মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ : চার বছর পর
সামরিক অভ্যুত্থান ও গৃহযুদ্ধের চার বছর পর মিয়ানমার বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমের শিরোনাম থেকে ক্রমেই জায়গা হারাচ্ছে। কারণ দেশটি প্রধান শক্তিগুলোর মধ্যে ভূ-কৌশলগত পুনর্বিন্যাসের পর্যায়ে রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রশাসন নাটকীয় ও কঠোর বৈদেশিক নীতির দিকে চলেছে, যখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে একটি অস্তিত্বের হুমকির সম্মুখীন। এভাবে মিয়ানমারের ভাগ্য ও ভবিষ্যৎও সম্ভবত তার গৃহযুদ্ধের গতিপথ ও ফলাফল, দেশে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং কিছুটা হলেও আসিয়ান সদস্য দেশগুলোর কৌশল দ্বারা নির্ধারিত হবে।
মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির দিকনির্দেশনার অগ্রদূত হিসাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মিয়ানমারের স্কলারশিপ প্রোগ্রামের জন্য সামগ্রিক বৈদেশিক সহায়তার একটি ক্ষুদ্র অংশ হলেও আকস্মিকভাবে ৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার স্থগিত করেছেন, যা ইঙ্গিত দেয়, মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ জোট স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিল নামে পরিচিত ওয়াশিংটনের গুরুত্বপূর্ণ সহায়তার ওপর আর নির্ভর করতে পারবে না। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে সামরিক সংঘাতের ইউরোপীয় মঞ্চও নতুন বাস্তবতার দিকে চলেছে।
আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বৈশ্বিক নেতৃত্বের এই অভাব জাপানের জন্য এশিয়ায় নিজেদের অবস্থানকে দৃঢ় করার সুযোগ করে দেয়, তবে দেশটির প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা প্রয়াত শিনজো আবের মতো বিচ্ছিন্ন এবং অন্তর্মুখী মনোভাবের বলে মনে হয়, যিনি ট্রাম্পের প্রথম প্রশাসন এবং জাপানের আন্তর্জাতিক ভূমিকাকে আরও দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করেছিলেন। ফলে মিয়ানমারে কী ঘটবে, তা নির্ভর করছে গৃহযুদ্ধের গতিশীলতার ওপর। চার বছর পর এটা স্পষ্ট যে, জান্তা সরকার বেসামরিক নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য (এনইউজি), পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ) ইউনিট এবং জাতিগত সশস্ত্র সংগঠনগুলোর (ইএও) সমন্বয়ে গঠিত প্রতিরোধ জোটের কাছে হেরে যাচ্ছে। ইএও এখন চিন, কাচিন ও শান থেকে শুরু করে কারেনি, কারেন এবং মন রাজ্য পর্যন্ত মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোতে আধিপত্য বিস্তার করে ফেলেছে। এমনটাও অনুমান করা হয় যে, স্টেট কাউন্সিলের হাতে এখন দেশের অর্ধেকেরও কম অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
তবুও মিয়ানমারের পরিস্থিতি উপর দিয়ে স্বাভাবিক মনে হলেও বাস্তব পরিস্থিতি তা নয়। এর মানে হলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এনইউজে ক্রমেই পেছনে পড়ে গেছে। যেহেতু ইএও, বিশেষ করে ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স যখন স্টেট কাউন্সিলের ঘারে নিঃশ্বাস ফেলছে, তখন চীন স্বাভাবিকভাবেই মিয়ানমারের দক্ষিণে একটি বন্দর এবং ইউনান প্রদেশ পর্যন্ত গ্যাস পাইপলাইন স্থাপনসহ নানা কারণে দেশটির স্বার্থ সুরক্ষিত করাকে প্রয়োজন মনে করছে। কাচিন ও শানের মতো সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোতে চীনের শক্ত আধিপত্য রয়েছে, এমনকি এমএনডিএএ ও কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মির ওপরও। যদিও থাইল্যান্ড ও ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোতে বেইজিংয়ের আধিপত্য কম।
- ট্যাগ:
- মতামত
- সামরিক অভ্যুত্থান
- গৃহযুদ্ধ