আমরা যখন ঈদের ছুটি কাটাচ্ছি তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ও তার বন্ধু ইলন মাস্ক কিছু চমকপ্রদ খবরের জন্ম দিয়েছেন। সেগুলো আমরা যারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে এসে আমেরিকায় থিতু হয়েছি, তাদের অনেকের কাছে উপভোগ্য হয়েছে। হয়েছে বিনোদনের খোরাক।
যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের কথায় বা টুইটের খোঁচায় সংবাদ তৈরি হয়। এই সংবাদ মাঝে মাঝে বাস্তবের সীমারেখা ছাড়িয়ে বৈজ্ঞানিক কল্পকথা বা ছোটদের রূপকথার মতো শুনায় । সেইরকম একটা সংবাদ প্রাণ পেয়েছে ট্রাম্পের আজগুবি এক টুইট থেকে।
বাইডেনের রোবোটিক ক্লোন
ইন্টারনেটে কত যে সংবাদ ভেসে বেড়ায় মানুষের ফেইসবুক, ইউ টিউব বা টুইটে । কয়জনাইবা এইসব পড়ে আর কয়জনেইবা এইসব দেখে ? তেমনি একটা পোস্ট- ট্রুথ সোশ্যালের অন্য একজন ব্যবহারকারীর করা, পোস্টে দাবি করা হয়েছে যে ‘ক্লোন ডাবলস এবং রোবোটিক ইঞ্জিনিয়ারিং করে নিষ্প্রাণ ও নির্জীব' এক নকল বাইডেন আসল বাইডেনের পরিবর্তে এসেছে এবং আসল বাইডেনকে ২০২০ সালেই খুন করা হয়েছে।
এই পোস্টটা ৩১ মে ট্রাম্প তার নিজের ট্রুথ সোশ্যালের একাউন্ট থেকে পুনরায় পোস্ট করেন। ট্রাম্পের এক মিলিয়ন অনুসারীর একাউন্ট থেকে রিপোস্ট করার পর এটা নতুন প্রাণ প্রায় এবং প্রেসিডেন্টের মেগাফোনের মতো এটা সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে যায়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অন্য্ ষড়যন্ত্র তথ্যগুলোর মতো এটাও প্রাণ পেয়ে আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠে, যদিও সবাই জানতো পুরা ব্যাপারটা একটা মিথ্যা।
যুক্তরাষ্ট্রের নেটওয়ার্কগুলোর রাত্রের কমেডিয়ানেরা ট্রাম্পের এই পোস্ট লুফে নিলো । বিখ্যাত কমেডিয়ান জন স্টুয়ার্ট, স্টিভেন কালভার্ট এবং জিমি কিমেল নিজের মতো করে ট্রাম্পের পোস্ট নিয়ে মজা করলেন । বললেন, 'আর যাই হোক, যে নকল জো বাইডেন রোবটটি তৈরি করেছে সে রোবট তৈরিতে খুবই খারাপ। আমি বলতে চাইছি, যদি কারো স্থানে সত্যি কোনো রোবোটিক ক্লোন থাকে, তাহলো মেলানিয়া, তাই না?' স্পষ্টতই কিমেল ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়ার কঠিন চাহনি ও শক্ত চলাফেরার দিকে ইঙ্গিত করেছেন ।
নিউ ইয়র্ক টাইমস ৭ জুনের এক প্রতিবেদনে লিখেছে, '২০২৪ সালে ছয় মাস ধরে ট্রাম্পের হাজার হাজার সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট এবং রিপোস্টের বিষয়গুলো নিউ ইয়র্ক টাইমস বিশ্লেষণের দেখা গেছে যে তাদের মধ্যে কমপক্ষে ৩৩০টিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, তার নিজের বা আমেরিকান জনগণের বিরুদ্ধে মিথ্যা, গোপন ষড়যন্ত্র এবং এর জন্য দায়ী একটি অজানা শক্তিকে দায়ী করে বর্ণনা দিয়েছেন।’ সুতরাং ডনাল্ড ট্রাম্পের জন্য এটা নতুন কিছু নয়। কয়দিন পরেই জনগণ এটা ভুলে যাবে এবং ট্রাম্পের টুইটের পরবর্তী মিথ্যা ষড়যন্ত্রের জন্য অপেক্ষা করবে।
মাথা নত করেনি হার্ভার্ড
গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধের বিরুদ্ধে আমেরিকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্যালেস্টাইনের সমর্থনে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে। ডনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর অভিযোগ করেন আমেরিকার অভিজাত ও আইভি লীগ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইহুদি-বিদ্বেষের ফলে এই বিক্ষোভ হয়েছে। একই সঙ্গে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষগুলোকে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলেছেন। ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসে ইহুদি-বিদ্বেষ বন্ধ করার জন্য কি কি করণীয় তা-ও জানিয়ে দিল । বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাম্পের দাবি মেনে ক্যাম্পাসে যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন এবং সবরকম ইহুদি সমালোচনা ইত্যাদি বন্ধ করে দিল। কারণ ট্রাম্পের কথা না মানলে, ট্রাম্প তাদের ফেডারেল অনুদান, রিসার্চ গ্রান্ট, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি ভর্তির জন্য ভিসা দেওয়া ইত্যাদি বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ট্রাম্পের বিরুদ্ধাচারণ করে প্রতিষ্ঠানগুলো সুস্থভাবে চালানো সম্ভব ছিল না।
ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি) সম্প্রতি ট্রাম্পের নীতিমালার প্রতি অতিরিক্ত বাধ্যতা দেখিয়ে, মেগা ভেমুড়ি নামে একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত শিক্ষার্থীকে তার স্নাতক সার্টিফিকেট প্রদান অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাধা দিয়েছে। গাজা যুদ্ধ নিয়ে প্রতিবাদ, ফিলিস্তিনের প্রতি তার সমর্থন এবং ইসরায়েলের সঙ্গে এমআইটির সম্পর্ক নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি এমআইটি প্রশাসনের রোষানলে পড়েন । শিক্ষার্থীরা অবশ্য প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে, এমআইটির চ্যান্সেলর মেলিসা নোবেলস যখন তার বক্তৃতা শুরু করেন, তখন তাকে বাধা দিয়ে স্লোগান দেযন।