প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক উন্নয়ন মডেল বৈষম্য বাড়াচ্ছে

সমকাল হোসেন জিল্লুর রহমান প্রকাশিত: ০৬ মে ২০২৩, ০২:০১

সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ খানা আয় ও ব্যয় জরিপে লক্ষণীয় কিছু পরিসংখ্যান উঠে এসেছে। এর আগে প্রথমে শ্রম জরিপ, পরে স্যাম্পল ভাইটাল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম-এসভিআরএস জরিপ প্রকাশিত হয়। প্রতিটি জরিপের তথ্য পৃথকভাবে বিশ্লেষণের দাবি রাখে। কিন্তু এখন নতুন একটি সমস্যা দেখা দিয়েছে। তা হচ্ছে জরিপগুলোর আন্তঃসমন্বয়ের বড় ঘাটতি। যার ফলে জরিপে উঠে আসা তথ্যগুলোর মধ্যে নানাবিধ অসংগতি ও সমন্বয়হীনতা দেখা যায়। এ কারণে অনেক সময় তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে। বিবিএস কিংবা এ ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক জরিপের মাধ্যমে বাস্তবতার কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব। কিন্তু জরিপের তথ্য পুরোপুরি বিশ্বাসযোগ্য করতে হলে বিভিন্ন জরিপের মধ্যে সমন্বয় থাকা জরুরি। আলোচ্য খানা জরিপের কিছুদিন পর গত মাসের মাঝামাঝিতে প্রকাশিত বিবিএসের আরেকটি জরিপে এসেছে, দেশের মানুষের গড় আয়ু কমেছে। রিপোর্ট অন বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস নামে ২০২১ সালে পরিচালিত এ জরিপের হিসাব অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি ২ লাখ ৬০ হাজার। অথচ জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এর চূড়ান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ। অর্থাৎ এ হিসাব অনুসারে গত বছরও জনসংখ্যা ১৭ কোটিতে পৌঁছেনি। দুই জরিপে দুই রকম তথ্য থাকাও বড় বিষয় নয়। সমস্যা হলো, এই পার্থক্যের কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয় না। দুই ধরনের তথ্য ব্যাখ্যা করার তাগিদটা কেন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা অনুধাবন করেন না?


যা হোক, মূল প্রসঙ্গে আসি। বিবিএসের খানা জরিপে দেখা যাচ্ছে, দেশে দারিদ্র্যের হার কমেছে এবং সেটি ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে এসেছে। দারিদ্র্যের হার কমবে– এটাই প্রত্যাশিত। আমরা চাই, দেশে দারিদ্র্যের হার শূন্যের কোঠায় নেমে আসুক। কিন্তু বিবিএস এখানে যে হারের কথা বলছে, তার ভিত্তি কী? এর আগে খানা জরিপ হয়েছিল ২০১৬ সালে। ওই জরিপে উঠে আসে, দারিদ্র্যের হার ছিল ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। অর্থাৎ ছয় বছরের মধ্যে দারিদ্র্য কমেছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ, যার মধ্যে প্রায় তিন বছর ছিল মহামারি ও বৈশ্বিক অস্থিরতায় আক্রান্ত। এই হ্রাস পাওয়ার ব্যাখ্যাটি গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ কোন প্রক্রিয়ায় দারিদ্র্য কমেছে, এর সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে না পারলে তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয়।


এমন সময়ে দারিদ্র্যের হার কমার তথ্যটি সামনে এসেছে, যখন কভিড থেকে আমাদের উত্তরণ ঘটেছে মাত্র। কভিড শেষ হলেও শুরু হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যার প্রভাব পড়েছে বিশ্বব্যাপী এবং বাংলাদেশ তার বাইরে নয়। কভিড, ইউক্রেন যুদ্ধ, এর পাশাপাশি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির অভিঘাতে যে অনেকেই বিপর্যস্ত, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশেষ করে কভিডের প্রভাবে অনেকেই ‘নতুন দরিদ্র’ হয়েছে। যেটা আমাদের গবেষণায়ও উঠে এসেছিল। নতুন যে প্রবণতা দেখা গেছে সেটি হলো, গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরাঞ্চলে নতুন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেশি। কভিডকালে উপার্জন কমে নিম্ন-মধ্যবিত্ত থেকে দরিদ্র মানুষের কাতারে চলে আসার এ সমস্যা শুধু বাংলাদেশে নয়; দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলসহ গোটা বিশ্বেই দেখা গেছে। এ অবস্থায় বিবিএসের খানা জরিপে উঠে আসা দ্রুত দারিদ্র্যের হার কমা নিয়ে প্রশ্ন জাগা অস্বাভাবিক নয়। বিশেষ করে বিবিএসের খানা জরিপের প্রতিবেদনে গ্রাম ও শহরের মধ্যে বৈষম্য, মাথাপিছু আয় ও জীবিকার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত নয়, এ রকম অবকাঠামোর মতো অন্যান্য সূচকের পরিসংখ্যানও সে অর্থে আমরা দেখতে পাইনি। অথচ পরিস্থিতি এগুলোর গভীর ব্যাখ্যা দাবি করে। পাশাপাশি দরিদ্রদের জন্য কর্মসূচি ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ব্যয় যেখানে জিডিপির তুলনায় খুব বেশি নয়, সেখানে দারিদ্র্যের হারে এত উন্নতি বিসদৃশ মনে হচ্ছে। শ্রম জরিপ ও খানা আয়-ব্যয় জরিপের তথ্যের সমন্বয়ে নানাবিধ চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কর্মসংস্থান কৃষিতে বেড়েছে, শিল্পে কমেছে; আবার নগর দারিদ্র্য অপেক্ষাকৃত দ্রুততর গতিতে কমেছে। ওদিকে মাথাপিছু আয়ও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এ সব মেলাব কোন বিশ্লেষণী কাঠামোতে?

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও