
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও বলেছেন যে তিনি উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং–উনের সঙ্গে সংলাপে বসার জন্য নতুন উদ্যোগ নিতে চান। ৭ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটনে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইশিবা শিগেরুর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলন হয়েছিল। সেখানে ট্রাম্প মনে করিয়ে দেন, ২০১৭ সালে কোরীয় উপদ্বীপে তাঁর উদ্যোগে যুদ্ধ ঠেকানো সম্ভব হয়েছিল।
তিনি আরও জানান যে সঠিক পরিস্থিতি তৈরি হলে তিনি কিমের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। ২০১৮ সালে তিনি প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে উত্তর কোরিয়ার নেতার সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করেছিলেন।
এই ধারণা আরও জোরালো হয়েছে, বিশেষ করে যখন প্রতিরক্ষাসচিব পিট হেগসেথ ও ট্রাম্প উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ব্যাপারটি চমকপ্রদ।
দীর্ঘদিন ধরে ওয়াশিংটন আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক ক্ষমতাকে স্বীকার করেনি। এখন জল্পনা হচ্ছে যে যুক্তরাষ্ট্র নতুন কৌশল নিয়ে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে পারমাণবিক বিষয়ে আলোচনা আবার শুরু করতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসন উত্তর কোরিয়া নিয়ে নীতিতে কোনো বড় পরিবর্তন আনেনি।
যদি ট্রাম্প প্রশাসন উত্তর কোরিয়া নিয়ে আগের নীতিই বহাল রাখে, তবে কিম কোনো আলোচনার প্রস্তাব সহজে গ্রহণ করবেন না। তিনি এখনো দক্ষিণ কোরিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ সামরিক মহড়া এবং এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক উপস্থিতিকে তাঁর দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখেন।
এ পরিস্থিতিতে ট্রাম্প আবারও সাময়িকভাবে যুক্তরাষ্ট্র-দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ সামরিক মহড়া স্থগিত করার কথা বিবেচনা করতে পারেন। তবে দক্ষিণ কোরিয়ার রক্ষণশীলেরা এই সামরিক মহড়া নিয়ে কখনোই আপস করার পক্ষে নন। তবে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে এই মহড়া স্থগিত হয়েছিল। তখন কিম একাধিক শীর্ষ বৈঠকে যোগ দিতে রাজি হয়েছিলেন।
বর্তমানে রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে সামরিক সহযোগিতা চালু হয়েছে। ফলে এই অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। কিম রাশিয়াকে গোলাবারুদ সরবরাহ করেছেন। তাঁর সেনাও সেখানে মোতায়েন করেছেন। বিনিময়ে তিনি মস্কোর কাছ থেকে অর্থনৈতিক সহায়তা ও সমর্থন পেয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে তিনি এখন ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য কোনো তাড়না অনুভব করছেন না।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যের একটি হিসেবে রাশিয়া এখন কিমের জন্য রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করছে। রাশিয়া নতুন নিষেধাজ্ঞা জারিতে বাধা দিচ্ছে। আগের নিষেধাজ্ঞাগুলোর বাস্তবায়নও ঠেকাচ্ছে। এই বাস্তবতায় উত্তর কোরিয়ার পরমাণু আলোচনা আবার শুরু করতে হলে প্রথম শর্ত হতে পারে দীর্ঘদিনের রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটানো। তাহলে রাশিয়া-উত্তর কোরিয়ার সামরিক জোট কিছুটা দুর্বল হবে।
এদিকে চীনের ওপর চাপ প্রয়োগ করে উত্তর কোরিয়াকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা আগেও করা হয়েছে। তবে দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসনের প্রয়োজন হবে নতুন কৌশল। এমন কৌশল যেখানে শান্তি ও সংলাপই হবে মূল লক্ষ্য। এর মানে ট্রাম্পকে ‘বড় চুক্তি’ করার আশা ছেড়ে দিতে হবে। কারণ, মার্কিন বিশ্লেষকদের মতে, উত্তর কোরিয়ার নেতা কখনোই তাঁর পারমাণবিক অস্ত্র পুরোপুরি ত্যাগ করবেন না। যদিও কিম তাঁর পারমাণবিক অস্ত্রকে আলোচনার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চান না, তবে তিনি হয়তো আবার ইয়ংবিয়ন পারমাণবিক স্থাপনা নিষ্ক্রিয় করা বা আংশিক ধ্বংস করার বিনিময়ে কিছু বড় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারেন।
- ট্যাগ:
- মতামত
- সাক্ষাৎ
- ডোনাল্ড ট্রাম্প
- কিম জং উন