মানহীন নির্বাচন নিয়েই চলব?
নির্বাচন ঘিরে সর্বশেষ যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো, তাতে সরকারপক্ষে দেখা যাচ্ছে স্বস্তি। তার সমর্থকরাও আনন্দ চেপে রাখতে পারছে না। তপশিল ঘোষণার আগমুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে দেওয়া ‘নিঃশর্ত সংলাপের’ চিঠি নিয়ে ছোটাছুটিতেও কোনো ফল হলো না। সরকারপক্ষ বলে দিয়েছে, এখন আর সংলাপের সময় নেই। এখন নির্বাচনের সময়। নির্বাচনের পরিবেশও নাকি তৈরি হয়েছে। যেটুকু বাকি আছে, সেটি করবে নির্বাচন কমিশন।নির্বাচনের এমন পরিবেশই কি সরকার চেয়েছিল? তবে প্রধান বিরোধী দলকে বাইরে, এমনকি ধরপাকড়ের মুখে রেখে নির্বাচন করাটা বোধহয়
সর্বশেষ ‘অপশন’ ছিল তাদের। সরকার কি চায়নি, বিএনপির অংশগ্রহণে এবার একটু ভিন্ন ধরনের নির্বাচন হোক? নাকি ২০১৪ আর ২০১৮ থেকে ভিন্নধর্মী নির্বাচনের কথাটা কেবল মুখে বলা হয়েছিল? অন্তরে ছিল ওই রকমই একটা কিছু করে আরেকটা মেয়াদ নিশ্চিত করা? সেটি সরকারের খুব ভেতরের লোকজনই ভালো বলতে পারবেন। তারা হয়তো এমনও চেয়েছিলেন, ২০১৮ সালে যে ‘আসন সমঝোতা’ কার্যকর হয়নি– এবার সেটি হোক। বিরোধী দলকে ৮৭ আসন দেওয়ার কথা নাকি সেবার হয়েছিল। এবার হয়তো শতাধিক আসনের ‘প্রস্তাব’ ছিল। একজন অর্থনীতিবিদের গবেষণা জরিপে প্রদর্শিত সম্ভাব্য নির্বাচনী ফলেও ওই রকম একটা কিছুর প্রতিফলন আমরা দেখেছিলাম।
বিরোধী দল, বিশেষত বিএনপির অবশ্য বিশ্বাস নষ্ট হয়ে গেছে সরকারের ওপর। এ অবস্থায় উপযুক্ত ‘গ্যারান্টর’ বা নিশ্চয়তা প্রদানকারীর কথা নাকি উঠেছিল। কে হবে এমন গ্যারান্টর? সে পক্ষকেই বা কেন বিশ্বাস করতে যাবে বিএনপি? দলটির হাইকমান্ড আসলে এসবের মধ্যে এবার ছিল না। একটি নির্দলীয় নির্বাচনকালীন সরকার অর্জন করে নির্বাচনে যাওয়ার পথেই ছিল তারা। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমারা দৃঢ়ভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পক্ষে দাঁড়ানোয় তাদের আস্থা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। প্রধান সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না, এমন অবস্থানও নেয় পশ্চিমারা। সর্বশেষ নিঃশর্ত সংলাপের চেষ্টায়ও সে বার্তাটি ছিল।
‘নিঃশর্ত সংলাপের’ বিরুদ্ধেই কিন্তু ছিল বিএনপি ও তার মিত্ররা। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের বিষয়ে সরকার নীতিগতভাবে রাজি হলে তবেই সংলাপ– এটিই ছিল তাদের অবস্থান। যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ উদ্যোগে সরকারপক্ষ আগ্রহ দেখালেও বিএনপি যে বেঁকে বসত না, তা কিন্তু বলা যায় না। সরকারপক্ষ প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করায় তাদের আর কিছু বলতে হলো না। যেমন তারা বলতে পারত, আমাদের সংলাপ করার উপযুক্ত লোকজনকে তো কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছে। এমনও বলতে পারত, সংলাপ হতে হবে খালেদা জিয়া কিংবা তারেক রহমানের সঙ্গে। তারেক রহমান আবার ‘দণ্ডিত আসামি’। সরকারপক্ষ তখন নিশ্চয়ই বলত– তার সঙ্গে কীসের সংলাপ?