
অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি হস্তক্ষেপ
বাংলাদেশের কিছু সংবাদমাধ্যম বিদেশি কূটনীতিকদের বাধ্য করে বক্তব্য নিয়েছেন। একজন কূটনীতিক বলেছেন, তারা সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাননি, সংবাদমাধ্যম জোর করে মতামত নিয়েছে। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের মন্তব্যের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সিলেটে গত মঙ্গলবার এসব কথা বলেন। তার কথা হলো, দেশের সমস্যাগুলো দেশের লোক সবচেয়ে ভালো জানে। নিজের সংসারের কাহিনি বাইরের লোকের কাছে বলাটা লজ্জার বিষয়।
আপাত দৃষ্টিতে দেখলে মনে হবে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশের আত্মমর্যাদা রক্ষায় একজন নিবেদিত মানুষ। কিন্তু নিজের বক্তব্যই যে নানা সময় বিতর্ক তুলেছে সেটা আশা করি তার মনে আছে। দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কূটনীতিকদের কথা বলা, তাদের দিয়ে বলানো নতুন ঘটনা নয় বাংলাদেশে। অনাদিকাল ধরে এটা চলছে। বিশেষ করে যারা ক্ষমতার বাইরে থাকেন তারা তাদের অনেক অভিযোগ বিদেশিদের কাছে বলেন। দেশের ভেতর যখন সংকট চলে তখন সাংবাদিকরাও জানতে চান। বিদেশি দূতদের ডেকে কথা বলে এনজিওরাও।
মনে আছে নিশ্চয়ই, কমনওয়েলথ মহাসচিবের বিশেষ দূত অস্ট্রেলিয়ার সাবেক গভর্নর জেনারেল স্যার নিনিয়ান স্টেফানের কথা। ১৯৯৪ সালে মাগুরার একটি সংসদীয় উপ-নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ আনে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি সামনে আনে আওয়ামী লীগ।
তখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা এবং গণতন্ত্র সংহত করতে কমনওয়েলথ-এর তরফ থেকে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কমনওয়েলথ মহাসচিবের বিশেষ দূত হিসেবে ঢাকায় আসেন স্যার নিনিয়ান। তিনি ঢাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করেন কিন্তু সে আলোচনা সফল হয়নি।
তাই দেখা যাচ্ছে যে, এই প্রবণতা নতুন নয়। বিশেষ করে আমরা দেখেছি নির্বাচন ঘনিয়ে এলে এ তৎপরতা বাড়ে। কয়েক মাস ধরে মার্কিন ও ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধানসহ অনেকেই কথা বলছেন। বিএনপি নেতারা তো তাদের সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করছেন সেই কবে থেকে। নামে বেনামের বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তির ডাকে এরা কথা বলছেন বাংলাদেশের রাজনীতি, বিরোধীদের সভা-সমাবেশ করার অধিকার এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে। তবে হঠাৎ করে ঢাকায় নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূতের এক কথা সরকারের সব মহলকে উদ্বিগ্ন করে তুলে।