চেনা পৃথিবীতে আসে বৈশাখ

যুগান্তর সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম প্রকাশিত: ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ১১:২৩

বাংলা বর্ষের শুরু বৈশাখ দিয়ে, এর শেষ চৈত্রের অন্তর্ধানে। দুটি মাসই তপ্ত, তৃষিত। চৈত্রে মাটি ফেটে চৌচির হয়, বৈশাখে ঝড় আসে, যে ঝড় বৃষ্টিও নামায়। তবে সেই বৃষ্টিপাত হয় হঠাৎ হঠাৎ, ফলে মাস দুটি খুব সহনীয় নয়। মাঠের কৃষক আর শহরের পথচারীকে এ মাস দুটি ক্লান্ত, ঘর্মাক্ত করে। তাদের স্বস্তি কেড়ে নেয়। কিন্তু চৈত্রের শেষ ও বৈশাখের শুরু যে নতুন বছরটি নিয়ে আসে, তার উদযাপনে মানুষের ক্লান্তি নেই। গঞ্জের দোকানি, শহরের ব্যবসায়ী এ দিন নতুন হালখাতা খোলেন। খদ্দেরদের মিষ্টিমুখ করান। গ্রামে মেলা হয়, শহরে এখন মঙ্গল শোভাযাত্রা হয়। নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার একটা চর্চা এখনো আছে, এবং শহরগুলোতে তার পরিসর বাড়ছে।


তারপরও নববর্ষ উদযাপন যে সর্বজনীন, তা বলা যাবে না। আমার অভিজ্ঞতা বলছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের বৈসু, সাংগ্রাই ও বিজু উৎসবে যেরকম প্রায় প্রত্যেক পরিবার অংশগ্রহণ করে, পহেলা বৈশাখে বাঙালিদের অংশগ্রহণ তার ধারে কাছেও নয়। পঞ্চাশ বছর আগেও শহরগুলোতে বাংলা নববর্ষ নিয়ে তেমন কোনো উচ্ছ্বাস বা আয়োজন চোখে পড়ত না, গ্রামের বাজার বা গঞ্জে বরং এর আগমন অনেক বেশি দৃশ্যমান ছিল। কোনো কোনো গ্রামে মেলা হতো। এখন নববর্ষ নিয়ে উচ্ছ্বাস শহরগুলোতেই বরং বেশি।


পরিবেশগত সংকট, যা গভীর করছে জলবায়ু পরিবর্তন, এখন চৈত্র-বৈশাখের চরিত্রে অনেক পরিবর্তন আনছে। আগামীতে এ পরিবর্তন আরও ব্যাপক হতে পারে, তাতে কালবৈশাখীর সংখ্যা বাড়তে পারে, কমতেও পারে। তবে যা হওয়ার ইঙ্গিত এখনই পাওয়া যাচ্ছে, তা হচ্ছে তাপমাত্রার পারদ ওপরে ওঠা। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেলে প্রলয় নেমে আসবে। সেই আশঙ্কার কথা না তুললেও এটুকু বলা যায়, গত পঞ্চাশ বছরে চৈত্র-বৈশাখের দাবদাহ, অন্তত শহরগুলোতে বেড়েছে। শহরগুলোর বায়ুর মান ক্রমাগত খারাপের দিকে যাচ্ছে, অর্থাৎ এখন থেকে নববর্ষকে নিয়ে নতুন যে কাজ করতে হবে, তা হচ্ছে প্রকৃতিকে প্রতিপালন ও রক্ষা করা থেকে নিয়ে পরিবেশ দূষণ রোধ করার বাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া।


গত কয়েক দশকে নববর্ষ নিয়ে আমাকে অনেক লেখাই লিখতে হয়েছে। অনেক লেখাতে আমি নববর্ষের ইতিহাসের প্রসঙ্গ তুলেছি, এর উদযাপনের বিবর্তন নিয়ে লিখেছি, নববর্ষ আমাদের কী বাণী দেয়, এ নিয়েও মন্তব্য করেছি। তবে আজকের এ লেখাটিতে আমি ইতিহাস বা উদযাপনের বিষয়ে যাব না, যদিও বাণীর বিষয়টি থাকবে। আমরা জানি, কোনো ‘দিবস’ কোনো বাণী দেয় না, এটি আমরাই বরং দিনটির ওপর চাপিয়ে দেই এবং দিনটির হয়ে নিজেরাই তা ঠিক করে নেই। এটি করার মধ্যে দিনটি যে গুরুত্বপূর্ণ, সে বিষয়টি স্বীকার করে নেই এবং বাণীর ভেতর দিয়ে আমাদের প্রত্যাশাগুলো, কর্তব্যগুলো নির্ধারণ করে ফেলি। এবার বৈশাখ আমাদের কী বাণী দিতে পারে, তার একটি ইতোমধ্যে উল্লেখ করেছি। আরেকটি হতে পারে আমাদের সংস্কৃতিকে রক্ষা করার জন্য সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ। অনেক বছর আগে শামসুর রাহমান এ কথাটি নববর্ষ বরণের এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন। গত শতকের শেষ দশকের শুরুতে। আজ, প্রায় ত্রিশ বছর পর তার সেই কথাটি অনেক বেশি গুরুত্ব নিয়ে প্রাসঙ্গিক হচ্ছে।


এ লেখাটির শিরোনাম শামসুর রাহমানের একটি গান থেকে নেওয়া। গানের এ পঙ্ক্তির আগের পঙ্ক্তিতে তিনি লিখেছেন, ‘প্রান্তরে আজ নতুনের ডাক।’ এ বৈশাখেও, প্রতি বৈশাখের মতো, আমরা নতুনের ডাক শুনব। কিন্তু সেই ডাক কি সত্যি নতুন হবে, না নতুন মোড়কে পুরোনোর পুনরাবির্ভাব হবে?

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও