কঠিন সময়ে নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সামনে যে সাত চ্যালেঞ্জ
নতুন সরকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ। সরকারের কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার দায়িত্ব এখন অনেকটাই তাঁর ওপর। পরিবর্তিত বিশ্বে এই চ্যালেঞ্জ আগের চেয়ে অনেক বেশি জটিল ও বহুমাত্রিক।
টানা চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একসময় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ছিলেন পরিবেশমন্ত্রীও। মন্ত্রিসভা গঠনের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নতুন সরকারের অন্যান্য চ্যালেঞ্জের মধ্যে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সামনে থাকা চ্যালেঞ্জগুলোর দিকে একবার চোখ বোলানো যাক—
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত
আমার বিবেচনায় বৈদেশিক ক্ষেত্রে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর জন্য সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে যৌক্তিক পর্যায়ে আনা। নির্বাচনের বেশ আগে থেকেই সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছিল।
ইউরোপের সঙ্গে সমঝোতা
নির্বাচন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) উচ্চপদস্থ প্রতিনিধি ৯ জানুয়ারি এক বিবৃতিতে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের মতো মূল্যবোধের ওপর জোর দেওয়া হয়। সব বড় দল নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় ইইউ দুঃখ প্রকাশ করে।
যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সম্পর্ক
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রতিক্রিয়া অনেকটাই যুক্তরাষ্ট্রের মতো। নির্বাচনের পরদিন যুক্তরাজ্যের বিদেশ মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, এই নির্বাচনে মানবাধিকার, আইনের শাসন এবং যথাযথ প্রক্রিয়া সব ক্ষেত্রে পালিত হয়নি। নির্বাচন-পূর্ববর্তী সহিংসতা ও ভীতি প্রদর্শনেরও নিন্দা জানায় যুক্তরাজ্য।
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক
যেকোনো বিচারেই ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দুই দেশেরই সর্বোচ্চ নেতৃত্ব বারবার বলেছেন, এই সম্পর্ক এখন সর্বোচ্চ শিখরে অবস্থান করছে এবং তা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের রোল মডেল। পশ্চিমের দেশগুলো যখন ২০২৪ সালের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছিল, ভারত তখন ছিল অনেকটাই নীরব।
ভারত ও চীনের সঙ্গে ভারসাম্য
নির্বাচনের আগে–পরে চীনের বক্তব্য ও প্রতিক্রিয়া সরকারের জন্য স্বস্তিদায়ক ছিল। নির্বাচনের পরদিনই ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাঁকে অভিনন্দন জানান। বিগত বছরগুলোতে বর্তমান সরকারের সঙ্গে চীনের সম্পর্কও ছিল মোটামুটি মসৃণ।
মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা
এই বহুল আলোচিত বিষয়টি নিয়ে কোনো ভূমিকার প্রয়োজন নেই। হাছান মাহমুদের পূর্বসূরির পাঁচ বছরের মেয়াদে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
মানবাধিকার
যখনই কোনো মানবাধিকার সংগঠন যেমন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্বিচার গ্রেপ্তার, গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ বা বিচারহীনতার অভিযোগ আনলে সরকার সাধারণভাবে এসব অভিযোগ নাকচ করে বা এতে ষড়যন্ত্র আবিষ্কার করে। সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোকেও পক্ষপাতদুষ্ট বলে প্রচার করে।