বাঙালির উত্তরাধিকারে সম্পত্তির লালসা
সম্ভোগের ভেতর এই যে মুক্তিলাভের কুহক, তা থেকে বাঙালি আজও মুক্তি পায়নি। আত্মবৈরাগ্য বিলাসী এই জাতি কিন্তু সংসারবৈরাগ্য গ্রহণে অনিচ্ছুক। যে ধর্ম-দর্শন মানবজীবনকে সর্বদুঃখের হেতু এবং অন্ধমায়া মনে করে সংসার জীবনকে ঘৃণা এবং অস্বীকার করে পরিত্যাগ করেছে, সেই আত্মনিগ্রহের জৈন এবং বৌদ্ধধর্ম কিন্তু গ্রহণ করল না বাঙালি। গৌতম বুদ্ধের মহানির্বাণ তাই বাঙালি চিত্তে কৌতূহল সৃষ্টি করলেও গ্রহণে আগ্রহ জাগায়নি।
প্রচণ্ড হৃদয়াবেগ এবং ইন্দ্রিয় আসক্তিতে ডুবন্ত এই জাতি ব্রাহ্মণ্যবাদের নির্দয় বর্ণবাদী অপমানকর জীবনে প্রশান্তির আশ্রয় খুঁজেছে ইন্দ্রিয়ভোগের সামাজিক আর পারিবারিক অধিকারে। ব্রাহ্মণ্যবাদী মনুষ্যত্ববিরোধী বর্ণাশ্রমশ্রেণির ঘৃণ্য জীবন থেকে মুক্তির জন্য বাঙালিরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে, তা একটি মাত্র সত্য। অপর সত্যটি হচ্ছে ইসলামের বৈরাগ্যবিরোধিতা এবং পরকালের পাশাপাশি ইহকালের স্বীকৃতি। ইসলামের ইহকালবাদ, তথাকথিত মুক্তির নামে আত্মনিগ্রহের বৈরাগ্যের প্রতি অনাস্থা, সংসার বন্ধন এবং ইন্দ্রিয় পরিতৃপ্তির মধ্য দিয়ে ধর্মসাধন পদ্ধতি বর্ণবাদে নিষ্পেষিত বাঙালির একাংশকে আকৃষ্ট করেছে। ওদিকে বৈষ্ণবের রাধাকৃষ্ণের দেহলীলা, বাউলের দেহাশ্রয়ী সাধন পদ্ধতি আজও বাঙালিকে আকর্ষণ করে। এসব তো এমন এক ধর্ম পদ্ধতি যা জীবনকে দেয় ইন্দ্রিয় সুখভোগের অধিকার, কিন্তু উদাসীন করে রাখে এবং অমনোযোগী হতে উৎসাহ জোগায় সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কর্তব্যে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- উত্তরাধিকারী
- লালসা
- উত্তরাধিকার