বাংলাদেশের সম্পদ, বাংলাদেশের সম্ভাবনা

প্রথম আলো ড. সেলিম জাহান প্রকাশিত: ২৮ মার্চ ২০২৫, ১৯:৫১

এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে একটি জাতির সবচেয়ে বড় সম্পদ তার ভৌগোলিক আয়তন নয়, তার অর্থসম্পদ বা প্রাকৃতিক সম্পদ নয়; সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে দক্ষ মানবসম্পদ—তাদের সৃষ্টিশীলতা, তাদের সৃজনশীলতা এবং তাদের কর্মকুশলতা।


অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে শ্রম ও উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ সন্দেহ নেই; কিন্তু শুদ্ধ শ্রমশক্তি বা যেনতেন প্রকারের উদ্যোগ কোনো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে গতিময় করতে পারে না। তার জন্য দরকার সৃষ্টিশীল শ্রমশক্তি এবং উদ্ভাবনী শক্তিসম্পন্ন উদ্যোগ। অন্য কথায়, শুদ্ধ শ্রমশক্তিকে মানবসম্পদ হতে হবে এবং উদ্যোগকে হতে হবে সৃজনশীল। এ কথা বাংলাদেশের মতো একটি প্রাকৃতিক সম্পদ-অপ্রতুল ও জনবহুল দেশের ক্ষেত্রে আরও বেশি প্রযোজ্য।


কী কী পন্থায় একটি দেশের মানবসম্পদ সে দেশের উৎপাদনপ্রক্রিয়ায় অবদান রাখতে পারে?


মূলত তিনটি উপায়ে—এক. উৎপাদনপ্রক্রিয়ায় শ্রমশক্তিই একমাত্র উপকরণ নয়। কিন্তু মানবসম্পদের গুরুত্ব হচ্ছে সেখানেই যে উৎপাদনপ্রক্রিয়ায় অন্যান্য উপকরণকে সার্থক ও কার্যকরভাবে কাজে লাগাতে মানবসম্পদ অপরিহার্য। একটি অর্থনীতিতে মানবসম্পদ যদি না থাকে, তাহলে সে দেশের ভূমি, যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল কিছু জড় পদার্থের সমষ্টি ভিন্ন কিছু নয়।


দুই. উৎপাদনপ্রক্রিয়ায় প্রযুক্তির প্রভাব ও অবদান অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। কিন্তু যথার্থ মানবসম্পদ অনুপস্থিত থাকলে দেয় প্রযুক্তিকে সেই প্রক্রিয়ায় যথাযথভাবে ব্যবহার করা যাবে না। বিষয়টি বর্তমান বিশ্বের জন্য বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক। আজকের বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লবের ফলে সক্ষম ও প্রয়োজনীয় মানবসম্পদের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ, যথাযথ মানবসম্পদের ঘাটতি থাকলে তথ্যপ্রযুক্তি-বিপ্লবের পুরো সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাবে না।



তিন. মানবসভ্যতার উত্তরণে মানুষের উদ্ভাবনী শক্তি, সৃষ্টিশীলতা ও সৃজনশীলতার বিরাট ভূমিকা রয়েছে। একটি দেশের শ্রমশক্তি যখন এসব গুণ অর্জন করে, তখন সেটি শক্তিশালী মানবসম্পদে রূপান্তরিত হয়।


একটি দেশের জাতীয় আয়ে শ্রমসম্পৃক্ত আয় ও পুঁজিসম্পৃক্ত আয়ের অংশ থাকে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর উৎপাদনপ্রক্রিয়ায় শ্রমসম্পৃক্ত আয়ের অংশ বেশি থাকে। কারণ, সেসব দেশের শ্রমশক্তির উৎপাদনশীলতা বেশি। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশে মোট জাতীয় আয়ে শ্রমশক্তিসম্পৃক্ত আয় ৬২ শতাংশ।


অন্যদিকে মেক্সিকোর মতো উন্নয়নশীল দেশে জাতীয় আয়ে শ্রম ৩৫ শতাংশ। এর কারণ, মেক্সিকোর মতো দেশে শ্রমের উৎপাদনশীলতা কম। অন্যদিক থেকে দেখলে, উন্নত বিশ্বে শ্রমশক্তি মানবসম্পদে পরিণত হয়েছে, কিন্তু অনুন্নত বিশ্বে শ্রমশক্তি এখনো পরিপূর্ণ মানবসম্পদ হয়ে উঠতে পারেনি। উন্নত বিশ্বে যেহেতু মানবসম্পদের সক্ষমতা বেশি, এ কারণে তাদের মানবসম্পদ দেয় প্রযুক্তিকে ঠিকভাবে ব্যবহার করে দেশের অগ্রগতিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।


তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লব কর্মজগৎকেও পরিবর্তিত করেছে। এর ফলে নতুনতর ও ভিন্নতর মানবসম্পদের প্রয়োজন পড়েছে। আজকের বৈশ্বিক বাণিজ্যে জ্ঞানসম্পৃক্ত পণ্য বাণিজ্যের অংশ ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে।


পুঁজিঘন বা শ্রমঘন পণ্যের বাণিজ্যের তুলনায় জ্ঞানসম্পৃক্ত বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধিহার ১ দশমিক ৩ গুণ বেশি। সাম্প্রতিক সময়ে জ্ঞানসম্পৃক্ত পণ্য বাণিজ্য বিশ্বের মোট পণ্য বাণিজ্যের ৫০ শতাংশ। সুতরাং যাদের আজকের প্রযুক্তিকে ব্যবহার করার মতো সম্পদ ও দক্ষতা আছে, তারাই বর্তমান তথ্য ও সংখ্যাসম্পৃক্ত অর্থনীতিতে দ্রুত উন্নতি করছে।
বিশ্বে ২০২২ সাল নাগাদ স্বয়ংক্রিয়করণ এবং নতুন প্রযুক্তির কারণে সাত কোটি কর্মনিয়োজন হ্রাস পেয়েছে। অনুমিত হয়েছিল যে একই সময়ে উচ্চদক্ষতাসম্পন্ন কাজের ক্ষেত্রে ১৩ কোটি নতুন কর্মনিয়োজন সৃষ্টি হয়েছিল। নতুন যেসব কাজের জন্য বেশি চাহিদা লক্ষ করা গেছে, তার মধ্যে আছে উপাত্তবিজ্ঞানী ও বিশ্লেষক; ই-বাণিজ্য ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিশেষজ্ঞ; প্রশিক্ষণ, উন্নয়ন ও উদ্ভাবনী ব্যবস্থাপক; কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশেষজ্ঞ। সন্দেহ নেই যে আগামী পৃথিবীর কর্মজগতে নতুন এক প্রকৃতির মানবসম্পদ প্রয়োজন হবে।


এ পটভূমি সামনে রেখে শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাচ্ছে বিভিন্ন দেশ। পরিশীলিত করছে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম, পাঠ্যসূচি, শিক্ষণপদ্ধতি। জোর দিচ্ছে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও চিকিৎসাবিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাকে, ইংরেজিতে যাকে বলা হচ্ছে ‘এসটিইএম’ (সায়েন্স, টেকনোলজি, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড মেডিসিন)।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও