দেশের ভেতরে গণতন্ত্রে উত্তরণে যে আশঙ্কা ও জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক বাংলাদেশের ওপর ৩৫ শতাংশ পালটা শুল্ক (রেসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ) আরোপের ভয়ংকর সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই, গড়ে ১৫ শতাংশ পালটা শুল্ক পরিশোধ করে আসছে। এ পরিমাণ শুল্ক পরিশোধে বাংলাদেশ সক্ষমতার পরিচয় দিলেও, বাংলাদেশকে এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব অনুযায়ী সর্বমোট ৫০ শতাংশ পালটা শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। শেষ পর্যন্ত আলাপ-আলোচনা করে পালটা শুল্কের এ চাপ থেকে রেহাই পাওয়া না গেলে, বাংলাদেশকে চরম বিপর্যয়কর অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে।
আমরা সাধারণভাবে জানি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে যে দেশ আমদানি করে, সেই দেশের আমদানিকারকরাই আমদানি শুল্ক পরিশোধ করে। কিন্তু পালটা শুল্কের ক্ষেত্রে রপ্তানিকারক দেশ কোনো দেশে তাদের রপ্তানি সামগ্রী প্রবেশ করাতে চাইলে রপ্তানিকারক দেশের ব্যবসায়ীদেরকেই এ শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা ২০১৫ সাল থেকে নিজ নিজ সক্ষমতার ভিত্তিতে, গড়ে ১৫ শতাংশ পালটা শুল্ক পরিশোধ করে আসছিল। এখন ৩৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক যুক্ত হলে পালটা শুল্ক হার দাঁড়াবে ৫০ শতাংশ। এটা যে খুবই উঁচু ধরনের হার, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে নতুন করে যে ৩৫ শতাংশ পালটা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন, দ্বিপক্ষীয় দরকষাকষির মাধ্যমে তা কমিয়ে আনতে দুই দফা আলোচনা হলেও, এখন পর্যন্ত কোনো সমঝোতা হয়নি। আগামী ১ আগস্ট থেকে এ ঘোষণা কার্যকরের আগেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ আবারও বসতে চায়।
গত সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫ সচিবালয়ে অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও দেশের বিশিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলন করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন। তার নেতৃত্বে একটি দল পালটা শুল্ক হার কমানোর জন্য চুক্তিতে আসতে ৯ থেকে ১১ জুলাই ওয়াশিংটনে আলোচনা শেষে গত রোববার ১৩ জুলাই দেশে ফিরেছেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা জানিয়েছেন, ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে এবং আন্তঃমন্ত্রণালয়ের কিছু আলোচনার বিষয় আছে। সেগুলো শেষ করে আবার আলোচনার জন্য তিনি আগামী সপ্তাহের মাঝামাঝি যুক্তরাষ্ট্র যাবেন। তিনি জানিয়েছেন, একটা ভালো ফলের জন্য সবাই মিলে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। বাণিজ্য উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করে বলেছেন, বাংলাদেশ তার সক্ষমতা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবে এবং বাংলাদেশি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্র যৌক্তিক পর্যায়ে শুল্ক নির্ধারণ করবে।
কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বা কোন বিষয়ে একমত কিংবা দ্বিমত পোষণ করেছে দেশটি, সেসব বিষয়ে কোনো জবাব দেননি বাণিজ্য উপদেষ্টা। এর কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে দেশটির সঙ্গে নন-ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্ট রয়েছে। ফলে বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না। গণতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী যুক্তরাষ্ট্র যদি স্বচ্ছতার নীতিতে ব্যত্যয় ঘটাতে চায়, তাহলে বুঝতে হবে এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো গূঢ় অভিসন্ধি রয়েছে। ছোট ও দুর্বল দেশ হিসাবে এটাই আমাদের নিয়তি হয়ে গেছে বলে মনে হয়।
গত ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের ৬০টি দেশের ওপর বিভিন্ন হারে পালটা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। বাংলাদেশের জন্য এ হার ছিল ৩৭ শতাংশ। ৭ এপ্রিল ৩ মাসের জন্য তা স্থগিত করে দেশটি। এ মেয়াদ শেষ হয়ে যায় গত ৯ জুলাই। তার আগের দিন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে পাঠানো এক চিঠিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, বাংলাদেশের পণ্য আমদানিতে তারা ৩৭-এর বদলে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন। যুক্তরাষ্ট্রকে শূন্য শুল্কের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ কি তা দেবে? জবাবে শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, ‘এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।’ যুক্তরাষ্ট্র কোনো দেশে শুল্ক বাড়ালে বাংলাদেশকেও বাড়াতে হবে, এমন কোনো শর্ত আছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাব দেননি বাণিজ্য উপদেষ্টা।