ঢাবি ক্যাম্পাসে যান নিয়ন্ত্রণের আসল উদ্দেশ্য কী
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গিয়েছিলাম একটা কাজে। সিএনজি নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করা গেল না, হেঁটে প্রবেশ করতে হলো। দেখলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথগুলোতে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। সেখানে কয়েকজন তরুণ বহিরাগত যানবাহন পরীক্ষা করে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের যানবাহনগুলোকে প্রবেশ করতে দিচ্ছে। ফলে প্রবেশপথগুলোতে সব সময়ই যানবাহনের একটা জটলা লেগে থাকছে, যা চারপাশের রাস্তায় বিদ্যমান যানজট আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
সেই সন্ধ্যায় ঢাবি ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢুকে পরিবেশটা কেমন অদ্ভুত লেগেছিল। স্বৈরশাসক হাসিনার শাসনামলেও আন্দোলনবিহীন দিনে ঢাবিতে এ রকম পরিবেশ দেখিনি। বর্তমান এই পরিস্থিতির কারণ হলো, সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাম্পাসে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই সিদ্ধান্ত অনুসারে, শুক্র, শনি ও সরকারি ছুটির দিনগুলোয় বেলা ৩টা থেকে রাত ১০টা এবং কর্মদিবসে বিকেল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত থাকবে। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত গাড়ি, জরুরি সেবা (অ্যাম্বুলেন্স, ডাক্তার, রোগী, সাংবাদিকসহ অন্যান্য সরকারি গাড়ি) ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢুকতে পারবে না।
এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি প্রবেশপথে ব্যারিকেড দিয়ে যানবাহন প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। পথগুলো হলো শাহবাগ, দোয়েল চত্বর, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট, শিববাড়ি ক্রসিং, ফুলার রোড, পলাশী মোড় ও নীলক্ষেত। এ সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ‘সার্বিক নিরাপত্তার’ কথা বলা হয়েছে।
বহিরাগত নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নটি নতুন নয়
ঢাবি ক্যাম্পাসে বহিরাগত নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নটি অবশ্য নতুন নয়। এর আগের সরকারের আমলেও আমরা দেখেছি বিভিন্ন সময় বহিরাগত প্রবেশ বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে; বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময়। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বা প্রক্টরের অনুমতি ছাড়া ক্যাম্পাসে ‘বহিরাগতদের’ অবস্থান, ঘোরাফেরা ও কার্যক্রম পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন।
এ বছরের জুলাইয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলার সময়ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘শিক্ষার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার’ কারণ দেখিয়ে ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। তখন অবশ্য কোটা সংস্কার আন্দোলনরত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে বহিরাগত ব্যক্তিদের ঢাবি ক্যাম্পাসে আসার আহ্বান জানানো হয়েছিল। সে সময় ছাত্রলীগ ও পুলিশি হামলা মোকাবিলার জন্য তাদের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষকে প্রায়ই ‘রাজুতে আসার’ আহ্বান জানানো হতো।
সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তটি বহিরাগতদের প্রবেশে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা না হলেও বাইরের মানুষকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসতে নিরুৎসাহিত করার জন্যই নেওয়া। এ প্রসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো প্রতিবাদ বা আপত্তি চোখে পড়েনি। হয়তো এখন আর ‘বহিরাগত’ সাধারণ মানুষদের তাদের ‘প্রয়োজন’ নেই।