ধর্মনিরপেক্ষতার বদলে বহুত্ববাদ: ভাবের ঘরে চুরি

প্রথম আলো মহিউদ্দিন আহমদ প্রকাশিত: ০১ আগস্ট ২০২৫, ১১:৪৯

হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ তুলে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। তাঁদের অনেকেই নির্যাতিত হয়েছেন। এ হামলা ও নির্যাতনের নিন্দা জানিয়েছে কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সংগঠন। তারা বলছে, এটি মানবাধিকারের লঙ্ঘন। এ ঘটনা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকারের ওপর আঘাত। এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে।


কটূক্তি, ধর্ম অবমাননা, অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া—এসব অভিযোগ তুলে হামলা-মামলা চলে আসছে অনেক দিন ধরে। নিকট অতীতে রামু, নাসিরনগর, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেছে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার ধুয়া তুলে দুর্বল সম্প্রদায়ের লোকদের ওপর জুলুম হয়েছে। অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার নালিশ জানালেই হলো। পুলিশ বিদ্যুৎগতিতে তাকে ধরে নিয়ে যাবে। আদালতে রিমান্ড চাইবে। আদালত সঙ্গে সঙ্গেই দিয়ে দেবেন। এই ফর্মুলার নড়চড় হতে দেখছি না।


ধর্ম একটি স্পর্শকাতর বিষয়। সম্প্রতি একটি পুরোনো বাংলা ছবির সংলাপ শুনলাম। উত্তমকুমার বলছেন, ‘ভগবানে আমার বিশ্বাস নেই।’ এতে তো ধর্মপ্রাণ হিন্দুর অনুভূতিতে প্রচণ্ড আঘাত লাগার কথা; কিন্তু সে রকম কিছু হয়েছে বলে শুনিনি। উত্তমকুমারের জনপ্রিয়তায় একটুও ভাটা পড়েনি।


এ অঞ্চলে হিন্দু-মুসলমানের ঝগড়া বেশ পুরোনো। একসময় ভারতের মুসলমানরা মনে করলেন, তাঁরা একটি জাতি। হিন্দুদের সঙ্গে বসবাস করলে ইমান-আকিদা নিয়ে বাঁচা যাবে না। আলাদা দেশ চাই। তো আলাদা দেশ ‘পাকিস্তান’ হলো। দেখা গেল পাকিস্তানের এক অঞ্চলের মুসলমানের সঙ্গে আরেক অঞ্চলের মুসলমানের অনেক দ্বন্দ্ব। এক ছাদের নিচে বসে তার সুরাহা হবে না। তাই পাকিস্তান ভেঙে ‘বাংলাদেশ’ হলো। এখন দেখা যাচ্ছে, তাতেও সব সমস্যার সমাধান হয়নি। হিন্দু-মুসলমান ভাগটা রয়েই গেল।


একসময় এ দেশে ছিল পৃথক নির্বাচনব্যবস্থা। মুসলমানরা ভোট দিত মুসলমানকে আর হিন্দুরা দিত হিন্দুকে। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের আগে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ হিন্দু নেতাদের বোঝাল, ‘আমাদের ভোট দিলে দেশে সাম্প্রদায়িকতা থাকবে না, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হবে।’


হিন্দু নেতারা বললেন, তাহলে আগে তোমরা অসাম্প্রদায়িক হও। আওয়ামী লীগ রাজি হলো। নির্বাচনে মুসলিম লীগের ভরাডুবি হলো।



১৯৫৫ সালে আওয়ামী লীগ দলের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটা বাদ দিয়ে ‘অসাম্প্রদায়িক’ হওয়ার দাবি করল। ১৯৫৬ সালের সংবিধানে পৃথক নির্বাচনব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়ে চালু হলো যুক্ত নির্বাচনব্যবস্থা। তবে কাগজে-কলমে অসাম্প্রদায়িক হলেও আচরণে আওয়ামী লীগ মুসলমানের দলই থেকে গেল।


১৯৭০ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে শেখ মুজিব ঘোষণা দিলেন, ‘কাউকে কোরআন ও সুন্নাহবিরোধী আইন করতে দেওয়া হবে না।’ কার্যত হিন্দুরা হলেন আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক।


অনেক মুসলমান মনে করেন, হিন্দুরা সব ভারতের দালাল। কিছু হলেই তাঁরা দৌড় দেন ভারতের দিকে। ‘ভারতের দালাল’ কথাটা এ দেশে খুব খায়। পাকিস্তানি শাসকেরা মনে করতেন, বাঙালি মুসলমান খাঁটি মুসলমান নয়। নামে মুসলমান হলেও কার্যত তারা হিন্দু। তারা হিন্দু সংস্কৃতি লালন-পালন করে। শহীদ মিনার, পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপন—এসব হচ্ছে হিন্দু সংস্কৃতি।


১৯৭১ সালে এ দেশে গণহত্যা হয়েছিল। প্রধান টার্গেট ছিল হিন্দু সম্প্রদায়। পাকিস্তানিদের হাতে যত মুসলমান মারা গেছে, পাকিস্তানিরা তাদের হিন্দু মনে করেই মেরেছে। যে এক কোটি লোক ভারতে শরণার্থী হয়েছিল, তাদের ৮০ ভাগই ছিল হিন্দু।


দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুসলমানের চোখে হিন্দুরা হিন্দুই থেকে গেল, বাঙালি হতে পারেনি। রেডিও-টেলিভিশনে আর সরকারি অনুষ্ঠানে একজন পুরুত ডেকে গীতা পাঠ করিয়ে সরকার দায়িত্ব সারল। বলল ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ হয়ে গেছে। ১৯৭২ সাল থেকেই দেশের নানা জায়গায় পূজামণ্ডপে হামলা আর প্রতিমা ভাঙচুর হতে থাকে।


১৯৭৫ সালের পর কাগজে–কলমে বাংলাদেশ হয়ে যায় মুসলমানের দেশ। রাষ্ট্রের অনানুষ্ঠানিক ইসলামীকরণ জিয়াউর রহমানের হাত দিয়ে শুরু, এরশাদের হাতে তার মোক্ষলাভ।


শেখ হাসিনা ২০ বছর ক্ষমতায় থেকে জিয়া-এরশাদের তৈরি স্থিতাবস্থা বজায় রাখলেন। হিন্দুদের প্রতি তাঁর দরদ ছিল না। তাঁর দরকার ছিল হিন্দু ভোট। মুসলমানের প্রতিও যে তাঁর দরদ ছিল, এমনটি বলা যাবে না।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও