অর্থনীতিতে গতি আনতে প্রকৃত পরিসংখ্যান খুবই গুরুত্বপূর্ণ

জাগো নিউজ ২৪ ইয়াহিয়া নয়ন প্রকাশিত: ১৫ মে ২০২৫, ১০:৩৫

নীতিনির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রকৃত পরিসংখ্যান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। করোনার কারণে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি আড়াই শতাংশের নিচে নেমে আসতে পারে। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ তাদের প্রতিবেদনে বলেছিল, ২ শতাংশের নিচে নেমে আসতে পারে প্রবৃদ্ধির হার। কিন্তু বিবিএসের হিসাবে এই হার ৫ শতাংশের ওপরে প্রাক্কলন করা হয়েছিল। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে রাজনৈতিক সংখ্যায় পরিণত করা হয়েছিল। প্রবৃদ্ধি নিয়ে নীতিনির্ধারকদের মধ্যে এক ধরনের মোহ সৃষ্টি হয়েছে। প্রবৃদ্ধির তথ্যকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। এটাকে সরকারের সাফল্য আকারে দেখানো হতো। কিন্তু প্রবৃদ্ধির ফলে যদি দারিদ্র্য না কমে, কর্মসংস্থান না হয়, সেই প্রবৃদ্ধি অর্থবহ হয় না। এ ধরনের প্রবৃদ্ধির হিসাব সরকারের নীতি প্রণয়নে বিভ্রান্তি তৈরি করবে, সচেতন নাগরিক মাত্রই এটা বোঝে।


দীর্ঘদিন ধরেই দেশের সরকারি পরিসংখ্যান প্রশ্নবিদ্ধ। পরিসংখ্যানগুলোয় নেই বাস্তবচিত্রের প্রতিফলন। বিগত সরকারের সময়ে বিদেশ থেকে বেশি ঋণ নিতে জিডিপির আকার ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো হয়েছে। এর প্রধান কারণ জিডিপির আকারের তুলনায় ঋণের আকার কম থাকবে। তাতে বিদেশ থেকে বেশি পরিমাণে ঋণ পাওয়া যাবে। এ কারণেই জিডিপির প্রবৃদ্ধিকে কারসাজি করে অতিরঞ্জিত করে দেখানো হয়েছে। এছাড়া এলডিসি থেকে উত্তরণ ও উন্নয়নকে অতিরঞ্জিত করে দেখাতে জিডিপিকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো হয়েছে।


অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচক জিডিপির প্রবৃদ্ধি থেকে শুরু করে রফতানি বাণিজ্য, রিজার্ভ, রাজস্ব আহরণ ইত্যাদি সব বিষয়ের তথ্যে রয়েছে বড় ধরনের গরমিল। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে দেশের জিডিপির আকার ৪৫৯ বিলিয়ন ডলার। যদিও রফতানির সংশোধিত পরিসংখ্যান বিবেচনায় নিয়ে চূড়ান্ত হিসাবে জিডিপির আকার কিছুটা কমে ৪৫০ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। তবে অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের জিডিপির প্রকৃত আকার ৩০০-৩৫০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে হতে পারে। সরকারিভাবে এ তথ্যকে প্রকৃত পরিমাণের চেয়ে অন্তত ১০০ বিলিয়ন ডলার অতিরঞ্জিত করে দেখানো হয়েছে।



বিদ্যুতের ভোগ ও মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির মধ্যে বেশ দৃঢ় সম্পর্ক বিদ্যমান। একটি দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে বিদ্যুতের ব্যবহারও বাড়ে সমান তালে। উচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হলে বিদ্যুতের ভোগও বাড়ে, বিশেষ করে শিল্প ও কৃষি খাতে। এর কারণ হচ্ছে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়লে তা শিল্পকারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অন্য প্রয়োজনীয় সেবার ক্ষেত্রে বিদ্যুতের চাহিদাকেও বাড়িয়ে দেয়। যদিও স্বতঃসিদ্ধ এ নিয়ম বাংলাদেশের অনেক ক্ষেত্রেই উল্টো হয়। এখানে বিদ্যুতের ভোগ কমে গেলেও উচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে দেখা গেছে।


২০১৮ সালে দেশে বিদ্যুতের ভোগ ছিল দশমিক ৪৪ শতাংশ ঋণাত্মক, যদিও এ সময়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। অন্যদিকে বিদ্যুতের ভোগ বাড়া সত্ত্বেও জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার নজির রয়েছে। ২০২৪ সালে দেশে বিদ্যুতের ভোগ বেড়েছে ৮ দশমিক ৮১ শতাংশ। বিপরীতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ২ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রে এ উদ্ভট চিত্র দেশের তথ্য-উপাত্তের বিশ্বাসযোগ্যতা আরো প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে।


জিডিপিসহ অর্থনীতির বিভিন্ন সূচককে এভাবে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানোয় সংকটে থাকা অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকারের গৃহীত কোনো নীতিই বিগত বছরগুলোয় সেভাবে কাজ করেনি। তথ্যের অসংগতি বড় ধরনের উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে সামষ্টিক অর্থনীতিতে। সঠিক পরিসংখ্যান ছাড়া কার্যকর নীতি প্রণয়ন সর্বদাই ব্যাহত হবে। সঠিক পরিসংখ্যান ব্যতীত অর্থনীতির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। আর্থিক নীতি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সঠিক পরিসংখ্যান প্রকাশে সরকারের পদক্ষেপ কাম্য।


বিগত সরকারের দেড় দশকে জিডিপিকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো হয়েছে। কারণ বিগত বছরগুলোয় জিডিপির প্রবৃদ্ধি যেভাবে হয়েছে সেভাবে অর্থনীতিতে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান বাড়েনি এবং কৃষি ও শিল্পের কর্মকাণ্ডও বাড়েনি। সমসাময়িক প্রতিযোগী অর্থনীতিগুলোর তুলনায় বিনিয়োগ, রফতানি, মানবসম্পদ উন্নয়ন, বিদেশি বিনিয়োগ ও ব্যবসার পরিবেশসহ বিভিন্ন সূচকেই পিছিয়ে বাংলাদেশ।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও