![](https://media.priyo.com/img/500x/https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2025/02/09/1739037916-8a90e5fc1c9bf59a9ec707f2b108872d.jpg)
গাজা নিয়ে ট্রাম্পের নতুন ষড়যন্ত্র
দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত যুক্তরাষ্ট্রের বেপরোয়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার ফিলিস্তিনের যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার মালিকানা নিয়ে নিতে চান। সম্প্রসারণবাদী ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল ও মুক্তিকামী গাজার যোদ্ধাদের বিগত ১৫ মাসের সংঘর্ষের পর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছেন ট্রাম্প। প্রায় ৫০ হাজার নিরীহ গাজাবাসীকে হত্যা ও লক্ষাধিক মানুষকে আহত করা এবং লাখ লাখ মানুষকে নিজ নিজ বাসস্থান থেকে বিতাড়িত করার পর এবার তাদের চিরতরে উচ্ছেদের জন্য শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল নামক দুই অপশক্তির মারাত্মক ষড়যন্ত্র। ইসরায়েলের নতুন পৃষ্ঠপোষক ট্রাম্প গাজাকে ‘বিধ্বস্ত এলাকা’ বলে আখ্যায়িত করে তাদের প্রতিবেশী জর্দান, মিসরসহ আরব দেশগুলোতে স্থায়ীভাবে পুনর্বাসন করা উচিত বলে উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেছেন, গাজায় ব্যাপক আকারে অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা হবে। কিন্তু সম্প্রতি কায়রোতে অনুষ্ঠিত আরব রাষ্ট্রগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক জরুরি সভায় ট্রাম্পের সেই প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনের গাজার মানুষকে তাদের নিজ ভূখণ্ড থেকে উচ্ছেদ করার আইনি অধিকার বা ক্ষমতা কারো নেই। কারণ তারা আরব ভূখণ্ডে কিংবা ফিলিস্তিনে নতুন ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠারও হাজার হাজার বছর আগে থেকে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে।
এখন সেখানে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের শলাপরামর্শে ট্রাম্প ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী গাজা ভূখণ্ডে বা উপত্যকায় আকর্ষণীয় রিসোর্টসহ একটি স্মার্ট সিটি গড়ে তুলতে চান রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ী ট্রাম্প ও তাঁর ইহুদি জামাতা জ্যারেড কুশনার। এসব ঘোষণা ও কর্মকাণ্ডে হতবাক গাজাসহ সমগ্র ফিলিস্তিনবাসী। এ ঘটনায় সমগ্র বিশ্ব এখন অবাক বিস্ময়ে অপেক্ষা করছে আরেকটি মারাত্মক সংঘর্ষের জন্য। কারণ সশস্ত্র যুদ্ধ কিংবা সংঘাত ছাড়া ইহুদি সম্প্রসারণবাদী কিংবা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের পরাস্ত করা যাবে না।
এরই মধ্যে বিশ্বজুড়ে ট্রাম্পের প্রস্তাব নিন্দিত হয়েছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজার প্রতিবেশী কোনো রাষ্ট্র বা জনপদ নয়। আরব ভূখণ্ড থেকে হাজার হাজার মাইল দূরের কোনো রাষ্ট্র কিভাবে গাজার দখল নিতে চায়? তাহলে কি ইহুদিপ্রেম বা জোটের স্বার্থ ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অন্ধ করে দিয়েছে?
গাজা নিয়ে ট্রাম্পের নতুন ষড়যন্ত্রডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে বারবার বলেছিলেন, তিনি ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সমস্যার একটি স্থায়ী ও শান্তিপূর্ণ সমাধান চান। সুতরাং প্রথমেই তাদের মধ্যে চলমান সশস্ত্র সংঘর্ষ বন্ধ করতে হবে। গাজাসহ বিভিন্ন যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চল পুনর্গঠিত করে মানুষের বাসোপযোগী করতে হবে।
তখন তিনি ঘুণাক্ষরেও কোথাও বলেননি যে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের নিরাপত্তার স্বার্থে গাজাবাসীকে তাদের ভূখণ্ড থেকে উচ্ছেদ করা হবে। প্রতিবেশী অন্যান্য আরব রাষ্ট্রে তাদের পুনর্বাসিত করা হবে। গাজার দখল নেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ইসরায়েলের ইহুদি সম্প্রসারণবাদীরা। ইহুদি রাষ্ট্রের বর্তমান কুখ্যাত প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তাঁর কট্টর দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক জোটের সদস্যরা প্রকাশ্যেই বলেছেন, তাঁরা সে অঞ্চলে কোনো স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র দেখতে চান না। তাঁরা সেখানে একটি বৃহত্তর ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল গড়ে তুলতে আগ্রহী।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন সমস্যার একটি দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান চেয়েছিলেন। বাইডেনসহ যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের বেশির ভাগ শান্তিকামী মানুষ মনে করে, বর্তমান ইসরায়েল রাষ্ট্রের পাশে ফিলিস্তিনিদের জন্য নির্ধারিত ভূখণ্ডে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ নির্বিবাদে বসবাস করতে পারবে। কিন্তু ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক বোঝাপড়া। তাই ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েই ট্রাম্প দ্রুত সরে যাচ্ছেন তাঁর আগের অবস্থান বা বক্তব্য থেকে। প্রয়োজন হলে ট্রাম্প দখল করে নেবেন গাজা উপত্যকা এবং ইসরায়েলের সঙ্গে ভাগাভাগি করবেন তাঁদের ‘লুটের মাল’। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেফ্রি স্যাকস বলেছেন, ট্রাম্প বুঝতে পারছেন না তিনি কী সব আবোলতাবোল বকছেন। সশস্ত্র সংঘর্ষকালে কোনো অঞ্চলের স্থায়ী বাসিন্দাদের বলপূর্বক অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া যায় না, সেটি সম্পূর্ণ বেআইনি। জেনেভা কনভেনশনের ১২৯ বিধি অনুযায়ী সেটি একটি অপরাধ। গাজাসহ ফিলিস্তিনবাসী তাদের পূর্বপুরুষের কিংবা আদি ভিটামাটিতেই বাস করার পূর্ণ অধিকার রাখে। কেউ তার ব্যত্যয় ঘটাতে গেলে সেটি হবে বেআইনি, অপরাধ।