ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্র ও আগামীর বিশ্ব

কালের কণ্ঠ এ কে এম আতিকুর রহমান প্রকাশিত: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:০১

২০ জানুয়ারি ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থীকে পরাজিত করে জয়ী হন। এই শপথ গ্রহণের মাধ্যমে তিনি দ্বিতীয়বার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিলেন। এর আগে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে তিনি প্রথমবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন।

শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের নেতারা ছাড়াও বিশ্বের অনেক দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান, মন্ত্রী এবং ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এশিয়ার এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্য থেকে চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট, ভারত ও জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা অংশগ্রহণ করেন।


শপথ গ্রহণ শেষ হলে ট্রাম্প অভিষেক ভাষণ দেন। ওই ভাষণে ‘সুবর্ণ যুগের’ প্রতিশ্রুতির উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজ থেকে যুক্তরাষ্ট্র আরো উন্নতি করবে।

সারা বিশ্বে আবার সম্মান অর্জন করবে। যুক্তরাষ্ট্রকে দেখে সব দেশ ঈর্ষা করবে। মার্কিনদের ব্যবহার করে কাউকে আর সুবিধা নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না।’ তিনি তাঁর ভাষণে অভ্যন্তরীণ, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুর ক্ষেত্রে তাঁর পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেছেন।

সেসব ইস্যুর কোনোটি রাজনৈতিক, কোনোটি অর্থনৈতিক, আবার কোনোটি নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত। তা ছাড়া গত বছর নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর থেকেই তিনি তাঁর বিভিন্ন বক্তব্যে ওই সব বিষয়ে তাঁর চিন্তা-ভাবনার কথা প্রকাশ করে আসছিলেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রথম দিনেই ট্রাম্প বেশ কয়েকটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন, যেগুলোতে তাঁর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরুর আভাস পাওয়া যায়। 


তিনি এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। সব অবৈধ প্রবেশ অবিলম্বে বন্ধ করাসহ অনুপ্রবেশকারীদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করার কথা বলা হয়েছে।

প্রয়োজনে দক্ষিণ সীমান্তে আমেরিকান সেনা পাঠানো হবে। এমনকি ১৭৯৮ সালের বিদেশি শত্রু আইন প্রয়োগের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সব শহরসহ দেশের মাটিতে ধ্বংসাত্মক অপরাধ নিয়ে আসা সমস্ত বিদেশি গ্যাং এবং অপরাধী নেটওয়ার্কের উপস্থিতি নির্মূল করার জন্য ফেডারেল ও রাজ্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পূর্ণ এবং অপরিমেয় ক্ষমতা ব্যবহার করা হবে বলে ট্রাম্প জানান। এ ছাড়া প্রথমবার যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের যে পরিকল্পনা নিয়েছিলেন, সেটিও সমাপ্ত করার ঘোষণা দেন তিনি। তথ্য মতে, যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি অভিবাসী হচ্ছে মেক্সিকো থেকে আসা (মোট অভিবাসীর শতকরা ২৩ ভাগ, সংখ্যায় এক কোটির বেশি), যারা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে অবদান রাখছে।  



মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি জ্বালানি ক্ষেত্রে জরুরি অবস্থা ঘোষণার উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আমেরিকা আবারও একটি উৎপাদনকারী দেশ হবে এবং আমাদের এমন কিছু আছে, যা অন্য কোনো উৎপাদনকারী দেশের কাছে থাকবে না—পৃথিবীর যেকোনো দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে তেল ও গ্যাস আছে এবং আমরা এটি ব্যবহার করতে যাচ্ছি। আমরা এটি ব্যবহার করব।’ তিনি সারা বিশ্বে আমেরিকান তেল ও গ্যাস রপ্তানি করার কথাও বলেন। তিনি অটোমোবাইল ক্ষেত্রে বড় ধরনের সাফল্য অর্জনের ইঙ্গিত দেন। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ওপর কর আরোপ করার পরিবর্তে অন্য দেশগুলোকে শুল্ক এবং কর আরোপ করার কথা বলেন। তিনি এই উদ্দেশ্যে সব শুল্ক এবং রাজস্ব সংগ্রহের জন্য বহিরাগত রাজস্ব পরিষেবা প্রতিষ্ঠা করার কথা বলেন, যার ফলে বিদেশি উৎস থেকে প্রচুর পরিমাণে অর্থ দেশের কোষাগারে প্রবাহিত হবে। এই বক্তব্যের প্রতিফলন শুরু হয় যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর ২৫ শতাংশ কর আরোপের নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন, যা পয়লা ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন দ্রব্যের মূল্যস্ফীতি ঘটতে পারে, যার ঘানি টানতে হবে সে দেশের সাধারণ মানুষকে। এই মুহূর্তে চীনের ওপর এ ধরনের শুল্ক আরোপের ঘোষণা না এলেও যেকোনো সময়ই তা আসতে পারে। এখানে উল্লেখ্য যে ২০২৩ সালে মেক্সিকো ছিল যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার, যেখানে মোট দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ছিল ৮০৭ বিলিয়ন ডলার, যা চীনের সঙ্গে মার্কিন বাণিজ্যকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ভবিষ্যতে এ ক্ষেত্রে নতুন আরো কী ঘটে এবং ফলে বাণিজ্যের ধারা কোন দিকে যায়, তা দেখার জন্য অপেক্ষা তো করতেই হবে।  


আমরা জানি, গত ১৫ জানুয়ারি গাজার হামাস যোদ্ধা এবং ইহুদিবাদী ইসরায়েল একটি যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে রাজি হয়। এই চুক্তিতে ছয় সপ্তাহের প্রাথমিক যুদ্ধবিরতির রূপরেখা রয়েছে। এতে গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহার ও জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি অন্যতম। তবে এই গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ছাড় দিয়ে ট্রাম্প হিংস্র ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের ওপর বাইডেন প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞাটি বাতিল করেছেন। যদিও বর্তমানে সেখানে যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি কার্যকর রয়েছে, তবে বলা যায় না তা কখন কোন অবস্থায় পর্যবসিত হয়। কারণ ট্রাম্প ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন বাড়ানোর কথা বলেছেন। এ ছাড়া ইসরায়েল ও তার আগ্রাসনবাদী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ভূমিকা নিয়ে শান্তিকামী বিশ্ববাসী যথেষ্ট উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে যুদ্ধবাজ নেতানিয়াহুর সঙ্গে ট্রাম্পের রয়েছে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব। তবে ট্রাম্প এ ক্ষেত্রে সৌদি আরবসহ কয়েকটি মুসলিম দেশের সহযোগিতা নিয়ে ইসরায়েলের স্বার্থ রক্ষা করেই যা করার করবেন বলে মনে হয়, যদিও ট্রাম্প আন্তরিকভাবে এই যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘অবশেষে মধ্যপ্রাচ্যে আবার শান্তি ফিরে আসবে।’


ট্রাম্প ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে শান্তি ফেরানোর কথা বারবারই বলে আসছেন। গত নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি একটি বিশেষ টিম গঠন করেছেন, যারা এরই মধ্যে পুরোদমে কাজ শুরু করেছে। সর্বোপরি তিনি বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য শিগগিরই পুতিনের সঙ্গে দেখা করবেন এবং একটি উপায় খুঁজে বের করবেন বলে জানিয়েছেন। যুদ্ধ বন্ধে উভয় পক্ষকে সম্মত করাতে যে শর্তগুলো আসতে পারে, তা পূরণ করার ক্ষেত্রেই সমস্যার উদ্ভব হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কোন দেশ কতটুকু ছাড় দিতে রাজি হবে, তা বলা কঠিন। তবে আমরা অবশ্যই চাই যুদ্ধ বন্ধ হয়ে ওই এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক। এ ক্ষেত্রে ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর বক্তব্যও থাকতে পারে। উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এরই মধ্যে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোকে প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। 

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও