দেশে খাদ্য নিরাপত্তায় মাছের অবদান

যুগান্তর মো. সামছুল আলম প্রকাশিত: ০৩ আগস্ট ২০২৪, ১৩:২৩

প্রতিবছর জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ পালিত হয়ে আসছে। এ ধারাবাহিকতায় এবার ‘ভরবো মাছে মোদের দেশ, গড়বো স্মার্ট বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে ৩০ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০২৪ পালিত হচ্ছে। আগে একটা ধারণা ছিল-জেলেরাই শুধু মাছ চাষ করবেন এবং তারাই মাছ বিক্রি করে জীবনধারণ করবেন। সেই প্রচলিত ধ্যানধারণা এখন আর নেই। এখন অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক ব্যাংক থেকে ঋণ এবং যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ও মৎস্য অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে গ্রামীণ কিংবা শহরতলীর জলাশয় এবং পুকুর, নালা, ডোবায়, ধানের জমি, এমনকি শহরের ছাদে নানা পদ্ধতিতে বিভিন্ন ধরনের মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। তারা এখন এক্ষেত্রে উদ্যোক্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। এর সঙ্গে পরিবারের নারী সদস্যরা সম্পৃক্ত হওয়ায় সমন্বিত প্রক্রিয়ায় মাছ চাষাবাদ করা হচ্ছে। এতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, পুষ্টি চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং নারীর ক্ষমতায়নের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।


নানা পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে দেশ আজ মাছ উৎপাদনে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণতাই অর্জন করেনি, দেশের চাহিদা মিটিয়ে মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য ৫০টিরও বেশি দেশে রপ্তানিও করা হচ্ছে। এছাড়া মৎস্য খাত এখন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও নানা রেকর্ড অর্জন করেছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) দ্য স্টেট অব ওয়ার্ল্ড ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকোয়াকালচার-২০২৪-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী মিঠা পানির মাছ আহরণে বাংলাদেশ চীনকে টপকে বিশ্বে ২য় অবস্থানে উঠে এসেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী চীনের মিঠা পানির মৎস্য উৎপাদন ছিল ১.৪৬ মিলিয়ন টন এবং অবস্থান ছিল বিশ্বে ২য়। অপরদিকে বাংলাদেশের উৎপাদন ছিল ১.২৫ মিলিয়ন টন এবং অবস্থান ছিল বিশ্বে ৩য়। বিগত দুই বছরে দেশে মিঠা পানির মৎস্য উৎপাদন ১.২৫ মিলিয়ন টন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১.৩২ মিলিয়ন টনে উন্নীত হয়েছে। পক্ষান্তরে চীনের উৎপাদন ১.৪৬ মিলিয়ন টন থেকে কমে ১.১৬ মিলিয়ন টন হয়েছে। ফলে দ্য স্টেট অব ওয়ার্ল্ড ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকোয়াকালচার ২০২৪-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ চীনকে টপকে ২য় অবস্থানে উন্নীত হয়েছে, যা এ দেশের জন্য একটি অভাবনীয় সাফল্য। এছাড়া বদ্ধ জলাশয়ে চাষকৃত মাছ উৎপাদনে ৫ম স্থানের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা, ক্রাস্টাশিয়ান্স উৎপাদনে বিশ্বে ৮ম স্থানে থাকা, সামুদ্রিক মাছ আহরণে ১৪তম হওয়া এবং তেলাপিয়া উৎপাদনে বিশ্বে ৪র্থ ও এশিয়ায় ৩য় স্থান অধিকার করেছে বাংলাদেশ। মৎস্য খাতে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ ও উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর সফল বাস্তবায়ন এবং মৎস্য অধিদপ্তর ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তর/সংস্থার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে মৎস্য উৎপাদন হয়েছে ৪৯.১৫ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে বিশেষ করে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন হয়েছে ৫ দশমিক ৭১ লাখ টন, যা একক প্রজাতি হিসেবে মোট মৎস্য উৎপাদনের প্রায় ১২ শতাংশ। এছাড়া বিশ্বে ইলিশ উৎপাদনকারী ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম। ইলিশ জাতীয় জীবনের অর্থনীতিতেও বড় অবদান রাখছে। জিডিপিতে ইলিশের অবদান শতকরা ১ ভাগের বেশি। কর্মসংস্থানের হিসাবেও দেখা যায়, বর্তমানে প্রায় ৭ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষভাবে এবং ২০-২৫ লাখ মানুষ পরোক্ষভাবে ইলিশসম্পদের সঙ্গে জড়িত।


মা ইলিশ রক্ষার্থে প্রতিবছর অক্টোবরে ২২ দিন সারা দেশে সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ থাকে। এ সময় মৎস্যজীবী ও জেলেদের ২২ দিনের জন্য ২৫ কেজি হারে খাদ্য সহায়তা (চাল) প্রদান করা হয়। তাছাড়া জাটকা নিধন প্রতিরোধ কার্যক্রম বাস্তবায়নে ইলিশের অভয়াশ্রমগুলোয় ৪ মাস মাছ ধরা বন্ধ থাকে। এ সময় মৎস্য আহরণে বিরত মৎস্যজীবী ও জেলেদের মাসিক ৪০ কেজি হারে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়। পাশাপাশি মাছ ধরা বন্ধের সময় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১২,২৬,৮১৮টি জেলে পরিবারকে প্রায় ৯৮,৩৬২.৫৫ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য ভিজিএফ হিসাবে দেওয়া হয়েছে এবং গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ডিসেম্বর/২০২৩ পর্যন্ত ১২,৫৩,৭৭১টি জেলে পরিবারকে ৫২,৬২৪.৭৪ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য ভিজিএফ হিসাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ কার্যক্রমের অংশ হিসাবে মৎস্যসম্পদ রক্ষায় প্রতিবছর জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চার ধাপে মোট ৩০ দিন ক্ষতিকর কারেন্ট জাল ধ্বংসে কম্বিং অপারেশন পরিচালনা করা হয়। এছাড়াও জেলে নিবন্ধন সংক্রান্ত তথ্য প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসাবে জেলে নিবন্ধন ও পরিচয়পত্র প্রদান প্রকল্পের আওতায় ১৬ লাখ জেলের নিবন্ধন করা হয় এবং ১৪ লাখ জেলের মাঝে নিবন্ধন কার্ড বিতরণ করা হয়। তাছাড়া বর্তমানে রাজস্ব খাতের আওতায় জেলেদের নিবন্ধন হালনাগাদ করা হচ্ছে। দেখা গেছে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১৮,০১,৩৭৭ জন। শিগগিরই দেড় লক্ষাধিক জেলের মাঝে কার্ড বিতরণ করা হবে।


ইলিশ ছাড়াও দুই বছরে মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে দেশি প্রজাতি (পাঙাশ, বোয়াল, আইড় ও অন্যান্য ছোট মাছ) এবং কার্পজাতীয় মাছ। এছাড়া বদ্ধ জলাশয়ে চাষের মাছ উৎপাদনেও বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষণীয়। চাষের মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ টানা পাঁচ বছর বিশ্বে ৫ম স্থান ধরে রেখেছে। মাছ চাষ নিবিড়করণে মাছের খামার যান্ত্রিকীকরণ; প্রজাতি বহুমুখীকরণ; জলবায়ু সহনশীল মাছ চাষ প্রযুক্তি সম্প্রসারণ; চাহিদার নিরিখে সময়োপযোগী মাছ চাষ প্রযুক্তি সম্প্রসারণ; হ্যাচারিতে গুণগত মানসম্পন্ন পোনা/রেণু উৎপাদন; চাষি ও উদ্যোক্তাদের নিয়মিত ট্রেডভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদানসহ মাছ চাষের উপকরণ বিতরণ; রোগ নিয়ন্ত্রণে ডিজিস সার্ভিল্যান্স কার্যক্রম জোরদারকরণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে এ অর্জনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে। তাছাড়া দেশে মাছ উৎপাদনের যে ধারা চলমান রয়েছে, তা আগামী দিনে থেমে যাওয়ারও কোনো আশঙ্কা নেই।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও