ঘোড়ার আগে কি গাড়ি জোড়ার চেষ্টা হচ্ছে

প্রথম আলো সৈয়দ আব্দুল হামিদ প্রকাশিত: ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১৯:২৩

দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠিত হলেও স্বাস্থ্য খাত সংস্কারে কমিশন গঠন করা হয়নি। এর বদলে গঠিত হয়েছে স্বাস্থ্যব্যবস্থা সংস্কারের জন্য ১১ সদস্যের প্যানেল। তাহলে কি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছেও স্বাস্থ্য খাত তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়? এ কমিটি যে শুধু দায়সারা, তার প্রমাণ দেওয়া যায়। কমিটি থেকে কোনো ধরনের প্রতিবেদন পাওয়ার আগেই ‘স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইন ২০২৪’ অধ্যাদেশ আকারে পাসের চেষ্টা করা হচ্ছে। এ তো ঘোড়ার আগে গাড়ি জোড়ার মতো অবস্থা। 


এ অধ্যাদেশে সেবাগ্রহীতা ও সেবা প্রদানকারীর সুরক্ষার বিষয়ে বেশ কিছু নির্দেশনা আছে। তবে আইনটির নামসহ অনেক ক্ষেত্রে অস্পষ্টতা, ভাষাগতা দুর্বোধ্যতা, আইনি ভাষা প্রয়োগের অভাব, সেবাগ্রহীতা ও সেবা প্রদানকারীর কার্যকর সুরক্ষার দিকনির্দেশনার অভাবসহ নানা ধরনের দুর্বলতা লক্ষণীয়।


উদাহরণ দেওয়া যাক। ‘ব্যক্তিগত চেম্বারে বেসরকারি চিকিৎসাসেবা’র ক্ষেত্রে রোগীর ব্যবস্থাপত্রে ‘সুস্পষ্টভাবে জেনেরিক ঔষধের নাম বড় অক্ষরে লিখিতে হইবে’ মর্মে একটি ধারা আছে। ধারায় বেসরকারি ও সরকারি হাসপাতালের কথা কিছু বলা হয়নি। কেন শুধু ‘ব্যক্তিগত চেম্বারে বেসরকারি চিকিৎসাসেবা’র ক্ষেত্রে এ ধারা প্রযোজ্য হবে? এ ধারা প্রয়োগের ক্ষেত্রেও বেশ জটিলতা দেখা দেবে। কেননা, এ ধারার প্রয়োগ তখনই সম্ভব হবে, যখন সব ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি সমমানের ওষুধ উৎপাদন করবে।


বিদেশি স্বাস্থ্যসেবাদানকারী ব্যক্তি কর্তৃক সেবা প্রদানসংক্রান্ত বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে এই আইনের অধীন প্রণীত বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে বিনা মূল্যে বা অর্থের বিনিময়ে চিকিৎসাসেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে কোনো হাসপাতালে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে বিদেশি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ব্যক্তিকে নিয়োগ করা যাইবে।’ এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) থেকে লাইসেন্স প্রাপ্তির প্রয়োজন হবে কি না, তা উল্লেখ করা হয়নি। উল্লেখ্য, বিএমডিসির লাইসেন্স ছাড়া কোনো বিদেশি চিকিৎসক মেডিকেল এথিকস অনুযায়ী রোগীর সংস্পর্শে আসা সমীচীন নয়।



আবার বেশ কিছু ধারা ও উপধারার অন্তর্ভুক্তিতে অধ্যাদেশটি ভারবাহী হয়েছে। অন্যদিকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাদ পড়েছে। যেমন সুনির্দিষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়নি প্রেক্ষাপট, যৌক্তিকতা ও উদ্দেশ্য। স্বাস্থ্যকে ‘উন্নয়ন এজেন্ডা’ হিসেবে বিবেচনা করা এবং সে অনুযায়ী গুরুত্ব প্রদান করার বিষয় সংযোজন করা হয়নি। দেশের সব নাগরিকের জন্য বৈষম্যহীনভাবে ও স্বল্পমূল্যে গুণগত মানের সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে বর্তমান স্বাস্থ্যব্যবস্থা যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, তা মোকাবিলায় প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও অর্থায়নের পদ্ধতির যে সংস্কার প্রয়োজন, তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি।


অধ্যাদেশে সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থায় রেফারাল ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রবিধান তৈরি করার বিষয় উল্লেখ আছে। কিন্তু রেফারাল ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার জন্য কোনো সুস্পষ্ট ঘোষণা নেই। তা ছাড়া বেসরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থায় রেফারাল ব্যবস্থা প্রবর্তনের কোনো ধারাও সংযোজন করা হয়নি।


এই অধ্যাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য, বয়োবৃদ্ধদের স্বাস্থ্যসেবা, নবোদ্ভূত রোগের (ইমার্জিং) প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিষয়ে কোনো কিছু উল্লেখ নেই। নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবার জন্য গুণগত মানের স্বাস্থ্য–কর্মশক্তি তৈরির লক্ষ্যে বিএমডিসিকে শক্তিশালী করা দরকার। এর মাধ্যমে সব ধরনের ক্লিনিক্যাল হেলথ ওয়ার্কফোর্সের মেডিকেল প্র্যাকটিসের সনদ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে লাইসেন্সিং পরীক্ষা চালু এবং তিন থেকে পাঁচ বছর পরপর লাইসেন্স নবায়নের পরীক্ষা চালুর বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। সংযোজিত হয়নি স্বাস্থ্য–কর্মশক্তি বাহিনীর ইন্টার্নশিপ ও প্রশিক্ষণ ভাতা যুগোপযোগী করার কোনো ধারা। স্বাস্থ্য–কর্মশক্তি বাহিনীকে অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্য কোনো বিশেষ ব্যবস্থার কথা উল্লেখ নেই।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও