যৌতুকের জন্য ‘হালকা জখম’ করলেও তা অপরাধই হবে

জাগো নিউজ ২৪ শাহানা হুদা রঞ্জনা প্রকাশিত: ০৯ জুলাই ২০২৫, ১৩:১৫

দেশের আইন যেখানে বলেছে যৌতুক চাইলেই অপরাধ, সেখানে যৌতুকের জন্য ‘হালকা’ বা ‘ভারী’ জখম দুটোই অপরাধ। অপরাধের জন্য শাস্তিই প্রাপ্য, সালিশ বা আলোচনার মাধ্যমে মধ্যস্থতা নয়। এরপরও বাদী যদি বিবাদীর সাথে আলোচনার মাধ্যম ‘হালকা জখম’র জন্য সমঝোতা করতে চান, করবেন। কিন্তু রাষ্ট্র আইন করে মধ্যস্থতায় বাধ্য করতে পারে না। জখম হালকা হলেও এটা নির্যাতন। এ ধরনের অপরাধে ভুক্তভোগী নারীকে মধ্যস্থতার দিকে ঠেলে দেওয়া হলে, ‘হালকা জখম’ টাইপের নির্যাতন বেড়ে যেতে পারে।


এই দেশে এমন অনেক নারী আছেন যাদের কাছে ‘হালকা জখম’ও বড় জখম হয়ে দাঁড়ায়। তাদের মান-সম্মান বিঘ্নিত হয়, তারা আর কোনোভাবেই স্বামীর সংসারে থাকতে চান না এবং স্বামী বা স্বামীর পরিবারের শাস্তি চান, সেখানে ভুক্তভোগী নারীকে এখন থেকে মামলার আগে মধ্যস্থতায় যেতে হবে কেন?


আইন সংশোধন করে রাষ্ট্র তাকে বাধ্য করছে মামলা না করতে। কিন্তু কেন বাধ্য করছে বা করবে? সায়কা আহমেদ একজন চাকরিজীবী, তাও তাকে প্রায়ই যৌতুকের কারণে আজেবাজে কথা শুনতে হতো। এসব নিয়ে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে স্বামী তাকে চড় মারে। সায়কা পরদিনই স্বামীর নামে মামলা ঠুকে দিয়েছিলেন। মামলায় স্বামীর শাস্তিও হয়েছিল। বিয়েটা আর টেকেনি, তাতে সায়কার দুঃখও হয়নি। কারণ প্রতিদিন এই মানসিক নিপীড়ন তাকে কোণঠাসা করে ফেলছিল। সায়কার মতো অনেক নারীই আছেন, যারা সম্মান নিয়ে বাঁচতে চান।


যৌতুকের কারণে ‘সাধারণ জখম’র শিকার নারীদের এখন থেকে মামলার আগে মধ্যস্থতায় যেতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন’ সংশোধন করে মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া বাধ্যতামূলক করে ১ জুলাই অধ্যাদেশ জারি করেছে। অপরাধের পক্ষে অদ্ভুত সংশোধনী নিয়ে এলো সরকার। প্রশ্নটা হচ্ছে অসংখ্য সমস্যা নিয়ে খাবি খাওয়ার মাঝখানে অন্তর্বর্তী সরকার হঠাৎ কেন এই ইস্যু নিয়ে তড়িঘড়ি এমন একটা সিদ্ধান্ত নিল? নারীর বিচার চাওয়ার অধিকার সীমিত করার এই পরিকল্পনা কেন করা হলো? এর আগে কি সরকার কারও সাথে এ বিষয়ে মতবিনিময় করেছে?



যৌতুকের জন্য জখম করা হলে, সেটা অপরাধ বলেই গণ্য হবে। সেখানে ‘সাধারণ জখম’ বিষয়টা যদি সালিশের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে যৌতুকের আইনি প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হতে বাধ্য। কারণ এই অধ্যাদেশ অনুসারে, প্রথমে ভুক্তভোগী নারীকে লিগ্যাল এইড কার্যালয়ে মধ্যস্থতার মাধ্যমে নিষ্পত্তির জন্য আবেদন করতে হবে। যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮ (ধারা ৩) শুধু যৌতুক দেওয়া-নেওয়া নয়, যৌতুক দাবি করাও একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শাস্তি সর্বনিম্ন এক বছর থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।


নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (ধারা ১১) অনুসারে যৌতুকের দাবি যদি শারীরিক নির্যাতনে গড়ায়, তাহলে তা আরও গুরুতর অপরাধ। এই ধরনের অপরাধের বিচারের জন্য রয়েছে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধনী ২০০৩ ) এ। এই আইনের ১১ নম্বর ধারায় যৌতুকের জন্য নির্যাতনের বিভিন্ন শাস্তির কথা বলা আছে। যৌতুকের জন্য গায়ে হাত তোলা বা যে কোনো ধরনের শারীরিক নির্যাতন মারাত্মক অপরাধ এবং এর জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা আছে। যৌতুকের জন্য মারধর, শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করা সবই অপরাধ এই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (ধারা ১১) অনুযায়ী। কারণ এখানে দাবির পাশাপাশি ‘নির্যাতন’ বা ‘জখম’ ঘটানো হয়েছে। (সাধারণ মারধরের জন্য ধারা ১১(গ), প্রযোজ্য)।


মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া ব্যর্থ হলে কোনো পক্ষ প্রয়োজনে আদালতে মামলা করতে পারবে। কিন্তু আশঙ্কা হচ্ছে এই নিষ্পত্তির জন্য আবেদন, আবেদন আমলে নেওয়া, সালিশ ইত্যাদি করতে গিয়ে সময় ক্ষেপণ হবে। যত বেশি সময় পার হবে, ততই ভিকটিমের ‘সাধারণ জখম’র অভিযোগ দুর্বল হয়ে পড়বে। জখমের চিহ্নও মুছে যেতে পারে। আর ভুক্তভোগীর ‘মানসিক জখম’ এর কী হবে? অনেক পরিবারে যৌতুক দিতে না পারার দায়ে নারীর গায়ে হাত তোলে না ঠিকই, কিন্তু মুখে গালিগালাজ ও খোটা দিতে ছাড়ে না। সবসময় বউকে তোপের মুখে রাখে, খেতে-পরতে দেয় না ঠিকমতো এবং অষ্টপ্রহর মানসিক চাপে রাখে। এসব নির্যাতনের বিচার কী হবে? এক্ষেত্রে মধ্যস্থতার কোনো পথ খোলা থাকে না। ভুক্তভোগী মেনে নিলে, মেনে নেবে, অন্যথায় মামলা করতে পারে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও