অহংকার, উপহাস ও কটূক্তি শুধুই ক্ষতিকর
প্রায় তিন যুগ আগের কথা। তখন সারাদেশের গ্রামগঞ্জে একটি জনপ্রিয় বচন ছড়িয়ে পড়েছিল। তা হলো ‘মুই কি হনুরে, মোর বাড়িত কেনবা প্রত্যেক দিন মটর সাইকল আইসে’। এর অর্থ ছিল আমি হোমরা-চোমড়া কিছু একটা হয়ে গিয়েছি। তাই আমার বাড়িতে প্রতিদিন কোন ধনীলোক বাইক নিয়ে বেড়াতে আসে।
হ্যাঁ, ৩০-৩৫ বছর আগে হোন্ডার মালিকদের বেশ বিত্তশালী মনে করা হতো। সেসময় রাস্তায় মোটরবাইকের সংখ্যা খুব কম ছিল। সেসব বাইকের শব্দ বেশি হতো। শব্দ শুনলেই মানুষ তাকাতো। বিশেষ করে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েরা চলন্ত মোটরবাইকের পিছে দৌড়াতো।
কারও বাড়িতে বাইকে চড়ে কোন আগন্তুক এলে সেখানে তারা ভিড় করতো। বাইকচালক বাচ্চাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে অতি সন্তর্পণে বাইক চালাতো। তখনকার দিনে সেটাই ছিল স্বাভাবিক। তাই কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতো না। আজকাল মানুষ জীবন-জীবিকার তাগিদে মোটরবাইক ও ইজিবাইক চালায়। রাস্তায় গিজ গিজ করা বাইকের দিকে কেউ ফিরেও তাকায় না।
মানুষের ব্যস্ততা বেড়েছে বহুগুণ। কারও দিকে অন্য কারও ফিরে তাকানোর সময় ও সুযোগ হারিয়ে যাচ্ছে। সবাই নিজের ধান্ধা নিজেরাই করছে। কেউ কারও ভালো পরামর্শ গ্রহণ করছে না। এমনকি কারও পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন মনে হলে তার আগে মোবাইল ফোনের বাটন টিপে ইন্টারনেটের দ্বারস্থ হচ্ছে। একই বলে যুগের হাওয়া। এটাই সামাজিক পরিবর্তন। কিন্তু এই পরিবর্তনের গতি-প্রকৃতি খুব নেতিবাচক। এরূপ নেতিবাচক সামাজিক পরিবর্তনের সাথে ক্রমাগত চলতে গিয়ে মানুষ হয়ে পড়ছে চরম অসহিষ্ণু। ফলে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ উবে গিয়ে আত্ম-অহংকার, আস্ফালন, দম্ভ, অহমিকার ছড়াছড়ি তৈরি হচ্ছে।
এই অবস্থা দিন দিন এতটাই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে যে, এতদিন মানুষের শ্রদ্ধার আসনে থাকা অনেক সিনিয়র সিটিজন নিজেদের মর্যাদার আসন ও অবস্থান হারিয়ে এই ভঙ্গুর সামাজিক অবস্থাকে আরও অতল সমুদ্রের দিকে দ্রুত ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বড় বড় পদে থাকা অনেকের বক্তব্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নৈতিকতা বিবর্জিত কাজ করতে উৎসাহী করে তুলছে।