একটি সেলফি আমাদের দেউলিয়া রাজনীতি
‘সেলফি’—যার অর্থ নিজেই নিজের ছবি তোলা। নানা অঙ্গ-ভঙ্গিমায় নিজের ছবি তুলে মুহূর্তেই তা দেখতে পারার স্বাধীনতা এনে দিয়েছে সেলফি। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোর বদৌলতে সেলফি শব্দ ও সংস্কৃতি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। হাটে, মাঠে, ঘাটে, পথে-প্রান্তরে—সর্বত্রই আজ ‘সেলফি’র জয়জয়কার। দুঃখ, শোকে ম্রিয়মাণ মানুষও কান্নার মাঝে চট করে ধরে রাখছে তার ওই মুহূর্তের স্মৃতি।আর আনন্দের সময় ‘সেলফি’ তো এক অনিবার্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
এ কথা তো অস্বীকার করা যাবে না যে মানুষ নিজেকে দেখতে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। তাই হয়তো আয়না, কিংবা ক্যামেরার প্রতি আকর্ষণ কখনোই গোপন করতে পারে না। নিজের খুঁটিনাটি বিষয় কিংবা ভঙ্গিমা দেখতে সবার আড়ালে হলেও দাঁড়িয়ে যাই আয়না বা ক্যামেরার সামনে। তবু খুঁতখুঁতানির শেষ নেই। অন্যের সামনে নানা অঙ্গ-ভঙ্গিমায় দাঁড়াতে দ্বিধা কাজ করে অনেকের। এই সমস্যার সমাধান করল একটি নতুন প্রযুক্তি, একটি নতুন শব্দ ‘সেলফি’!
এই অভিনব পদ্ধতি নিজের ছবি তোলার ক্ষেত্রে মানুষকে স্বাবলম্বী করেছে। এটা এক অর্থে বেশ ভালো এবং আনন্দের কথা। ব্যস্ত দুনিয়ায় পরনির্ভরশীলতা যত কম হয়, ততই মঙ্গলজনক। কিন্তু সবকিছুতে স্বনির্ভরতা মানুষকে ক্রমে বিচ্ছিন্ন ও একা করে তোলে—এ কথাও সত্যি। বিচ্ছিন্নতা মানুষকে করে তোলে স্বার্থপর ও আত্মকেন্দ্রিক। যূথবদ্ধ হয়ে কাজ করার মানসিকতা অনেক ক্ষেত্রেই নষ্ট করে দেয় এ ধরনের আত্মকেন্দ্রিকতা। বর্তমান বিশ্বের ‘বাজ ওয়ার্ড’ সেলফি ‘সেলফিশ’, অর্থাৎ স্বার্থপরের ইংরেজি শব্দের সঙ্গে কোথায় যেন মিলে যায়!
এই আত্মকেন্দ্রিকতা মানুষকে তার পারিপার্শ্বিক জগৎ থেকে আলাদা করে দেয়। প্রতিটি মানুষের চিন্তা-চেতনায় তীব্রভাবে ফুটে ওঠে শুধু ব্যক্তি ‘আমি’র প্রতি আকাঙ্ক্ষা। এই আকাঙ্ক্ষার জগতে সামগ্রিক বা সামষ্টিকতার যেন কোনো ঠাঁই নেই।