পরিবেশ বাঁচিয়ে সেন্ট মার্টিনে পর্যটন কি অসম্ভব?

বিডি নিউজ ২৪ সেন্টমার্টিন, কক্সবাজার আমীন আল রশীদ প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৩:১৬

‘সেন্ট মার্টিন যেতে ঘাটে এসেছিলেন মাত্র ৪ জন পর্যটক!’ গত পয়লা নভেম্বর, অর্থাৎ সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী যেদিন সেন্টমার্টিন ভ্রমণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হলো, সেদিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সংবাদ শিরোনাম ছিল এটি। পরে ৮ নভেম্বর একাধিক সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য পয়লা নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিন খুলে দেওয়া হলেও আট দিনে একজন পর্যটকেরও পা পড়েনি দ্বীপটিতে।


যে সেন্ট মার্টিন যেতে মানুষের অধীর আগ্রহ; জাহাজের টিকিট আর হোটেল রুম পাওয়া কঠিন—সেখানে যেতে প্রথম দিনে ঘাটে এসেছিলেন মাত্র চারজন পর্যটক এবং তারা যেতে পারেননি। পরের এক সপ্তাহও কারোর পা পড়েনি দ্বীপে। কারণ জাহাজ চলেনি এই কয়দিনের একদিনও।


দীর্ঘ ৯ মাস বন্ধ থাকার পর পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়ার পর দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র সেন্ট মার্টিন পর্যটকশূন্য কেন? ব্যাখ্যা খুব সহজ। সরকার যে প্রক্রিয়ায় সেন্ট মার্টিন উন্মুক্ত করেছে, সেই নিয়ম মেনে কেউ ওখানে যাবে না। সরকারি নির্দেশনা হচ্ছে, নভেম্বরে পর্যটকরা সেন্টমার্টিনে যেতে পারবেন, তবে রাত্রিযাপন করতে পারবেন না। অর্থাৎ সকালে কক্সাবাজার বা টেকনাফ থেকে যে জাহাজ ছাড়বে, সেই জাহাজে দিনের বেলায় সেন্ট মার্টিন গিয়ে বিকেলে আবার ফিরতে হবে।


ধরা যাক, ঢাকা থেকে কেউ বাস ও জাহাজ মিলিয়ে প্রায় ১৫ ঘণ্টা সময় ব্যয় করে সেন্ট মার্টিন গেলেন। ওখানে দুই তিন ঘণ্টা থেকেই যদি তাকে ফিরে আসতে হয়, তাহলে এই সংক্ষিপ্ত সফরের জন্য কে সেন্ট মার্টিন যাবেন? তার মানে নভেম্বর মাসে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার জন্য উন্মুক্ত করা হলেও কার্যত এই মাসে কেউ যাবে না। যেতে চাইবে না। ফলে মৌসুম শুরুর প্রথম ৮ দিনে সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশে কক্সবাজার থেকে একটি জাহাজও ছেড়ে যায়নি। পুরো নভেম্বরে একটি জাহাজও ছেড়ে যাবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।


সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ নিয়ে সরকারের ১২ দফা নির্দেশনা অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে পর্যটকরা শুধু দিনের বেলায় ভ্রমণ করতে পারবেন, রাত্রিযাপন করা যাবে না। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাত্রিযাপনের অনুমতি থাকবে। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে অক্টোবর দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে। উপরন্তু, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী দিনে সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক যাতায়াত করতে পারবেন। এতেও ক্ষুব্ধ জাহাজ মালিকরা। তারা বলছেন, এই নির্দেশনা মেনে জাহাজ চালাতে গেলে সেন্টমার্টিনের পর্যটন লাটে উঠবে।


সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন ওঠে সরকার কি তাহলে সেন্ট মার্টিনের পর্যটন লাটে উঠাতেই চায় বা সরকার কি চায় যে সেখানে পর্যটকরা না যাক? এই চাওয়াটা কি শুধুই সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ সুরক্ষার স্বার্থে নাকি অন্য কিছু? নাকি সরকার ভাবছে, দেশে বেড়ানোর জন্য আরও অনেক স্পট আছে। সুতরাং সেন্ট মার্টিনে না গেলে কী হবে? এটা হয়তো একধরনের যুক্তি হতে পারে। কিন্তু সেন্ট মার্টিনের অধিকাংশ মানুষই যেখানে পর্যটননির্ভর, সেখানে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করে পর্যটকদের যাওয়া নিরুৎসাহিত ও বন্ধ করে দিলে পর্যটননির্ভর মানুষেরা কী করে বাঁচবেন—এটি কি নীতি-নির্ধারকদের বিবেচনায় আছে? সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সেন্ট মার্টিনে পর্যটন হবে মূলত ডিসেম্বর ও জানুয়ারি দুই মাস। দুই মাসের আয় দিয়ে সারা বছর চলা কতটা বাস্তবসম্মত সেই প্রশ্নও আছে।


সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ছৈয়দ আলম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এখানে ভ্রমণে সরকারি নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর কমপক্ষে ২০০ পরিবার কর্মসংস্থানের জন্য দ্বীপ ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। অভাবের তাড়নায় কেউ কেউ স্ত্রীর গয়না বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন।


সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম বলছেন, পর্যটন মৌসুম নিয়ে যে নিয়ম-নীতি ঘোষণা করা হয়েছে তাতে সেন্ট মার্টিনে দুর্ভিক্ষ শুরু হবে। সেন্ট মার্টিনকে নিয়ে যে গল্প শোনানো হয়, কাজের বেলায় কিছু হয় না। সরকার সেন্ট মার্টিনের মানুষদের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প ও বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার ঘোষণা করল, এই পর্যন্ত কোনো কিছু বাস্তবায়ন হয়নি।


সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমের একটি খবরের শিরোনাম: ‘সেন্ট মার্টিনে রিসোর্ট বিক্রির হিড়িক পড়েছে।’ খবরে বলা হয়, একসময় যেখানে একটি রিসোর্ট বা জমি কেনার জন্য সারা দেশের পর্যটন ব্যবসায়ীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ত, সেই সেন্টমার্টিনের বাসিন্দারাই হোটেল, রিসোর্ট ও ভিটেমাটি বিক্রি করে দ্বীপ ছাড়ছেন।


স্থানীয়দের মতে, মাছ ধরা ছাড়া দ্বীপের মানুষের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র মাধ্যম ছিল ট্যুরিজম ব্যবসা। ট্যুরিজমে ভালো আয় হওয়ায় অনেকেই মাছ ধরা ছেড়ে জড়িয়ে পড়েন এই ব্যবসায়। অধিকাংশ মানুষের বসতভিটায় রয়েছে একটি করে রিসোর্ট ও সঙ্গে তাদের থাকার ঘর। মৌসুমে পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকার ঘরও ভাড়া দিতে হয় অনেক সময়। কিন্তু গত বছর ধরে পরিস্থিতি পুরোপুরি বদলে গেছে। পর্যটক যেতে না পারায় এখন প্রত্যেকের অবস্থা সঙ্গীন। নিজেদের সংসার চালানোই দায়। ফলে হোটেল, রিসোর্ট ও ভিটেমাটি বিক্রি করে দ্বীপ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন অনেকেই।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও