
চাঁদাবাজি, জুলাই মাস এবং গণতন্ত্রের ঘুগনি
বাংলাদেশের রাজনীতি এখন এমন এক শিল্প, যেখানে গণতন্ত্রের নাটক হয় কিন্তু দর্শক ছাড়া, প্রশ্নোত্তর হয় কিন্তু উত্তর আগে ঠিক করা, আর আন্দোলন হয়...যেটা আসলে অডিশনের মতো, কে কেমন নাটক করতে পারে। এদিকে, জুলাই মাস এখন নতুন এক রাজনৈতিক ব্র্যান্ড—একে বলতেই হয়, ‘জুলাই: পকেট ভারী করো লিমিটেড’।
উমামা ফাতেমা চোখ মুছে বলে উঠেছেন, ‘জুলাইকে মানি মেকিং মেশিনে পরিণত করা হয়েছে!’
এই বক্তব্যে রাজনৈতিক মহলে যেন এক চমৎকার কবিতার আবেশ খেলে গেল, আর সমর্থকেরা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে লিখে ফেলল: ‘কোন মেশিন দেখতে গিয়ে আপা যে কোন মেশিন দেখলেন।’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলও কম যান না। তিনি বলেছেন, ‘চাঁদাবাজির দায়ে পাঁচ সমন্বয়কারী গ্রেপ্তার হয়েছে, আমি বেদনায় নীল হয়ে গেছি।’
তাঁর এই নীল হয়ে যাওয়ার মাঝে কবিগুরুর ‘নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে’র ছায়া দেখা গেলেও, সাধারণ মানুষের ভাবনা একেবারেই প্র্যাকটিক্যাল:
‘বেদনায় তো আপনারা নীল হন, আর আমরা তো নীলে পকেট দেখি—শূন্য মানে শূন্য!’
এদিকে শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করেছেন কি করেননি, তা নিয়ে দুইটা থিওরি চলছে। একদল বলছে, তিনি গেছেন, কিন্তু তাঁর শাসনের রেফারেন্স বইটা রয়ে গেছে—ঠিক যেমন পুরোনো স্যারের সাজেশন নতুন স্যারও ক্লাসে ব্যবহার করে, শুধু কভার বদলায়।
এখন প্রশ্ন উঠছে, ‘যারা অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছে, তারা কি পুরোনো রেসিপি দিয়েই নতুন বিরিয়ানির স্বপ্ন দেখছে?’
এই তো সেদিনই এক নেতাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘নতুন কী করছেন?’
তিনি বললেন, ‘এই যে নতুন করে সেই পুরোনো ব্যানারই প্রিন্ট করিয়েছি—এ ক্ষেত্রে কালিটাও নতুন!’
চাঁদাবাজির এই প্রতিযোগিতায় এখন মূল স্লোগান হচ্ছে, ‘তুমি ২০ লাখ তুলেছো? বাহ! আমি ২৫!’
একসময় যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ে জিপিএ নিয়ে হাই-ফাই চলত, এখন চলছে ‘কে কত চাঁদা তুলেছে’–এই নিয়ে রাজনৈতিক গর্বের বাণী। দলীয় কার্যালয়ও যেন এখন ‘চাঁদার জিমখানা’। এখানে ঢোকার আগে জিজ্ঞেস করে, ‘আপনার ইনভেস্টমেন্ট কত? ন্যূনতম লাখ পঁচিশ না হলে সিনিয়র বলে ডাকব না।’
আর যারা গ্রেপ্তার হয়, তাদের জন্যও সহানুভূতি নেই—বরং বাকিরা ভাবে, ‘বাহ, ও তো এখন চাঁদাবাজ ক্লাবের লিজেন্ড! মিডিয়ায় ছবি আসছে, ফেসবুকে ভাইরাল, ক্যারিয়ার সিকিউর।’
মানুষ এখন আন্দোলন দেখে না, খোঁজে ‘আচ্ছা, ওদের মাসিক সাবস্ক্রিপশন কত?’
‘রাজনীতি এখন জিমের মতো হয়ে গেছে, চাইলে এক মাস, চাইলে ছয় মাস—আপনি প্যাকেজ বুঝে অংশ নিতে পারেন।’
‘অভ্যুত্থান? হাহ! সেটাও যেন এখন ফেস্টিভ্যাল।’
‘ঈদের পর অভ্যুত্থান হবে ভাই, তখন ডিসকাউন্টে চেয়ার পাওয়া যাবে।’
‘আর নেতা বদল? ওটা তো এখন স্ট্যাটাস আপডেটের মতো।’
‘আজকের “নতুন শক্তি” কালকের “সাবেক হাইব্রিড”,
আর জনগণ?’
‘দাদা, আমাদের শুধু লাঠি খাওয়ার দায়িত্ব থাকে, বাকিটা তো আপনাদের অভিনয়!’
‘আমাদের রাজনীতি এখন সত্যি সত্যিই একধরনের “আচার” হয়ে গেছে। বয়ামে রেখে দিলেও তার গন্ধ যায় না।
একটু তেল, একটু চিনি, আর অল্প একটু—’ ‘চাঁদার স্বাদ!’
‘আর জুলাই মাস? ও এখন ক্যালেন্ডারের রাজা। রাজনীতি, ব্যবসা, চাঁদা, নাটক—সবকিছুর অলরাউন্ডার। আর আমরা?’
‘জনগণ মাত্র—মানে শুধু কর দাও, ভোট এলে ভোট দাও, আর চুপ থাকো।’
‘তাই বলি ভাই, জুলাই-আগস্টে ছাতা না নিলেও হবে, কিন্তু মানিব্যাগ চেক করে বের হবেন—রাজনীতি এখন হঠাৎ পকেটেও ঢুকে পড়ে।’
- ট্যাগ:
- মতামত
- চাঁদাবাজি
- গণতন্ত্র রক্ষা
- জুলাই মাস