ভ্যাট বৃদ্ধি : ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’

জাগো নিউজ ২৪ শাহানা হুদা রঞ্জনা প্রকাশিত: ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭:৪০

৪৩ ধরনের পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার ঘোষণা আসার পর থেকেই সাধারণ মানুষের মনে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং অবশ্য বলেছে, “অর্থনীতির স্বাস্থ্য ভালো করতে ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে।” কিন্তু সবাই আশঙ্কা করছেন যে, অর্থনীতির স্বাস্থ্য ভালো করতে গিয়ে জনগণের স্বাস্থ্যের বারোটা বাজবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আরো বাড়বে এই আশঙ্কায় সবাই অস্থির হয়ে পড়েছেন।


তবে মানুষের এই ভয়কে উড়িয়ে দিয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেছেন, ‘ভ্যাট বাড়লেও জিনিসপত্রের দামের ওপর তেমন প্রভাব পড়বে না।’ অর্থনীতি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ অর্থ উপদেষ্টার এই বক্তব্য মানুষকে আরো ভড়কে দিয়েছে। উনি কীভাবে ভাবছেন যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বাড়ানো সত্তে¡ও বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না। খুব সম্প্রতি উনি এও আশ্বাস দিয়েছেন রোজার আগে আর নতুন করে শুল্ক আরোপ করা হবে না। ওনার এই আশ্বাস জনজীবনে কোনোভাবেই স্বস্তি ফিরিয়ে আনছে না, বরং উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। কারণ ওনার কথাতেই স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে রোজার পরে জিনিসপত্রের দাম আরো বাড়তেই পারে।


অর্থ উপদেষ্টার সাথে গলা মিলিয়ে খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারও বলেছেন, অর্থবছরের মধ্যে হঠাৎ করে অর্ধশতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর যে বাড়তি শুল্ক ও ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে, তাতে মানুষের তেমন কোনো অসুবিধা হবে না। কীসের উপর ভিত্তি করে সরকারের উপদেষ্টারা ও প্রেস উইং এমন অর্বাচীন মন্তব্য করছেন, তা আমরা বুঝতে পারছি না। বিগত সরকারের আমলেও কর, ভ্যাট বৃদ্ধি নিয়ে এধরনের মন্তব্য আমরা শুনেছি, সমালোচনাও করেছি। বর্তমানের জনবান্ধব সরকারও যখন একইধরনের উক্তি করে, তখন অবাক না হয়ে পারা যায় না।



জিনিসপত্রের দাম যে হঠাৎ করে বেড়েছে তা নয়। গত সরকারের আমল থেকে চলে আসা উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের এমনিতেই চিড়েচ্যাপ্টা অবস্থা। ঠিক সেই মুহূর্তে নতুন করে ভ্যাট আরোপের ফলে আরও ভয়াবহ দুর্যোগ নেমে আসার আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে দেশে অনেক কল-কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। আওয়ামী সরকারের সময় বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকদের অধীনে যে-সব কলকারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ছিল, সেগুলো বন্ধ হয়ে গেছে বা মুখ থুবড়ে পড়েছে। কিছু কিছু টিকে আছে কোনোভাবে। ফলে অসংখ্য মানুষ বেকার হয়েছেন, বেতন-ভাতা কমেছে অনেকের। শুধু নিম্নবিত্ত নয়, মধ্যবিত্তরাও এই অবস্থার বলি হয়েছেন এবং হচ্ছেন। বিভিন্ন সংস্থা থেকে কর্মী ছাঁটাই হচ্ছে রাজনৈতিক পরিচয়ে। মোট কথা কর্মজীবী সাধারণ মানুষ আর্থিক শূন্যতার মধ্যে পড়েছেন।


অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সরাসরি কর বৃদ্ধি করছেন না ঠিকই কিন্তু এর পরিবর্তে পরোক্ষ কর আরোপ করা হচ্ছে। এই পরোক্ষ করের প্রভাব শুধু গ্রাম ও শহরের দরিদ্র শ্রেণির উপরেই নয়, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের ওপরেও চাপ সৃষ্টি করবে। কারণ আমরা জানি যে ভ্যাট পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। ফলে সাধারণ মানুষ যখন তার নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনবেন, তখন বেশি দামে তাকে তা কিনতে হবে। ফলে তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রতিটি দ্রব্য ক্রয়ে তাকে বাড়তি টাকা গুণতে হবে, তাছাড়া সাধারণ মানুষ তাদের আয়ের সিংহভাগ ব্যয় করেন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে।


অনেকেই সমালোচনা করছেন যে ধনীদের ওপর সরাসরি কর আরোপ না করে এ ধরনের পরোক্ষ কর রাজস্ব আহরণের সহজ পন্থা হতে পারে, কিন্তু তা সমাজের আয় বৈষম্যকে বাড়িয়ে তুলবে। শুল্ক-কর বাড়ানোর কারণে বছরে ১২ হাজার কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব সরকারি কোষাগারে ঢুকবে। কিন্তু ভেবে দেখেছেন কি, এই ১২ হাজার কোটি টাকার প্রায় পুরোটাই যাবে সাধারণ মানুষের পকেট থেকে। কারণ, পণ্যের ভ্যাট দিতে হয় প্রতিটি নাগরিককে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও