
মূল্যস্ফীতি তাহলে কমবে কীভাবে?
জ্বালানি তেল, বিশেষত ডিজেলের দাম এত সামান্য কমানো হয়েছে যে, অর্থনীতিতে এর কোনো প্রভাবই পড়েনি। অথচ ডিজেল হলো সেই পণ্য, যা সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়, তাই এর দাম মূল্যস্ফীতিতে রাখে বড় ভূমিকা। উচ্চ পর্যায়ে থাকা মূল্যস্ফীতি কমানো সরকারের ঘোষিত লক্ষ্য বলেই মনে করা হচ্ছিল। বিশেষত ডিজেলের দাম তাৎপর্যপূর্ণভাবে কমিয়ে আনা হবে। তেমনটি ঘটতে দেখা গেল না।
একই সময়ে আবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো গড়ে সাড়ে ৮ শতাংশ। ডিজেলের দাম কমানো হলো লিটারে ৭৫ পয়সা। ভেজালের আশঙ্কায় কেরোসিনের দামও ডিজেলের সমান রাখা হলো। ভেজাল ও পাচারের আশঙ্কায় জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণের ‘ট্র্যাডিশন’ রয়েছে। এসব রোধে যেন কোনো কর্তৃপক্ষ নেই! পেট্রোল, অকটেনের দাম অবশ্য কিঞ্চিৎ বেশি কমানো হয়েছে। এতে প্রাইভেটকার মালিকের পাশাপাশি বাইকাররা কিছুটা সুবিধা পাবেন। বাইকে যাত্রী পরিবহনকারীরা আরও কিছুটা উপকৃত হতেন পেট্রোল-অকটেনের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো হলে। লিটারে ৩-৪ টাকা কমানোটা বড় খবরও হয়নি।
২০২২ সালের আগস্টে জ্বালানি তেলের দাম গড়ে এক লাফে ৪২ শতাংশ বেড়ে যায়। তখন ডিজেলের দাম বাড়ে লিটারপ্রতি ৩৪ টাকা। এর কিছুদিন আগে ডিজেলের দাম ১৫ টাকা বাড়ানোর ঘটনাও স্মরণযোগ্য। বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ার ‘অজুহাতেই’ ওইসব ঘটানো হয়; যদিও ওই মুহূর্তে দাম হয়তো ছিল স্থিতিশীল কিংবা নিম্নগামী। আসলে বিপিসির ‘পুঞ্জীভূত লোকসান’ কমাতে বা দ্রুত সরকারের আয় বাড়াতেই নেওয়া হয়েছিল ওইসব পদক্ষেপ। রেকর্ড বৃদ্ধি ঘটিয়ে ওই মাসেই, অবশ্য লিটারপ্রতি ৫ টাকা জ্বালানি তেলের দাম কমানোর ঘটনাও ঘটে। সমালোচনার মুখে দামে কিছুটা সংশোধনের পদক্ষেপ অবশ্যই ইতিবাচক।
এর মধ্যে করোনাকালে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, বিশেষত ডিজেলের দাম তলানিতে নেমে এলেও দেশে এর দামে ‘নিম্নমুখী সমন্বয়’ করা হয়নি। হলে এর সুফল মিলত মূল্যস্ফীতি হ্রাসের ঘটনায়। তখন মূল্যস্ফীতি অবশ্য অত বেশি ছিল না। তবে লকডাউনসহ অর্থনীতিতে গতিশীলতা কমে যাওয়ায় রুজি-রোজগারে বড় ধাক্কা এসেছিল। তখনও জ্বালানির উচ্চ মূল্য বহাল রাখে সরকার। তাতে এর ব্যবসা করা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি অনেক মুনাফা করে। মাঝে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে জ্বালানির বাজার চড়ে যাওয়ার সময়টা বাদে সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে। ৯ বছরের মধ্যে আট বছরই বিপিসি মুনাফা করেছে বলে খবরে প্রকাশ। সরকারকে লভ্যাংশও দিয়েছে।
এ অবস্থায় জ্বালানি তেলের দামে নামমাত্র হ্রাসের খবর মোটেও উৎসাহজনক হয়নি। এ মুহূর্তে বিশ্ববাজারে জ্বালানির দামে যে বিরাট ঊর্ধ্বগতি রয়েছে, তাও নয়। মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতিসহ বিশ্বের বড় বড় অর্থনীতিতে নতুন করে গতিশীলতা সৃষ্টির প্রবণতায় জ্বালানির চাহিদা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে অবশ্য। ওপেকভুক্ত দেশগুলোও জ্বালানি উৎপাদন কমিয়ে এর দাম বাড়ানোর চেষ্টায় আছে। এসব কারণে সামনে ডিজেলসহ জ্বালানির দাম বাড়ার প্রবণতা থাকবে বলে রয়েছে প্রক্ষেপণ। তবে এখন পর্যন্ত বিশ্ববাজার স্থিতিশীল। এমন একটা অবস্থায় আমাদের মতো যে দেশ উচ্চ মূল্যস্ফীতি মোকাবিলা করছে, সেখানে আরও বেশি হারে জ্বালানির দাম কমিয়ে স্বস্তি জোগানোর সুযোগ ছিল বৈকি।