মহামারীসৃষ্ট সুযোগ আমরা কি সদ্ব্যবহার করতে পেরেছি
ধরা যাক, আমাদের শ্রমজীবী দরিদ্র মানুষ কোনো না কোনোভাবে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী। এটা কি বাংলাদেশের জন্য একটা বড় সোনার খনি ছিল না? এতে শুধু কৃষি উৎপাদন ও কলকারখানায় প্রতিদিন উৎপাদন অব্যাহত থাকত তা নয়, বিদেশী নিয়োগকর্তারাও বাংলাদেশী কর্মীদের নিয়োগে অনেক বেশি আগ্রহী হতো। সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, এমনকি চীন পর্যন্ত হাজারে হাজারে বাংলাদেশী শ্রমিক নিয়োগে প্রণোদিত হতো। কর্মী নিয়োগে ন্যূনতম ঝুঁকি নিয়ে (যেমন কর্মীরা নিজস্ব বিচ্ছিন্ন আবাসিক এলাকায় বসবাস করা) উৎপাদন অব্যাহত রাখা এবং অর্থনীতিকে বাঁচানো স্বভাবতই তাদের স্বার্থে ছিল। অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি এবং অভিবাসী কর্মীদের জন্য এটা হতো অপূর্ব সুযোগ। কী চমত্কার সোনার খনি! এটা কীভাবে হাতছাড়া হলো?
শুধু বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর কভিডের প্রভাবটা চিন্তা করুন। চূড়ান্ত পরিসংখ্যানগুলো দৃষ্টিগ্রাহী। আগের ধারাবাহিকতা ও ধরন বজায় থাকলে ২০২০ সালে আমাদের অর্থনীতিতে ২৭ দশমিক ৫৩ ট্রিলিয়ন টাকা যোগ হতো, কিন্তু হয়েছে ২৬ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন টাকা। টাকার হিসাবে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১ দশমিক শূন্য ৩ ট্রিলিয়ন টাকা কিংবা ১ হাজার ৩০ বিলিয়ন টাকা। পরবর্তী আঠারো মাসের কিছু বেশি সময়ে বাড়তি ক্ষতি খুব কম অনুমান করি। ধরা যাক, সেটি ২৫০ বিলিয়ন টাকা। সব মিলিয়ে আমরা মোট ক্ষতি পাই ১ হাজার ২৮০ বিলিয়ন টাকা। ৫ শতাংশের একটি কভিড কর ৬৪ বিলিয়ন বা ৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকার রাজস্ব সৃষ্টি করত। এ অর্থ থেকে প্রতি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০ কোটি টাকা (এর মধ্যে অবকাঠামোর জন্য ৫ কোটি এবং পরিচালনার জন্য ৫ কোটি টাকা) দিয়ে নতুন ৪৯৫ সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কিংবা প্রতি উপজেলায় অন্তত একটি নতুন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গড়ে তোলা যেত। তার পরও ১ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা থেকে যায়, যা দিয়ে শহরে আরো সরকারি স্বাস্থ্য ইউনিট গড়ে তোলা যেত, যেখানে স্টেডিয়াম কিংবা বিদ্যালয়ের খেলার মাঠকে মহামারীর সময় জনগণের স্বাস্থ্যসেবার জন্য রূপান্তর করা যেত। এ ধরনের উদ্যোগে পুরো দেশজুড়ে দীর্ঘমেয়াদি মহামারী প্রস্তুতির সক্ষমতা তৈরি হতো এবং শহরগুলোর জন্য জরুরি পরিকল্পনা শুরু হতো। প্রতিটি সংকটই নতুন সুযোগ তৈরি করে, সে সুযোগ কি কাজে লাগানো গেছে? বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী অভিজাতদের কী করা উচিত ছিল তা মূল্যায়ন করার এটিই বোধ হয় সময়।