
ঢাকার সৈয়দা ফাহমিদা তাহসিন কেয়া ও গাজীপুরের জেমি আক্তারের মতো নারীদের মর্মান্তিক মৃত্যু আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, আমাদের সমাজে পারিবারিক সহিংসতা কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দুঃখজনক হচ্ছে, পারিবারিক সহিংসতায় সব সময় নারীরাই ভুক্তভোগী হয়ে আসছেন। এটি শুধু আমাদের পারিবারিক মূল্যবোধ ও সামাজিক অবক্ষয়ের বিষয়েই নয়, বিচারব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন তোলে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে ৩৬৩টি পারিবারিক সহিংসতার ঘটনায় ৩২২ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ১৩৩ জন নারীই খুন হয়েছেন তাঁদের স্বামীর হাতে। এই পরিসংখ্যান বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখলেও এটি আমাদের সমাজের গভীর ক্ষতকে তুলে ধরে। নারী সুরক্ষা হেল্পলাইন ‘১০৯’ এবং জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’-এর তথ্য থেকেও পারিবারিক নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র স্পষ্ট। হাজার হাজার নারী সহায়তা চেয়ে কল করছেন, যার বেশির ভাগই স্বামীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ।
এ সহিংসতার মূল কারণ হিসেবে কাজ করছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি। এমজেএফের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনামের মতে, অপরাধীরা জানে যে তারা পার পেয়ে যাবে। আমরাও মনে করি, আমাদের সমাজে বিচারহীনতার সংস্কৃতি যেভাবে গেড়ে বসেছে, তার ফলে অপরাধীরা বারবার নৃশংস অপরাধ করার সাহস পাচ্ছে। অনেক ঘটনা তো লোকলজ্জা বা আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে প্রকাশই পায় না। নিম্ন আয়ের নারীরা আর্থিক নিরাপত্তার অভাবে নির্যাতন সহ্য করতে বাধ্য হন। কারণ, তাঁদের পক্ষে স্বামীর ঘর ছেড়ে বের হয়ে আসা সম্ভব হয় না। এমনকি মা-বাবাও সামাজিক মর্যাদার ভয়ে তাঁদের নির্যাতিত মেয়েকে ঘরে ফিরিয়ে আনতে পারেন না। এই সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা পারিবারিক সহিংসতাকে একটি চক্রাকারে চলতে সাহায্য করে।
আমরা মনে করি, পারিবারিক সহিংসতার এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে শুধু উদ্বেগ প্রকাশ যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ। পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০-কে কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। পুলিশ ও বিচারব্যবস্থাকে দ্রুত ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে, যাতে অপরাধীরা কোনোভাবেই আইনের ফাঁক গলে বের হতে না পারে। নির্যাতিত নারীদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র, আইনি সহায়তা, কাউন্সেলিং ও জীবিকা নির্বাহের জন্য আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- বিচারহীনতা
- পারিবারিক সহিংসতা