসংখ্য শিরোনাম বিশ্ববাসীকে স্পর্শ করেছে। এর মধ্যে কয়েকটি শিরোনাম ছিল-‘যা বাবা ভালো থাকিস বলে গুলিতে শহীদ সাঈদকে চিরবিদায় মায়ের’, ‘মুগ্ধের আন্দোলন তো এখনো শেষ হয়নি’, ‘অটোরিকশায় বসে কোলে করে ছেলের লাশ বাসায় আনি’, ‘কোটা আন্দোলনে শহীদ ফারহান এমন জীবন গড়ো, যাতে মৃত্যুর পর মানুষ মনে রাখে’, ‘আমার ডাক্তার ছেলেকে তারা গুলি করে মারবে কেন?’, ‘মেয়ের জন্য চিপস কিনে বাসায় ফিরতে পারলেন না মোবারক হোসেন’, ‘যাত্রাবাড়ীতে সংঘর্ষ রোহান আর মাহাদীর স্বপ্ন থেমে গেল গুলিতে’, ‘আমার নিরীহ ছেলেকে গুলি করে মেরে ফেলেছে ওরা’। এসব শিরোনাম শুধু সংবাদ নয়, এগুলো একেকটি ফেটে পড়া হৃদয়ের আর্তনাদ।


গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সুশাসনের আকাঙ্ক্ষা


এ অসংখ্য শহীদ, আহত ও ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত লাশের ওপর দাঁড়িয়েই জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অর্জিত হয়েছে। এ অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা একটাই-‘গণতন্ত্র’, যার সঙ্গে পুরোপুরিভাবে জড়িত ভোটাধিকার, মানবাধিকার ও সুশাসন। এর কোনো বিকল্প নেই, কোনো যুক্তিও নেই।


এ অভ্যুত্থানের কৃতিত্ব নিয়ে অনেকেই নানা দাবি করছেন। তবে প্রকৃত সত্য হলো, ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে বিএনপিসহ সব বিরোধী দলের ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রামই এ গণ-অভ্যুত্থানের পথ তৈরি করেছে। ধাপে ধাপে কোটাবিরোধী আন্দোলন চূড়ান্ত এক দফায় রূপ নেয়, যা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষণা করেছিলেন। ৩ আগস্ট কারাগারে আটক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সহধর্মিণীকে দেখতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ছাত্র-শ্রমিক-জনতার এ আন্দোলন গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সফল হবে, তা কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র। শুধু বিএনপি নয়, অনেক বামপন্থি, মধ্যপন্থি দল, পেশাজীবী, শিক্ষার্থী, এমনকি সাধারণ কৃষক-মেহনতি মানুষ-সবার এক দাবিতে মিলেছিল কণ্ঠস্বর : ‘শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের অবসান চাই।’

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও