নতুন তেলক্ষেত্রের পরিণতিও কি হরিপুরের মতো হবে
বাংলাদেশে কোনো কোনো সময় খনিজ তেলের আবিষ্কার ঘটে এবং তা সংবাদমাধ্যম ও সাধারণ জনগণের মধ্যে বেশ ইতিবাচক আশাবাদ সৃষ্টি করে।
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা আশাব্যঞ্জক বক্তব্য দিয়ে নিজেদের স্বস্তিকর অনুভূতি প্রকাশ করেন এবং কৃতিত্বের ভাগীদার হওয়ার প্রয়াস পান।
বড় কর্তাদের কেউবা কূপ খনন স্থানে গিয়ে খনিবিদদের পিঠ চাপড়ে বাহবা দিয়ে আসেন। কিন্তু এরপর বিষয়টি নিয়ে কার্যকর উন্নয়ন পরিকল্পনা নেওয়ার কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না।
কিছুদিনের মধ্যে তেল আবিষ্কার নিয়ে আর কেউ কোনো উচ্চবাচ্য করেন না। যে ভূতত্ত্ববিদ ও কারিগরি ব্যক্তিরা এ ধরনের আবিষ্কারের সঙ্গে কার্যকরভাবে জড়িত থাকেন, তাঁদের সমন্বয়ে কোনো কারিগরি দল গঠন করে তেলক্ষেত্রটির সার্বিক উন্নয়নের যথার্থ কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না।
আবিষ্কার করা একটি কূপ থেকে প্রাকৃতিকভাবে যে কয় বছর আপনা–আপনি তেল বের হতে থাকে, তাতেই তেল কার্যক্রম সীমাবদ্ধ থাকে। ওই একটি কূপ থেকে মোট তেল মজুতের অল্প অংশ এভাবে উৎপাদিত হওয়ার পর কয়েক বছরের মধ্যে তা বন্ধ হয়ে যায়। মাটির নিচে পড়ে থাকে তেলের মজুতের বড় অংশ। এটি একটি অপরিপক্ব দুর্বল ব্যবস্থাপনার সাক্ষ্য বহন করে।
তেলক্ষেত্র উন্নয়নের জন্য যে বৈজ্ঞানিক প্রথা প্রচলিত রয়েছে, সে অনুসারে ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে তেলক্ষেত্রটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এটি ঘটেছে ইতিপূর্বে আবিষ্কৃত বাংলাদেশের প্রথম তেলক্ষেত্র হরিপুরে। প্রশ্ন হলো, এবারও কি নতুন এই তেলক্ষেত্রে তা-ই ঘটবে?
প্রথম তেলক্ষেত্র হরিপুর উন্নয়ন হয়নি কেন
১৯৮৬ সালে বাংলাদেশে প্রথম তেলের খনি হরিপুর আবিষ্কৃত হয়। দেশব্যাপী যথেষ্ট আশাবাদের মধ্য দিয়ে তার উৎপাদন শুরু হয় ১৯৮৭ সালে। সিলেট-৭ নামে আবিষ্কৃত কূপটি দিয়েই তেল উৎপাদন শুরু হয়।
তেলক্ষেত্রের নিজস্ব প্রাকৃতিক শক্তির মাধ্যমেই কূপটি দিয়ে তেল ওপরে আসতে থাকে। তেলকূপটি থেকে প্রথম পর্যায়ে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ ব্যারেল তেল উঠে এলেও ধীরে ধীরে তেলের চাপ কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তেল উঠে আসার মাত্রাও কমে যায়।
এ অবস্থায় তেল স্তরের চাপ বৃদ্ধির লক্ষ্যে তেলক্ষেত্র উন্নয়নের স্বতঃসিদ্ধ প্রথা অনুযায়ী কূপটিতে কোনো যান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা (যেমন পাম্প স্থাপন করা) প্রয়োগ করা হয়নি বা তেলক্ষেত্র উন্নয়নের লক্ষ্যে নতুন কূপও উৎপাদনের আওতায় আনা হয়নি। ফলে সাত বছর পর্যন্ত কূপটি তার নিজস্ব শক্তি দিয়ে অল্প হারে তেল উৎপাদন করার পর বন্ধ হয়ে যায়।
এ যেন নতুন জন্ম নেওয়া হরিপুর তেলকূপটি তার শৈশব পার হওয়ার আগেই প্রয়োজনীয় সহযোগিতা না পাওয়ার কারণে অপমৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে গিয়ে পৌঁছায়। পরে হরিপুর তেলক্ষেত্রটি নিয়ে আর কোনো উৎপাদন পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি।
- ট্যাগ:
- মতামত
- খনিজ সম্পদ
- তেলক্ষেত্র