জলবায়ু পরিবর্তনে অণুজীবের ভূমিকা

www.ajkerpatrika.com মৃত্যুঞ্জয় রায় প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৩:১৭

কয়েক কোটি বছর আগে থেকেই পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে প্রভাবিত করে আসছে পৃথিবীতে বসবাসকারী বিভিন্ন জীব। কিন্তু মাত্র ২০০ বছর ধরে মানুষ যেদিন থেকে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো শুরু করল, সেদিন থেকেই ধীরে ধীরে বাড়তে থাকল জলবায়ুর পরিবর্তন। আসলে এই অঘটন ঘটাচ্ছে মানুষই। যত দোষ নন্দ ঘোষেরই। পৃথিবীর জলবায়ু বদলাচ্ছে মানুষই, মানুষের বিভিন্ন পরিবেশবিনাশী কর্মকাণ্ডে ধীরে ধীরে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল—এ রকম কথা শুনতে শুনতে কান ঝালপালা হয়ে যাচ্ছে।


এখন আবার আরও কিছু কথা কানে আসছে। গ্রীষ্মকাল নাকি আরও লম্বা হবে, এ দেশ থেকে শীতকাল হারিয়ে যাবে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ও নরওয়েজিয়ান মেটিওরোলজিক্যাল ইনস্টিটিউট যৌথভাবে ‘বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ জলবায়ুর রিপোর্ট-২০২৫’ প্রকাশ করেছে। সে রিপোর্টে বলা হয়েছে, গ্রীষ্মকালে ঘন ঘন তাপপ্রবাহ দেখা দেবে ও তার সময়কাল বাড়বে। মার্চ থেকে মে পর্যন্ত তাপপ্রবাহ থাকবে সবচেয়ে বেশি। দেশের পশ্চিমাঞ্চলে ২০৭০ সালের মধ্যে বর্ষার আগে ২০ দিন পর্যন্ত তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে, যা আগের চেয়ে ৭৫ শতাংশ বেশি। আগামী বছরগুলোতে দেশে অন্তত দুটি প্রধান সময়ে তাপপ্রবাহ দেখা দেবে—একটি বর্ষাকালের আগে ও অন্যটি বর্ষাকালের পরে। তার মানে আগে ছিল গরমকাল একটি, এখন পাব দুটি। দিনের তাপমাত্রা সাড়ে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়তে পারে, যার প্রভাব পড়বে এ দেশের বৃষ্টিপাত ও শীতের ওপর। এই পরিবর্তনে ফসল উৎপাদন চক্র বদলে যাবে, বিভিন্ন জীবের রোগবালাই বাড়বে, মিঠাপানির মাছের আবাসস্থল কমে যাবে, বিভিন্ন জীববৈচিত্র্যেও পরিবর্তন আসবে। সবই হলো বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফল।


কিন্তু তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য এককভাবে শুধু মানুষকে দায়ী করা হলেও এর পাশাপাশি রয়েছে অন্যান্য জীব ও অণুজীবেরও ভূমিকা। গরুর জাবর কাটা বা প্রাণীর বিষ্ঠা থেকে কী পরিমাণ মিথেন গ্যাস বায়ুমণ্ডলে মিশছে, তার হিসাব কে রাখে? আমাদের চোখের সামনে কলকারখানা বাড়ছে, গাড়ি চলছে, ইটভাটায় ইট পুড়ছে আর এসব থেকে কার্বনমিশ্রিত ধোঁয়া গিয়ে মিশছে বাতাসে। সাদা চোখে শুধু আমরা এটাই দেখছি। কিন্তু চোখে দেখা যায় না—এমন আণুবীক্ষণিক জীবেরাও যে বড় বড় জীব এবং মানুষের মতো বুদ্ধিমান প্রাণীদের চেয়ে কম যাচ্ছে না, সেটিকে হয়তো আমরা অনেকেই কখনো ভেবে দেখিনি। খালি চোখে দেখা যায় না, অথচ ওরাই বরং মানুষের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। দু-চারটা খারাপ অণুজীব বা জীবাণু মানুষ বা হাতির মতো বিশালদেহী প্রাণীকেও নিমেষে ঘায়েল করতে পারে। করোনা বুড়ির কি ভয়টাই না মানুষ পেয়েছিল! এখন বিজ্ঞানীরাও ধীরে ধীরে উন্মোচন করছেন যে এসব অণুজীব শুধু রোগ সৃষ্টি করছে না, জলবায়ু পরিবর্তনেও ভূমিকা রাখছে।


অণুজীবরা ক্ষুদ্র, আণুবীক্ষণিক কিন্তু মহাশক্তিশালী, এরাই প্রকৃতির রসায়নবিদ। এরা প্রকৃতির পুষ্টিচক্রে অসাধারণ ভূমিকা রেখে চলেছে। একবার ভাবুন তো ব্যাপারটা। যদি আবর্জনা পচানোর ব্যাকটেরিয়ারা পৃথিবীতে না থাকত, তাহলে আমরা পৃথিবীতে যত বর্জ্য উৎপাদন করছি, সেগুলোর কী হতো? নিশ্চয়ই সেগুলো না পচলে আমরা আমাদের আবাসস্থলে জমিয়ে রাখতাম না। শেষে হয়তো সাগরে গিয়েই তা ফেলতে হতো। তাতে কয়েক বছরের আবর্জনা দিয়েই হয়তো ভরে যেত প্রশান্ত মহাসাগরের মতো একটা মহাসাগর। এরা প্রকৃতির ভূজৈবরাসায়নিক জগতের রঙ্গমঞ্চে সত্যিই এক চমৎকার নাট্যশিল্পী। প্রকৃতির তালে তালে তারা বাদ্যযন্ত্র না বাজালে পৃথিবীর তাল ঠিক থাকত না। এই তাল ঠিক রাখার ব্যাপারটা বেশ মজার। একদিকে অণুজীবরা বিভিন্ন জড়বস্তুকে ভেঙে নাইট্রোজেন ও ফসফরাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক উপাদান মুক্ত করে, যা যেকোনো জীবের ডিএনএ অণু গঠনের ভিত্তিবস্তু। অণুজীবরা পৃথিবীর অন্তত ৫০ শতাংশ সালোকসংশ্লেষণ ঘটানোর পেছনে কাজ করে। সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে। আবার সেসব উদ্ভিদ মারা যাওয়ার পর অণুজীবরাই আবার সেগুলো পচিয়ে তার দেহ থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে ফিরিয়ে দেয়। সাগরের স্রোতে ও গভীর পানিতে শেওলার মতো যেসব অণুজীব রয়েছে, সেগুলোও কার্বন গ্রহণ এবং মজুত করে। আবার তারাই মরে মিথেনের মতো গ্রিনহাউস গ্যাস তৈরি করে। বড়ই জটিল ও রহস্যময় সেসব বিষয়।


বহু বছর আগে পৃথিবীতে যখন জীবনের উন্মেষ ঘটে, তখন আদি অণুজীবগুলো জীবন ও বায়ুমণ্ডলের মধ্যে একটি সম্পর্ক তৈরি করেছিল। প্রাচীন অণুজীবের কোষগুলো বাতাসের হাইড্রোজেন গ্যাস ও কার্বনের মধ্যে বিক্রিয়া ব্যবহার করে নিজেদের জন্য শক্তি তৈরি করত ও উপজাত হিসেবে মিথেন ছেড়ে দিত। যেহেতু মিথেন একটি শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাস, তাই অনেক বিজ্ঞানী সন্দেহ করেন যে এসব প্রথম মিথেন নির্মাতারা প্রায় ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন বছর আগেই গ্রহটিকে উষ্ণ করেছিল, যা এ পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তুলেছিল। সে ধারা পৃথিবীতে এখনো অব্যাহত রয়েছে, অণুজীবরা আজও মিথেন উৎপাদন করে চলেছে।


আজ এই মিথেনই পৃথিবীর জীবনের জন্য এক মহা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিন শীতল পৃথিবীকে উষ্ণ করার জন্য আমরা মিথেনকে প্রয়োজনীয় বলে মনে করেছিলাম ও অণুজীবদের ধন্যবাদ দিয়েছিলাম, আজ সেই মিথেন উৎপাদী অণুজীবদেরই আমরা আর সহ্য করতে চাইছি না। আজ বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের জন্য দায়ী মিথেন। ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এ বিষয়ে পর্যবেক্ষণ শুরু হওয়ার পর থেকে দেখা যাচ্ছে যে এটি দ্রুততম হারে বাড়ছে। মজার বিষয় হলো, এর জন্য মানুষের যেসব ক্রিয়াকলাপকে দায়ী করা হচ্ছে, সরাসরি তা আসলে মানুষের নির্গমন নয়, বরং মানুষের দ্বারা সংঘটিত পরিবর্তনের প্রতি সাড়া দিয়ে তা মিথেন উৎপাদী বিভিন্ন অণুজীব দ্বারা চালিত হচ্ছে।


বিপদের কথা হলো, এসব অণুজীব জেগে উঠছে। বায়ুমণ্ডল যত বেশি উষ্ণ হচ্ছে, তত বেশি ওরা বাড়ছে। মানুষ বাড়ায় পৃথিবীতে জৈব বর্জ্য বাড়ছে, যা পচার পর এসব অণুজীবকে খাদ্য জোগাচ্ছে। অণুজীবদের জাগরণ এখন গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলাভূমি এমনকি মেরু অঞ্চলের গলিত পারমাফ্রস্টেও পাওয়া যাচ্ছে। কার্বন চক্রের গতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও বেশি মিথেন নির্গত হচ্ছে। এসব বিষয় এখন গবেষকদের ভাবিয়ে তুলেছে। তবে তাঁরাও উপায় বের করতে উঠেপড়ে লেগে আছেন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও