সংবিধান সংস্কার: প্রস্তাবনা পরিবর্তনের সুপারিশ নিয়ে কিছু প্রশ্ন

প্রথম আলো ড. গোলাম রসুল প্রকাশিত: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২০:৪০

বাংলাদেশের বিদ্যমান সংবিধান পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন করে সংবিধান সংস্কারের প্রয়োজনীয় সুপারিশ করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করেছিল। এই কমিশন গত ১৫ জানুয়ারি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পুরো প্রতিবেদন ৮ ফেব্রুয়ারি জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়। এই প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে সংস্কার কমিশন বিদ্যমান সংবিধানের প্রস্তাবনা, মৌলিক নীতিমালাসহ বেশ কিছু পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে।


এই সুপারিশগুলো এখন কেবল প্রস্তাবনা হিসেবে রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে এগুলো চূড়ান্ত করা হবে। এরপরও সুপারিশগুলো সংলাপ ও ঐকমত্য গঠনের ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে—এমনটা ধারণা করা যায়। তাই এ সুপারিশগুলোর পর্যালোচনা ও বিচার-বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। তবে আমি আমার আলোচনা শুধু সংবিধানের প্রস্তাবনা পরিবর্তনের সুপারিশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখব।


সংবিধান সংস্কার কমিশন বিদ্যমান সংবিধানের প্রস্তাবনা বাদ দিয়ে নতুন একটি প্রস্তাবনা সুপারিশ করেছে। নতুন প্রস্তাবনায় ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বাদ দেওয়া হয়েছে; রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে এবং সর্বোপরি ১৯৭২ সালের গণপরিষদ কর্তৃক সংবিধান রচনা, সংবিধান গ্রহণ ও গ্রহণের ঘোষণা ও তারিখ বাদ দেওয়া হয়েছে। এই পরিবর্তনের তাৎপর্য কী?


প্রস্তাবনা সংবিধানের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, যেখানে সংবিধানের মূল লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও মূলনীতিমালা লিপিবদ্ধ থাকে এবং মূল সংবিধানের পথনির্দেশনা দেয়। প্রস্তাবনা থেকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বাদ দেওয়ার গভীর রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক তাৎপর্য রয়েছে। কারণ, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক দলিল। এই দলিলের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয় এবং এর মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর অর্থাৎ বাংলাদেশের সংবিধান কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত দেশ পরিচালিত হয়।



স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বাংলাদেশের তৎকালীন প্রায় সাড়ে ৭ কোটি মানুষের অভিপ্রায়ের অভিব্যক্তি এবং জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা গঠিত সরকার এটিকে অনুমোদন দিয়েছে। কাজেই এটি একটি ঐতিহাসিক দলিল। এর সঙ্গে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের ইতিহাস জড়িত। সংবিধান থেকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বাদ দেওয়া মানে হলো পরবর্তী সময়ে তা নিয়ে জটিলতা তৈরি হতে পারে।


প্রস্তাবনায় রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনার বিদ্যমান চারটি মূলনীতি হলো জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। এর মধ্যে গণতন্ত্র ছাড়া বাকি তিনটি মূলনীতি বাদ দিয়ে সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার ও বহুত্ববাদ অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। মূলনীতির এই ব্যাপক পরিবর্তনের তাৎপর্য কী হতে পারে?


প্রথমেই আসা যাক ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়ে। ধর্মনিরপেক্ষতা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাসংগ্রামের চেতনার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে মুসলিম জনগোষ্ঠীর জন্য আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে। পাকিস্তান রাষ্ট্রের সাম্প্রদায়িক চরিত্র এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণকে ক্ষুব্ধ করেছিল।


পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে একটি অসাম্প্রদায়িক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সব ধর্ম, বর্ণ ও গোষ্ঠীর মানুষ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। এর ফলে অনেকেই ধর্মনিরপেক্ষতাকে মুক্তিযুদ্ধের একটি আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করেন। তা ছাড়া রাষ্ট্রের একটি অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষা করা। সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার উপস্থিতি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের একটি আইনি রক্ষাকবচ। পৃথিবীর অনেক দেশের সংবিধানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের এ রকম আইনি সুরক্ষা দেওয়ার উদাহরণ রয়েছে।


ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দেওয়ার যুক্তি হিসেবে কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাক্‌-সাংবিধানিক কোনো নথিতে অর্থাৎ ১৯৭০ সালের ‘লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার’ বা ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহার বা ১৯৭১ সালের আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত পাকিস্তানের খসড়া সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা উল্লেখ ছিল না।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও