আন্দোলন ঠেকাতে কেন এ যুদ্ধসাজ
গণমাধ্যম, ভাষার তেজ ও তাপ
বাংলাদেশের চলতি রাজনীতি এবং ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ ও পাল্টা শান্তি সমাবেশ নিয়ে গত দুই সপ্তাহে দেশের টিভি চ্যানেলগুলোতে অন্তত শ-দুয়েক টকশো হয়েছে। পত্রিকাগুলোও ফিচার, মতামত ও জনভাবনায় ভরপুর। অসংখ্য টকশো দেখলাম। মতামত-অভিমত-উপসম্পাদকীয় পড়লাম। উদ্দেশ্য রাষ্ট্রের ভবিষ্যতের একটি গতিধারার সন্ধান পাওয়া। সমাধানের ইঙ্গিত খুঁজে পাওয়া। আশ্চর্যের বিষয়, কয়েকশ ঘণ্টার তর্কাতর্কি-বাহাস, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ থেকে সংকটের সমাধানের পথ কিংবা ভবিষ্যতের সম্ভাবনার কোনো কূলকিনারাই মিলছে না। বরং গণমাধ্যমে দেশের রাজনীতির বিশ্লেষণ আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষণকে হটিয়ে দিয়েছে।
গত ক’দিন বাংলাদেশের টেলিভিশন ও পত্রপত্রিকায় অনুসন্ধানের শীর্ষে ছিল ‘২৮ অক্টোবর কী হতে চলেছে?’ কাছাকাছি শিরোনামের প্রায় ৫০টি টকশো দেখা অভূতপূর্ব ঘটনা। বহুল ব্যবহৃত শব্দগুলো ছিল আতঙ্ক, আশঙ্কা, ভীতি, শঙ্কা, উদ্বেগ, দুর্যোগ, বিপর্যয়, পতন, হিংস্রতা, সহিংসতা, অগ্নিসন্ত্রাস, হত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ, জনজীবনে দুর্ভোগ, উন্মাদনা, প্রতিহিংসা, ক্ষোভ, প্রতিরোধ, প্রতিশোধ, মুখোমুখি, যুদ্ধমান, যুদ্ধোন্মাদনা ইত্যাদি। গণমাধ্যমগুলো টকশো বা খবরের শিরোনামে এসব শব্দের ব্যবহার বিষয়ে তেমন সংবেদনশীলতা দেখায়নি। আমরা জানি, গণমাধ্যম জনমানস গড়ে দেয়। নোয়াম চমস্কির ‘ম্যানুফ্যাকচারিং কনসেন্ট’ বা সম্মতি উৎপাদন বিষয়টি আমাদের জানা। এসব শব্দ ব্যবহারের প্রতিক্রিয়া জনমানসে দ্রুত ভীতিকর বার্তা পৌঁছে দেয়। সারাদেশ থমথমে। গণমাধ্যম এবার জনতাকে আতঙ্কিত, ভীতিগ্রস্ত করে তোলার কাজ আগ বাড়িয়ে করে দিয়েছে। এসব শব্দের উপর্যুপরি ব্যবহারের ফলে জনমানসে ভীতির অভিঘাত প্রবল। শব্দগুলো যত কম ব্যবহৃত হতো, জনগণের আতঙ্ক-আশঙ্কা ততই কমত। আতঙ্কিত মানুষ ভুল তথ্য জেনে ভুল করে। গুজবের ফাঁদে পা বাড়ায়। এবারের রাজনৈতিক মাঠের উত্তাপ-আঁচ সব নাগরিকের গায়ে লাগছে।