নগর কর্তৃপক্ষের গাছ কাটা নাচুনি বুড়ি
পরিবেশ রক্ষার দাবিতে আমরা মানববন্ধন আগেও করেছি। কিন্তু গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে যেভাবে ধানমন্ডি এলাকায় আমাদের দাঁড়াতে হয়েছিল, তা প্রায় নজিরবিহীন। এর কারণ, ওই এলাকার সাতমসজিদ সড়ক বিভাজকের গাছগুলো কাটার জন্য সিটি করপোরেশনের ঠিকাদার বাহিনীর নজিরবিহীন তৎপরতা। দিনের আলোর বদলে তারা গাছগুলো কাটার জন্য রাতের অন্ধকার বেছে নিয়েছিল। একটি দেশের নগর কর্তৃপক্ষ তার নাগরিকদের চোখে ধুলা দিতে এভাবে রাতের আঁধার বেছে নিতে পারে– অবিশ্বাস্য।
আমরা জানি, পৃথিবীতে বসবাসের অযোগ্য শহরের মধ্যে শীর্ষ সারিতে রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। এখানে যেমন বায়ুদূষণ ভয়াবহ পর্যায়ের, তেমনি অব্যাহতভাবে তাপমাত্রা বেড়ে তাপদাহের সৃষ্টি হচ্ছে। ঢাকার পার্শ্ববর্তী গাজীপুরে তাপমাত্রা ঢাকার চেয়ে ৩ ডিগ্রি কম। কারণ সেখানে গাছগাছালির আচ্ছাদন তুলনামূলক বেশি। ঢাকায় শুধু ইট-কাঠের জঙ্গল বাড়ছে। এক সময় বৃক্ষরাজিতে আচ্ছাদিত এবং নদী, খাল ও পুকুরে ভরা ঢাকায় এখন সবুজ-নীল হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা এখন শীর্ষ দূষিত বায়ুর নগরীর বাসিন্দা।
বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত, বায়ুদূষণের ফলে এ দেশের মানুষের গড় আয়ু কমে যাচ্ছে পাঁচ থেকে সাত বছর। ঢাকার পরিস্থিতি আরও সঙ্গিন। একটি নগরীতে যেখানে ২৫ শতাংশ গাছগাছালি থাকার কথা, সেখানে আমাদের রয়েছে মাত্র ৮ শতাংশ। গাছপালা, পর্যাপ্ত উদ্যান, পার্ক, জলাশয় ও খেলার মাঠহীন নগরীতে পরিণত হওয়ার পরিণাম হয়েছে ভয়াবহ। এ ভয়াবহতার সংকেত উপলব্ধি করতে হবে। এসব সমস্যার সমাধান না করে আমরা শুধু নগরায়ণ আর উন্নয়নে মেতে উঠেছি। যে কোনো প্রকল্প কেবল কংক্রিট ঢালাই, নির্বিচারে সবুজ আর নীলের নিধন। তাই অস্তিত্বের স্বার্থেই দূষণ রোধে সমাধান খুঁজতে হবে।