মুখ লুকাল কেন মেয়েরা

www.ajkerpatrika.com সাহিদা পারভীন শিখা প্রকাশিত: ১৭ জুলাই ২০২৫, ১৩:৪৪

‘জুলাই আন্দোলনের সময় যাঁরা রাজপথে দাঁড়িয়েছিলেন, সেই নারীরা আজ ঘরে বসে আছেন। তাঁরা মুখ লুকিয়ে ফেলেছেন। এটা আমাদের জন্য ভালো বার্তা নয়।’—মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদের এই বক্তব্য শুধু হতাশার প্রকাশ নয়, বরং এক ব্যর্থ সময়ের স্বীকারোক্তি। নারী যখন রাষ্ট্রবিরোধী নয়, বরং রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হয়ে ওঠেন, তখন সমাজের নানা মুখোশ খসে পড়ে—এটাই যেন আমরা আবারও প্রত্যক্ষ করলাম জুলাই আন্দোলনের পরে। এই একটি বাক্যেই যেন বাংলাদেশের নারীর সামাজিক অবস্থান, রাজনৈতিক পরিণতি এবং সাংস্কৃতিক প্রতিক্রিয়ার এক জটিল চিত্র উঠে এসেছে।


২০২৪ সালের ১৪ জুলাই মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের হল থেকে বেরিয়ে আসা, রাজপথে মশাল নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়া এবং কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে প্রতিবাদ জানানো—সবকিছুই একটি নতুন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অভিঘাত তৈরি করেছিল। আন্দোলনটি ছিল নারী নেতৃত্বাধীন, কিন্তু তা নারীকেন্দ্রিক ছিল না; বরং সেটি ছিল সামগ্রিক জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন, যেখানে নারীরা এগিয়ে এসেছিলেন সাহসিকতার প্রথম সারিতে।


তবে এখন এক বছরের মাথায় দেখা যাচ্ছে, সেই নারীদের অনেকে আর সামনে নেই। তাঁদের কেউ কেউ আত্মগোপনে, কেউ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, কেউবা পরিবার-সমাজের চাপের কাছে পরাজিত। শারমীন মুরশিদ জানিয়েছেন, অনেক নারী জানিয়েছেন তাঁরা আর সামনে আসতে চান না। কাউন্সেলিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ১০০ নারীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাঁদের খুঁজে বের করার জন্য। কিন্তু এ উদ্যোগ এত দেরিতে কেন? এই প্রশ্ন করা যেতেই পারে।


বাংলাদেশের ইতিহাসে নারীরা বারবার সাহস দেখিয়েছেন, কিন্তু বারবারই তাঁদের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ তার বড় দৃষ্টান্ত। হাজার হাজার নারী তখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সাহস দেখিয়েছিলেন, যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, কিন্তু যুদ্ধ শেষে তাঁরা পাননি রাষ্ট্রীয় মর্যাদা। বরং অনেকেই পেয়েছেন সমাজের অবজ্ঞা, সন্দেহ, নিঃসঙ্গতা। সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা না নিয়ে আমরা বারবার একই ভুল করে চলেছি।


জুলাই আন্দোলনের নারী অংশগ্রহণকারীদের মুখ লুকিয়ে ফেলাটা নিছক মানসিক ক্লান্তি বা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয় বরং এটি একটি রূঢ় ও বৈষম্যমূলক সামাজিক প্রতিক্রিয়ার প্রতিফলন। আন্দোলনের সময় তাঁদের কণ্ঠস্বর যাদের পক্ষে যায়নি, তারা আন্দোলন ব্যর্থ করার জন্য নারী নেতৃত্বকে ব্যক্তিগত আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। অপপ্রচার, সাইবার বুলিং, চরিত্রহননের ষড়যন্ত্র, ফেক পোস্ট এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা—এসব ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সচেতনভাবে, পরিকল্পিতভাবে।


এই প্রেক্ষাপটে নারীর মানসিক স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক প্রণোদনার প্রসঙ্গ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাউন্সেলিং কেবল চিকিৎসা নয়—এটি একধরনের সামাজিক স্বীকৃতি। কাউকে যদি বলা হয়, ‘তোমার কষ্ট


আমরা বুঝি’, তবেই সেই ব্যক্তি আবার উঠে দাঁড়াতে পারেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বাংলাদেশে এখনো কাউন্সেলিংকে দুর্বলতা হিসেবে দেখা হয়। যাঁরা সামনের সারিতে ছিলেন, তাঁরা যখন হঠাৎ করে নিঃসঙ্গ হয়ে যান, তখন তাঁরা কেবল মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হন না—তাঁদের মধ্যে একধরনের আত্মদ্বন্দ্বও তৈরি হয়: ‘আমি কি ভুল করেছিলাম?’


এই দ্বন্দ্ব অনেক বেশি তীব্র হয়, যখন পরিবার, সমাজ, এমনকি সহযোদ্ধারাও দূরে সরে যায়। ফলে একজন নারী শুধু নিঃসঙ্গ নন, অপরাধবোধে ভুগতে থাকেন। তিনি ভাবেন, যদি সামনে না আসতাম, তাহলে হয়তো আজ আমাকে এসব সহ্য করতে হতো না। অথচ প্রশ্ন হওয়া উচিত ছিল, কেন একটি সমাজ নারী নেতৃত্বকে সম্মান জানাতে ব্যর্থ হলো?

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও