![](https://media.priyo.com/img/500x/https://cdn.ajkerpatrica.net/contents/cache/images/720x0x1/uploads/media/2024/06/02/89dba82330a5962939366317ef6e8490-665bd1c0358c0.jpg)
পচন রোধ করা জরুরি
‘আচ্ছা, একজন আইজিপি চাকরিজীবনের শুরু থেকে অবসর নেওয়া পর্যন্ত কত টাকা বেতন-ভাতা হিসেবে পেতে পারেন বলে আপনার ধারণা?’ টেলিফোনে প্রশ্নটি করলেন পরিচিত এক ভদ্রলোক। বললাম, সঠিক বলতে পারব না। তবে সব মিলিয়ে পাঁচ কোটি টাকা হতে পারে। এর মধ্য থেকে সংসার খরচ চালিয়ে উদ্বৃত্ত আর অবসরের পারিতোষিক মিলিয়ে তাঁর হাতে কতই বা থাকতে পারে, বড়জোর কোটি দুয়েক। জবাব শুনে ভদ্রলোক প্রশ্ন করলেন, তাহলে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ এত সম্পদের মালিক হলেন কী করে?
তাঁর কাছে কি আলাদিনের জাদুর চেরাগ আছে? ভদ্রলোকের এই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর আমার জানা নেই; বরং তাঁর এ প্রশ্নটি ভাবিয়ে তুলেছে সবার মতো আমাকেও। যদিও আমাদের সরকারি প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর পর্বততুল্য ধন-সম্পদের যেসব বিবরণ মাঝেমধ্যে সংবাদমাধ্যমে বেরোয়, তাতে মনে হওয়াটা স্বাভাবিক, তাঁরা চেরাগটেরাগ একটা কিছু হয়তো পেয়ে গেছেন।
খবর হলো, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৩ মে ঢাকা মহানগর স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের সব স্থাবর সম্পদ ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন। ক্রোকাদেশ অনুযায়ী, গোপালগঞ্জ ও ঢাকায় বেনজীরের চার শতাধিক একর জমি রয়েছে; যার বেশির ভাগ তাঁর স্ত্রী জীশান মির্জা ও মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীরের নামে ক্রয় করা। এসব সম্পদের মধ্যে ঢাকার উত্তর বাড্ডায় রূপায়ণ মিলেনিয়াম কেয়ার ভবনের পার্টনার বেনজীরের স্ত্রী জীশান মির্জা।
এ ছাড়া জীশান মির্জার নামে গোপালগঞ্জে বিভিন্ন দলিলে কয়েক শ একর জমি রয়েছে। ৬৫টি দলিলের অধিকাংশ সাবেক আইজিপি বেনজীরের স্ত্রী ও মেয়ের নামে। তা ছাড়া বেনজীর আহমেদের ৩৩টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এসব অ্যাকাউন্টে বেনজীর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের লেনদেনের তথ্য রয়েছে। (সূত্র: আজকের পত্রিকা, ২৪ মে, ২০২৪)।
এদিকে ২৬ মে আদালত মাদারীপুর জেলায় বেনজীরের স্ত্রীর নামে থাকা ২৭৩ বিঘা জমি এবং রাজধানীর গুলশানের চারটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটও ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন। এসব জমি ২০২১ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ক্রয় করা, যার দলিল মূল্য ১০ কোটি টাকার ওপরে। সাবেক পুলিশপ্রধান ও তাঁর স্ত্রী-কন্যার সম্পদের পরিমাণ দেখে যে কারও চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার কথা।
সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ চাকরিতে থাকার সময়ই নানা কারণে আলোচিত ছিলেন। সরকারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে তিনি ছিলেন মহাক্ষমতাধর। ক্ষমতাসীন সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে ছিল তাঁর নিত্য ওঠাবসা। ফলে তিনি হয়তো ভেবেছিলেন, যা খুশি করবেন, কেউ তাঁর কেশাগ্রও স্পর্শ করতে পারবে না। কিন্তু তাঁর হয়তো জানা ছিল না ‘চোরের দশ দিন, গেরস্তের এক দিন’ প্রবাদটি এখনো চালু আছে। আর তারই সার্থক রূপ দেখা যাচ্ছে বেনজীর আহমেদের বেলায়।
ওদিকে সেনাবাহিনীতে দায়িত্ব পালনকালে গুরুতর দুর্নীতিতে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে তিনি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অযোগ্য হবেন। যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন অপারেশনস অ্যাক্টের ৭০৩১ (সি) ধারা মোতাবেক, এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।
অভিযোগে বলা হয়েছে, আজিজ আহমেদ নিজের ভাইকে বাংলাদেশে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহি এড়াতে সাহায্য করতে গিয়ে রাষ্ট্রের কাজে হস্তক্ষেপ করেন। উল্লেখ্য, সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ তাঁর দুই ভাই হারিস আহমেদ ও তোফায়েল আহমেদ জোসেফকে দেশত্যাগে সহায়তা করেছেন—এমন একটি তথ্য বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। সরকার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় তাঁদের নাম ছিল।
পিতার নাম এবং ঠিকানা বদল করে পাসপোর্ট বানিয়ে তাঁদের বিদেশে পালিয়ে যেতে আজিজ আহমেদ সহায়তা করেছেন—এমন একটি খবর একসময় চাউর হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন অভিযোগ করেছে, আজিজ আহমেদ অন্যায়ভাবে নিজের ভাইকে সামরিক ঠিকাদারি কাজ পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখেন। তা ছাড়া, সরকারি পদে নিয়োগ দেওয়ার বিনিময়ে আজিজ ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ এনেছে মার্কিন প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও আইনের শাসন শক্তিশালী করতে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের প্রতিফলন হিসেবে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।