
সাত কলেজ নিয়ে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় কি সফল হবে
এ বছরের ২৭ জানুয়ারি ঢাকার সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আকস্মিকভাবে এ সিদ্ধান্ত নেয়। পরদিন পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়, এসব কলেজকে একত্র করে একটি আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করছে সরকার। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি কমিটি কাজ করছে বলেও জানানো হয়।
প্রাথমিকভাবে এই কমিটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ‘জুলাই ৩৬ বিশ্ববিদ্যালয়’ করার ব্যাপারে আলোচনা করেছিল। তবে ১৬ মার্চ শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ঘোষণা করা হয়, এর নাম হবে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’। প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজের পদ্ধতি কেমন হতে পারে, তারও একটি ধারণা পাওয়া যায় ওই সময়ে। কিন্তু পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিদ্যমান সমস্যাগুলো বিবেচনায় না নিলে এই উদ্যোগও ব্যর্থ হতে পারে।
২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ার পর ধারণা করা গিয়েছিল, এর ফলে সাত কলেজে অন্তত শিক্ষার মান বাড়বে। এভাবে দেশের অন্য কলেজগুলোকেও একেকটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে আনার পরিকল্পনা ছিল। দেখা যাচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়েও এসব কলেজে শিক্ষার মান বাড়ানো সম্ভব হয়নি। মজার ব্যাপার হলো, ঢাকার বাইরে থেকে এসব কলেজে বদলি হয়ে আসার জন্য শিক্ষকদের মধ্যে রীতিমতো যুদ্ধ চলে।
সাত কলেজের মধ্যে ইডেন কলেজ ও তিতুমীর কলেজ বাদে বাকিগুলোয় স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের পাশাপাশি উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণিতেও শিক্ষার্থী পড়ানো হয়। উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের এবং ক্যাডারভুক্ত শিক্ষকদের রেখেই একটি ভিন্ন মডেলে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালানোর কথা শোনা যাচ্ছে। এই সাত কলেজে বর্তমানে এক হাজারের বেশি শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। বোধ করি, তাঁদের বিরোধিতা ও আন্দোলনের ভয়েই গোলমেলে এই মডেলের কথা ভাবা হচ্ছে।
প্রাথমিক পরিকল্পনায় আছে, ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় অবস্থিত কলেজগুলোকে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিন্ন ভিন্ন অনুষদে রূপান্তর করা হবে। এখনকার মতো একেকটি কলেজে সব বিষয় পড়ানো হবে না। এক বা একাধিক কলেজে অনুষদভিত্তিক ক্লাস হবে। যেমন সরকারি বাঙলা কলেজে হতে পারে মানবিক অনুষদের ক্লাস। এভাবে অন্য কলেজগুলোতে অন্য অনুষদের ক্লাস হবে। এর নাম দেওয়া হচ্ছে ‘হাইব্রিড মডেল’! ৪০ শতাংশ ক্লাস অনলাইনে এবং ৬০ শতাংশ ক্লাস সরাসরি নেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। বর্তমানে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়েও একই সঙ্গে অনলাইনে ও সরাসরি ক্লাস নেওয়া হয়। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিচার করা দরকার, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এই ফর্মুলা কেন ব্যর্থ হলো।
সাত কলেজের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দুই লাখ। প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা যদি অর্ধেকেও নামিয়ে আনা হয়, তারপরও এই বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীকে নিয়ন্ত্রণের কাজটি সহজ হবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত হওয়ার আগে এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করতেন, প্রশাসনিক কাজে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ঠিকমতো তাঁদের সহযোগিতা করে না। অধিভুক্ত হওয়ার পর এসব অভিযোগের তির ঘুরে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে। তা ছাড়া অর্থসংক্রান্ত যে অস্বচ্ছতার অভিযোগ ছিল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে, সেগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধেও উচ্চারিত হয়েছে।