স্মার্ট রাজনীতির খোঁজে
সম্প্রতি লালবাগ দুর্গের অভ্যন্তরে অবস্থিত হাম্মাম স্থাপনার আমূল সংস্কার হচ্ছে মার্কিন দূতাবাসের অর্থ সহায়তায়। বিশেষজ্ঞ কমিটিতে আমাদের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার একজন স্থপতিও আছেন। তিনি মাঝে মাঝে এসে তদারকি করেন। গত ৫ অক্টোবর আমরা একসঙ্গে লালবাগ দুর্গে কাজ করছিলাম। প্রতিবারই তাকে শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রশ্ন করি। সেদিন লাঞ্চের সময় এ বিষয়ে গল্প হচ্ছিল। মিস্টার নিলম করি (স্থপতি) বলছিলেন, একটি গণতান্ত্রিক দেশে রাজাপাকসের পরিবার অগণতান্ত্রিক আচরণ করে মানুষকে ক্ষেপিয়ে তুলেছিল। সে তুলনায় বর্তমান প্রেসিডেন্ট অনেক দিক থেকে ভালো। তবে মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও তেমনভাবে গণতন্ত্রের পথে হাঁটছেন, বলা যাবে না। আমি বললাম এটি এখন দক্ষিণ এশিয়ার অনেক রাষ্ট্রেরই বড় বাস্তবতা। সরকারে যারা থেকেছেন এবং থাকেন তাদের সবারই ‘গণতন্ত্র’ শব্দটি মঞ্চের আর বক্তৃতার ভাষা হয়ে গেছে। প্রায়োগিক ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক আচরণ দৃশ্যমান থাকছে না। বিরোধী দলের সরকারবিরোধী বক্তব্য প্রচারেও গণতান্ত্রিক আচরণ তেমন খুঁজে পাওয়া যায় না। আবার গণতন্ত্র ধ্বংস করছে বলে সরকার পক্ষকে দোষারোপ করছে। লক্ষণীয় এরা যখন সরকারে ছিল তখনো গণতন্ত্র লাঞ্ছিত হয়েছে।
কি সরকারি পক্ষ, কি বিরোধী পক্ষ সবারই কথায় বা রাজনৈতিক বক্তব্যে যেটুকু স্মার্টনেস প্রত্যাশিত তাও পাওয়া যাচ্ছে না। যেন একটা বৃত্তে ঘুরছেন সবাই। দুটো পক্ষই যেন বিবদমান। ফলে উভয় পক্ষের নেতাদের ছক বাঁধা কর্তব্য প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বিষোদগার করা। প্রত্যেক পক্ষের নেতা বা মুখপাত্রদের প্রতিপক্ষের মু-ুপাত করার জন্য গৎবাঁধা কথাই প্রতিদিন নিরলসভাবে বলতে হচ্ছে। টিভি ক্যামেরার সামনে প্রতিদিন তারা একই নিন্দা বক্তব্য দিতে কিছুমাত্র বিব্রত হচ্ছেন না। বিরোধীদলীয় নেতাদের বিশেষ জপমালা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর ‘পদত্যাগ’। বিএনপি নেতারা সরকারের পদত্যাগ দাবি গত চৌদ্দ বছরে কত-শতবার যে করেছেন এর পরিসংখ্যান আমাদের জানা নেই।
সরকার এবং বিরোধী পক্ষের নেতাদের গৎবাঁধা বক্তব্য এতটা পানসে হয়ে গেছে যে এখন আর অধিকাংশ দর্শক-শ্রোতার শোনার আগ্রহ থাকছে না। বিরক্ত দর্শক এখন উভয় পক্ষের অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ পর্ব এলে টিভির চ্যানেল পরিবর্তন করে। রাজনৈতিক শব্দাঘাতের এমন বাস্তবতা উপমহাদেশের অনেক রাষ্ট্রেই রয়েছে। কিন্তু এতটা গ্রাম্যতা জড়ানো নেই কোথাও। একুশ শতকে এসে রাজনীতির ময়দান এতটা আনস্মার্ট হবে তা ভাবা যায় না।
সরকারি ও বিরোধী দলের নেতারা পরস্পরের বিরুদ্ধে বিষোদগার করতে গিয়ে নিজেদেরই যে স্বরূপ উন্মোচন করছেন তা কি বুঝতে পারছেন? উভয় পক্ষই প্রতিপক্ষকে ভোট চোর বলছেন। উভয় পক্ষই পরস্পরকে সন্ত্রাসী, দুর্নীতিবাজ, টাকা পাচারকারী হিসেবে মানুষের সামনে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। সাধারণ মানুষ তাহলে কোন আসনে বসাবেন আপনাদের? একেই বোধহয় বলে নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রাভঙ্গ করা।
- ট্যাগ:
- মতামত
- রাজনীতি
- স্মার্টনেস