সবাই জনগণ, নাগরিক কই?

যুগান্তর সাঈদ খান প্রকাশিত: ২০ মে ২০২৫, ০৯:১৫

জনগণ একটি বিস্তৃত ধারণা, যার ভেতর সব শ্রেণির মানুষ অন্তর্ভুক্ত, কিন্তু নাগরিকতা একটি আইনি অবস্থান, যা রাষ্ট্রের অধিকার ও দায়িত্বের বিনিময় নিশ্চিত করে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রায় ১৮ কোটি মানুষের বাস হলেও জনগণকে একই আইনি পরিচয়ে ফেলা যায় না। সবাই জনগণ হলেও সবাই নাগরিক নন। ‘জনগণ’ শব্দটি একটি সামষ্টিক ধারণা, যেখানে একটি ভূখণ্ডে অবস্থানরত সব মানুষকে বোঝানো হয়-জন্মসূত্রে বাংলাদেশি হোক, বিদেশি হোক, শরণার্থী হোক কিংবা নাগরিকত্বহীন কেউ হোক। অন্যদিকে, ‘নাগরিক’ হলো একটি আইনি ও সাংবিধানিক পরিচয়, যা রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত। বাংলাদেশের সংবিধানের ৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, The citizenship of Bangladesh shall be determined and regulated by law. অর্থাৎ, নাগরিকত্ব কোনো আবেগ বা অবস্থানের বিষয় নয়; এটি একটি আইনগত স্বীকৃত পরিচয়।


প্রায় ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে বাংলাদেশি নাগরিক হিসাবে স্বীকৃত ব্যক্তির সংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। এ সংখ্যাটি জাতীয় ভোটার তালিকা, জন্মনিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র ও নাগরিক নিবন্ধন রেকর্ডের ভিত্তিতে অনুমান করা যায়। বাকি প্রায় ১ কোটির মতো মানুষ নাগরিক নন, যদিও তারা দেশের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে অবস্থান করছেন। এ শ্রেণিতে রয়েছে শরণার্থী (প্রধানত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী), বৈধ ও অবৈধ বিদেশি অভিবাসী (ভারত, পাকিস্তান, নেপাল বা আফগানিস্তান থেকে আগত) এবং কিছু নাগরিকত্বহীন জনগোষ্ঠী (যেমন, বেদে বা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর কেউ কেউ যাদের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত নয়)। সব নাগরিক জনগণের অন্তর্ভুক্ত, কিন্তু সব জনগণ কি নাগরিক? জন লকের মতে, নাগরিকত্ব হলো রাষ্ট্রের মাধ্যমে প্রাকৃতিক অধিকার অর্জন ও সুরক্ষার ব্যবস্থা। সুতরাং, নাগরিকের অস্তিত্ব রাষ্ট্রের অধিকার রক্ষার সমার্থক হওয়া উচিত। কিন্তু সেটি কি আমরা দেখছি?


নাগরিক বলতে আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় সেই ব্যক্তিকে বোঝানো হয়, যিনি একটি রাষ্ট্রের অধীনে আইনত স্বীকৃত, সাংবিধানিক অধিকারপ্রাপ্ত এবং দায়িত্বসম্পন্ন সদস্য। নাগরিক রাষ্ট্রকে আনুগত্য প্রদানে প্রস্তুত থাকে এবং রাষ্ট্র নাগরিককে আইনি, রাজনৈতিক ও সামাজিক সুরক্ষা দেয়। এ সম্পর্কের ভিত্তি নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্যের বিনিময়। নাগরিকত্ব সাধারণত চারটি উপায়ে অর্জিত হয় : জন্মসূত্রে, আইনি প্রক্রিয়ায়, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির মাধ্যমে এবং সংবিধান বা আইনের মাধ্যমে। বাংলাদেশের সংবিধানের ৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশি’ হিসাবে পরিচিত ব্যক্তি নাগরিক।


নাগরিক সে ব্যক্তি, যিনি রাষ্ট্রের আইনি সুবিধা ভোগ করেন, যেমন ভোটাধিকার, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, আইনের সুরক্ষা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। তবে নাগরিকের দায়িত্বও রয়েছে, যেমন আইন মানা, কর প্রদান এবং জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি দায়বদ্ধতা। নাগরিকত্ব এক ধরনের রাজনৈতিক পরিচয়, যা নাগরিককে রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণে অংশগ্রহণ ও মতপ্রকাশের অধিকার দেয়।


রাষ্ট্র দার্শনিকরা নাগরিক বলতে বুঝিয়েছেন-একটি রাজনৈতিক, সামাজিক এবং আইনগত সম্পর্ক, যা রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা তাদের স্বাধীনতা এবং তাদের পারস্পরিক দায়িত্বের ওপর নির্ভর করে। রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য নাগরিকের কল্যাণ নিশ্চিত করা এবং নাগরিকদের উদ্দেশ্য রাষ্ট্রের শাসনে অংশগ্রহণ ও তার কল্যাণে অবদান রাখা। গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল নাগরিককে সমাজের সক্রিয় সদস্য হিসাবে দেখেছেন। তার মতে, নাগরিক হলেন সেই ব্যক্তি, যিনি রাষ্ট্রের আইন ও শাসনব্যবস্থায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং রাষ্ট্রের শাসক ও শাসিত উভয় ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হন। তার মতে, রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য হলো ‘সবার ভালো থাকা’ এবং নাগরিকদের উদ্দেশ্য হলো সেই লক্ষ্য অর্জনে সহযোগিতা করা।


নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য মূলত তাদের আচরণ, রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য এবং আইনি, সামাজিক ও রাজনৈতিক দায়িত্ব পালনের ওপর নির্ভর করে। যদি আমরা এসব দায়িত্ব পালন না করি, তাহলে নাগরিক হিসাবে আমাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য। নাগরিকত্বের পূর্ণ অধিকার ভোগের জন্য এ দায়িত্বগুলো পালন অত্যন্ত অপরিহার্য। রাষ্ট্র নাগরিকের মাধ্যমে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন নিশ্চিত করে এবং নাগরিকের মাধ্যমে রাষ্ট্র তার শৃঙ্খলা, উন্নয়ন ও কল্যাণ বজায় রাখে। তাই, নাগরিক হিসাবে নিজের দায়িত্ব না পালন করলে সমাজে ও রাষ্ট্রে সঠিকভাবে অংশগ্রহণ করা সম্ভব হয় না।


রুশো তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘দ্য সোশ্যাল কনট্র্যাক্ট’-এ নাগরিকত্বকে সামাজিক চুক্তির ধারণার সঙ্গে যুক্ত করেছিলেন। তার মতে, একজন নাগরিক নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থকে সমাজের সাধারণ স্বার্থে সমর্পণ করে এবং সেখানেই তার প্রকৃত স্বাধীনতা নিহিত। তার মতে, ‘সামাজিক চুক্তি’ দ্বারা নাগরিকরা সমাজের সাধারণ ইচ্ছার (General Will) অধীনে জীবনযাপন করে। নাগরিক হিসাবে, তারা রাষ্ট্রের সামগ্রিক কল্যাণে অংশগ্রহণ করতে এবং সেই পথ অনুসরণ করতে বাধ্য।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও