দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে অন্য কিছু কি আড়াল হচ্ছে

প্রথম আলো কামাল আহমেদ প্রকাশিত: ১২ জুলাই ২০২৪, ১৯:০৩

গত কিছুদিনের সংবাদ শিরোনামগুলো দেখে বা শুনে মনে হয় যে বাংলাদেশে এখন আমের মৌসুম না, কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার মৌসুম চলছে। এগুলো প্রধানত দুর্নীতির কেলেঙ্কারি।


সাবেক পুলিশপ্রধান থেকে শুরু করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান পাবলিক সার্ভিস কমিশনের ড্রাইভার পর্যন্ত বিভিন্ন দপ্তরের উচ্চ, মধ্যম ও নিম্নস্তরের নানা রকম পদধারীদের দুর্নীতির ফিরিস্তি পড়তে পড়তে আমাদের অনেকেরই হাঁপিয়ে ওঠার দশা।


সাম্প্রতিক মামলাগুলোয় পুলিশের সব স্তরের প্রতিনিধিত্ব আছে। এর পাশাপাশি আছে জেলা প্রশাসক, দায়রা জজ, বন সংরক্ষক, রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা, ব্যাংকার, জেলা রেজিস্ট্রার, পাসপোর্ট অফিসের ড্রাইভার, চিকিৎসক প্রমুখ।


টাকার অঙ্কে তাঁদের দুর্নীতির পরিমাণ কখনো কখনো এতটাই অবিশ্বাস্য যে মনে হয় তাঁরা বোধ হয় টাকার স্তূপেই জীবনযাপন করতেন। এখন অনেকের মনেই কৌতূহল উঁকি দেয়, তাঁদের চেয়েও বেশি ক্ষমতাধর যাঁরা, তাঁদের কাছে তাহলে কি এর চেয়ে বেশি নেই? 


কারও কারও কাছে যে আছে, তা কিন্তু নির্বাচনের সময়ে প্রার্থীদের দাখিল করা হলফনামা থেকেই জানা গেছে। একজন এমপির সম্পদ পাঁচ বছরে বেড়েছে ৫৪ গুণ এবং ১৫ বছরে ২ হাজার ৪৩৬ গুণ। পাঁচ বছরে তাঁর স্ত্রীরও সম্পদ বেড়েছে ৩৪ গুণ।


ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) পাঁচ বছরে সম্পদ ও আয় বৃদ্ধিতে এগিয়ে থাকা শীর্ষ ১০ জন করে এমপির আলাদা তালিকাও প্রকাশ করেছে। দেশের আইনে ১০০ বিঘার বেশি জমি রাখার সুযোগ না থাকলেও জমির মালিকানায় শীর্ষে থাকা ১০ জনের দেড় থেকে ২০ গুণ পর্যন্ত জমি আছে।


১০ জানুয়ারি টিআইবি বিবৃতি দিয়ে এসব সম্পদের বিষয়ে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছিল এবং বৈধ সীমার অতিরিক্ত জমি জব্দের সুপারিশ করেছিল। 


দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) টিআইবির বিবৃতির আগেই বলেছিল, তারা হলফনামা খতিয়ে দেখবে। সমকাল জানিয়েছিল, এরই মধ্যে হলফনামায় অস্বাভাবিক সম্পদ উল্লেখ থাকা শতাধিক প্রার্থীর তালিকা তৈরি করেছে সংস্থাটি। এর মধ্যে বিজয়ী ও পরাজিত উভয় ধরনের প্রার্থীই রয়েছেন। তাঁদের হলফনামার হিসাব অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক মনে হয়েছে কমিশনের কাছে (এবার হলফনামায় চোখ দুদকের, ৯ জানুয়ারি ২০২৪)। 


এখন যাঁদের দুর্নীতির তদন্ত হচ্ছে এবং যাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তা সমর্থন না করার কোনো কারণ নেই। কিন্তু আরও বেশি ক্ষমতাশালীরা কি আড়ালে পড়ে যাচ্ছেন? তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো ফাইলবন্দী করে গুদামে চালান করে দিয়ে মানুষকে শুধু মুখরোচক কিছু দুর্নীতির আলোচনায়ই ব্যস্ত রাখার কৌশল নেওয়া হচ্ছে না তো?


দুর্নীতির এসব কেলেঙ্কারিতে যখন সবার মনোযোগ, তখনই প্রকাশ পেল পাবলিক সার্ভিস কমিশনের প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা। পুলিশও দ্রুত তৎপর হয়ে ১৭ জনকে আটক করেছে।


কিন্তু প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে কমিশনের যে ব্যাখ্যা, তাতে নতুন নতুন অনেক প্রশ্ন তৈরি হয়। পরীক্ষার দিন পরীক্ষা শুরুর আধা ঘণ্টা আগে লটারি করে চার (নন-ক্যাডার পদের জন্য) থেকে ছয় সেট (ক্যাডারভুক্ত পদের জন্য) প্রশ্নপত্রের মধ্যে কোন সেট পরীক্ষায় ব্যবহার করা হবে তা নির্ধারণের ব্যাখ্যা সত্য হলে, যাঁদের বিরুদ্ধে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ, তাঁরা তাহলে কী ফাঁস করেছেন? যদি ভুয়া প্রশ্নপত্র দিয়ে তাঁরা ব্যবসা করে থাকেন, তাহলে তো অপরাধের গুরুত্ব অনেক কমে যায়। 


কমিশন নিজেদের বাঁচাতে যে ব্যাখ্যা দিয়েছে, তাতে কি কার্যত অপরাধীদের লঘুদণ্ডে পার পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হলো না? কমিশনের চেয়ারম্যানের ড্রাইভার কিংবা ডেসপাচ রাইডারদের কাছে তো প্রশ্নপত্র হাওয়ায় উড়ে আসেনি। যেখান থেকে, যেভাবেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হোক না কেন, তার দায় কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা কি এড়াতে পারেন? 


কমিশন একটি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছে। নিজেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিজেরা তদন্ত করার চর্চার জন্য আমরা বহুদিন ধরে পুলিশের সমালোচনা করে আসছি। সেই একই চর্চা কমিশনের ক্ষেত্রে মোটেও প্রত্যাশিত ও গ্রহণযোগ্য নয়। তদন্ত হতে হবে কমিশনের সঙ্গে সম্পর্কহীন কোনো তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে। যেহেতু পিএসসি একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, তাই এ তদন্ত বিচার বিভাগের মাধ্যমেই হওয়া সমীচীন। 

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও