মাটিকে সজীব সত্তা ভাবতে হবে

www.ajkerpatrika.com মৃত্যুঞ্জয় রায় প্রকাশিত: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২৫

কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের খাঁটি সোনা কবিতাটি অনেকেরই মনে আছে। কবিতাটিতে এ দেশের মাটিকে সোনার চেয়েও খাঁটি বলে তুলনা করা হয়েছে। কবিতাটিতে বলা হয়েছে: ‘মধুর চেয়ে আছে মধুর/সে এই আমার দেশের মাটি/আমার দেশের পথের ধূলা/খাঁটি সোনার চাইতে খাঁটি।’ সোনার চেয়ে খাঁটি কোনো সোনা আছে কি না জানি না, হয়তো ক্যারেটের হিসাবে সোনার এই খাঁটিত্ব পরিমাপ করা হয়। তবে মাটি যে সোনার চেয়ে দামি, সে কথা সত্য। সোনার দাম যতই হোক, মানুষের লকারে যতই সোনা থাক, সেসব সোনা কখনো কোনো মানুষকে বাঁচাতে পারে না। বরং মানুষ তার বেঁচে থাকার প্রায় ৯৫ শতাংশ খাদ্যের জোগান পায় মাটি থেকে। এমনকি যে পানি না হলে আমাদের জীবন বাঁচে না সেই সুপেয় পানির মহাউৎস হলো ভূগর্ভস্থ পানি। মাটিকণা তার গোপন কোষে সে পানি জমিয়ে রাখে, আমরা মাটির নিচ থেকে সেসব পানি আহরণ করে আমাদের জীবন বাঁচাই।


যেভাবে পৃথিবীর মানুষ বাড়ছে, সেভাবে বাড়তে থাকলে আগামী ২০৫০ সালে আমাদের কৃষি উৎপাদন কমপক্ষে ৬০ শতাংশ বাড়াতে হবে। জাতিসংঘ বলেছে, মাটির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই আমরা ৫৮ শতাংশ পর্যন্ত খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে পারি, মাটির সে প্রচ্ছন্ন ক্ষমতা রয়েছে। আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যেসব দুর্যোগ-দুর্বিপাক মোকাবিলা করে চলেছি তার মূলে রয়েছে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসের বৃদ্ধি, যার মূল হোতা এই পৃথিবীর মানুষেরা। মানুষের নানা রকম ক্রিয়াকলাপের ফলে প্রতিবছর বায়ুমণ্ডলে যে পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত হচ্ছে, ভূপৃষ্ঠের স্থলভাগ তার প্রায় ৩০ শতাংশ কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। বায়ুমণ্ডল থেকে মাটি যে কার্বন ডাই-অক্সাইড ধারণ করে তা উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় ব্যবহারের মাধ্যমে বায়োমাস বা জৈবভরে রূপান্তর করে। তাই মাটির উত্তম ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই কার্বন পরিশোষণের পরিমাণ বাড়ানোর সুযোগ আছে।



আমরা পৃথিবীর অন্য সব বিষয় ও বস্তু নিয়ে যত ভাবি, তত ভাবি না মাটি নিয়ে। মাটিকে অনেকেই ভাবি জড় পদার্থ, যার কোনো প্রাণ নেই। অথচ একবার চোখ বুজে কল্পনা করুন তো, আমাদের ভূস্তরের ওপর থেকে অল্প অল্প করে নিচুতে নামতে থাকলে কী আছে সেখানে? মাটি হঠাৎ করে তৈরি হয়নি। লক্ষ-কোটি বছর ধরে বিভিন্ন শিলা ও পাথর জলস্রোতে ক্ষয়ে ক্ষয়ে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মাটিকণার সৃষ্টি হয়েছে। পৃথিবীর কোনো স্থানের মাটিই শুধু মাটিকণা দিয়ে গড়া না। মাটিতে রয়েছে তার আয়তনের প্রায় অর্ধেক মাটিকণা, সিকি ভাগ পানি ও সিকি ভাগ বায়ু। অবস্থা ও পরিবেশভেদে এর আনুপাতিক পরিমাণ কম-বেশি হতে পারে। তবে মাটির গঠনে এ তিনটি উপাদান অনিবার্যভাবে সত্য। এই পানি ও বায়ু মাটিকণার ফাঁকে ফাঁকে বহু রকমের অণুজীব বা মাইক্রোঅর্গানিজমকে বাঁচিয়ে রাখার পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছে, যাদের আমরা চোখেও দেখি না। কিন্তু তারা আমাদের অলক্ষ্যে মাটিতে বাস করে আমাদের যে কত বড় উপকার করে চলেছে তা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। সেখানে ব্যাকটেরিয়া আছে বলে মাটিতে জৈব জিনিসের পচন হচ্ছে, জৈব জিনিস পচে মাটিতে গাছের খাদ্য তৈরি করছে, পৃথিবীকে বর্জের দূষণ থেকে মুক্ত রাখছে। ছত্রাকসূত্ররা সেসব খাদ্যপুষ্টি এক গাছের শিকড় থেকে আর এক গাছের শিকড়ে পৌঁছে দিচ্ছে। শিমগোত্রীয় গাছের শিকড় বাতাসের নাইট্রোজেনকে মাটিতে সঞ্চয় করে উর্বরতা বাড়াচ্ছে, বেশি নাইট্রোজেনের সঞ্চয়ন বিভিন্ন উদ্ভিদকে দিচ্ছে প্রাকৃতিক বৃদ্ধি ও শক্তি। চলছে জলস্রোতের প্রবাহ, পানির সঙ্গে পুষ্টির চলাচল। এ রকম নানা রকমের জীবনের খেলা চলছে মাটির ভেতরে। যার ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে রয়েছে আমাদের জীবনের মূলসূত্র, জীবনের জিয়নকাঠি, গাছপালা, ঘরবাড়ি—সবকিছু। এসব নিয়েই আমাদের মৃত্তিকা পরিবেশতন্ত্র। মাটিকণার মধ্যে ও আন্তঃকণার ফাঁকে ফাঁকে অনাদিকাল থেকে বয়ে চলেছে এরূপ নানা রকম রসায়ন, জৈব ক্রিয়াকলাপ। তাই মাটিকে কি আর নির্জীব জড় পদার্থ ভাবার কোনো কারণ আছে?

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও