দায়িত্ব গ্রহণের দুই সপ্তাহ পর অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোববার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে প্রথম ভাষণ দিয়েছেন। তাঁর এই ভাষণের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান ও উদ্দেশ্য নিয়ে বিভিন্ন মহলে যে প্রশ্ন ছিল, তার অনেক কিছুই পরিষ্কার হয়ে গেছে।
মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর ভাষণে একটি উদার, গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যের কথা জানিয়েছেন। আমরা দেখেছি, লাখ লাখ শহীদের আত্মত্যাগে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে সাম্য, মানবিক মর্যাদার সমাজ গঠনের আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল, সেটা রাজনৈতিক দলগুলোর বিভাজনের নীতির কারণে বেহাত হয়ে গিয়েছিল। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান প্রকৃত অর্থেই একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গড়ে তোলার সম্ভাবনা তৈরি করে দিয়েছে। এই স্বপ্ন যাতে হাতছাড়া না হয়ে যায়, সে জন্য প্রধান উপদেষ্টা ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে দেশ গঠন ও সরকারকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন।
মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর ভাষণে সংকট উত্তরণে বিচার বিভাগ, পুলিশ, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে সংস্কারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরেছেন। রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে যাওয়া দুর্নীতি, দুঃশাসন, অন্যায়, অবিচার, নিপীড়ন থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য নানা পদক্ষেপের কথা বলেছেন। তিনি ব্যাংক কমিশন এবং পুলিশ কমিশন গঠনের কথা বলেছেন।
সংস্কার প্রশ্নে অন্তর্বর্তী সরকারের এ উদ্যোগগুলোকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে দুর্নীতি, দুঃশাসন ও দলীয়করণে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে ভেঙে পড়েছে, তাতে এই সংস্কারের কাজটি খুব সহজ নয়। অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারের উদ্যোগে তাই জনগণ ও রাজনৈতিক শক্তিগুলোর উদার সমর্থন ও সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা আশা করি, সেই সমর্থন তারা পাবে।