খাদ্যবণ্টন প্রক্রিয়ায় ন্যায্যতা জরুরি
মহামারী, যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ সভ্যতার ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে ঘটেছে। আবারও আমরা এই চক্রের বৃত্ত পূরণের ধারায় আছি। মহামারী যেতে না যেতেই শুরু যুদ্ধ এবং দুর্ভিক্ষের অশনি সংকেত বেজে চলছে। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৪৩-৪৪ সালের দুর্ভিক্ষপীড়িত বাংলার পটভূমি নিয়ে ‘অশনি সংকেত’ উপন্যাস লিখেছিলেন এবং পরবর্তী সময়ে প্রখ্যাত চলচিত্রকার সত্যজিৎ রায় একে সেলুলয়েডের পর্দায় তুলে এনেছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে সারা পৃথিবীতে খাদ্যসংকট নিয়ে বিস্তার আলোচনা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, বিশ্বে ভয়াবহ রকমের খাদ্য সংকট ধেয়ে আসছে আর এর বড় ভুক্তভোগী হবে পৃথিবীর খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষ।
খাদ্য সংকটের একটি বড় কারণ প্রাকৃতিক বিপর্যয়। তবে দুর্ভিক্ষের বড় কারণ রাজনৈতিক ও ব্যবস্থাপনা সংকট। দার্শনিক ও অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, দুর্ভিক্ষ যতটা না খাদ্যদ্রব্যের সংকটের কারণে তার থেকে অনেক বেশি দায়ী মানুষের অধিকারের স্বীকৃতি না থাকা এবং খাদ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনায় ত্রুটি। অন্যদিকে বিশ্বে এরকম দৃষ্টান্ত ভূরি ভূরি যেখানে প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে খাদ্য সরবরাহ করা হয়নি বা সরবরাহ মাঝপথে আটকে দিয়ে একটি দেশকে এবং তার জনগণকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তবে মানব সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশের বড় নিয়ামক হচ্ছে এই সব প্রতিকূলতা অতিক্রমের সক্ষমতা।
যুদ্ধে খাদ্যসংকটের কারণ বহুবিদ, একটি হচ্ছে উৎপাদন করতে না পারা, মজুদ ও সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়া। এর সঙ্গে যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয় তাহলে পরিস্থিতি চূড়ান্ত বিপর্যয়ের দিকে যায়। ইউক্রেন-রাশিয়া বিশ্বের খাদ্যভা-ার। এই অঞ্চলের খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়া মানে হচ্ছে সারা বিশ্বের ওপর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়া। এই দুটি দেশ মিলে পৃথিবীর ২৮ শতাংশ গম উৎপাদন করে এবং এর মধ্যে ১৫ শতাংশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে। তবে শুধুমাত্র উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার নিশ্চয়তা বিধানই যথেষ্ট নয়। জনগণের বিশেষ করে দরিদ্র মানুষের ক্রয়ক্ষমতা থাকাটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ।
- ট্যাগ:
- মতামত
- ন্যায্য হিস্যা
- খাদ্য ব্যবস্থাপনা