ট্রাম্পের যে বিশ্বাসঘাতকতায় পুতিন এখন আরও সাহসী
গ্রাহাম গ্রিনের ১৯৫৫ সালের উপন্যাস দ্য কুইয়েট আমেরিকান-এ একজন সিআইএ এজেন্টের নাম অলডেন পাইল। পাইল মনে করে যে ভিয়েতনাম সংঘাতের সমাধান তার হাতের মুঠোয়। কিন্তু তার অজ্ঞতা, অহংকার ও ষড়যন্ত্র শান্তি আনার বদলে কেবল নিরীহ মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়। সে নিজেও মারা যায়। আজকের পৃথিবীতে ডোনাল্ড ট্রাম্প যেন সেই পাইল। তবে তাঁর শোরগোল অনেক বেশি।
চুক্তি করার ক্ষেত্রে ট্রাম্প নিজেকে অসাধারণ দক্ষ বলে মনে করেন। আর নিজের এই প্রতিভা নিয়ে অহর্নিশ বড়াই করেন। অথচ তাঁর ‘শতাব্দীর সেরা’ উত্তর কোরিয়া চুক্তি ছিল এক তামাশা।
আফগানিস্তান তিনি তালেবানের হাতে তুলে দিয়েছেন। ইসরায়েলের বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাঁকে বারবার বোকা বানিয়েছেন। এখন ট্রাম্প আরও এক ব্যর্থ চুক্তির প্রস্তাব দিচ্ছেন—ইউক্রেনকে বিক্রি করে দেওয়া। আমেরিকার এই প্রেসিডেন্ট যেন এখন পুতিনের হাতের পুতুল।
যুদ্ধবিরতি আলোচনার আগেই ট্রাম্প রাশিয়াকে যে ছাড় দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন, তা ইউক্রেনের জন্য ভয়াবহ। একই সঙ্গে তা ইউরোপের নিরাপত্তা, ট্রান্সআটলান্টিক জোট এবং তাইওয়ানের মতো অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলোর জন্যও বিপজ্জনক। ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ছাড়গুলোর মধ্যে আছে রাশিয়ার আগ্রাসনে দখল করা ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড মেনে নেওয়া, কিয়েভের ন্যাটো সদস্যপদ প্রত্যাখ্যান করা, যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সহায়তা ও সেনা মোতায়েন বন্ধ করা। এগুলোর সবই একধরনের বিশ্বাসঘাতকতা, একরকম আত্মসমর্পণের শামিল।
তিন বছর আগে বিনা উসকানিতে ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী আগ্রাসন চালিয়েছিলেন পুতিন। অথচ ট্রাম্প এখন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ও ইউক্রেনের সাহসী জনগণকেই দোষারোপ করছেন। তিনি ক্রেমলিনের প্রচারিত মিথ্যাকে পুনরাবৃত্তি করে কিয়েভে নতুন নির্বাচন দেওয়ার দাবি তুলছেন, যা এক ভয়ংকর ভণ্ডামি। কারণ, রাশিয়ার শাসকগোষ্ঠী নিজেরাই নিয়মিতভাবে অন্য দেশের নির্বাচনকে প্রভাবিত করে। কিন্তু এই ষড়যন্ত্রে ট্রাম্প সানন্দে পা দিচ্ছেন।
পুতিন হয়তো নিজেই বিশ্বাস করতে পারছেন না এমন ভাগ্য তাঁর কপালে জুটেছে! ট্রাম্প তাঁর সঙ্গে ৯০ মিনিট ধরে ফোনে আলাপ করে, তাঁকে ‘বুদ্ধিমান’ আখ্যা দিয়ে, সৌদি আরবে এক সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানিয়ে কার্যত একঘরে হয়ে পড়া এই স্বৈরাচার শাসকের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করেছেন আর ন্যাটো মিত্রদের আস্থায় আঘাত হেনেছেন। বিনিময়ে পুতিন কিছুই দেননি; বরং তিনি এখন আরও আত্মবিশ্বাসী যুদ্ধক্ষেত্রে, রাজনৈতিকভাবে এবং কূটনৈতিক অঙ্গনেও।
এর চেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হলো, মস্কো যেকোনো দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির শর্ত হিসেবে ‘গঠনমূলক পরিবর্তন’ দাবি করছে। এর মধ্যে রয়েছে ইউক্রেনকে নিরস্ত্রীকরণ, সামরিক জোটের বাইরে রাখা, তাদের নেতৃত্বকে ‘নাৎসিমুক্ত’ করা, এমনকি দেশটির স্বাধীন অস্তিত্ব মুছে ফেলার মতো চরম দাবি। পুতিন আসলে ইউরোপের নিরাপত্তা কাঠামোকে নতুনভাবে সাজাতে চান। এর অর্থ, ন্যাটোকে দুর্বল, বিভক্ত ও পিছু হটতে বাধ্য করা।