কার বলে আউট ইমরান
পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফ পার্টির নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছিলেন, তিনি বিরোধীদের কাছে নতি স্বীকার করবেন না। শেষ বল পর্যন্ত খেলেছিলেন। গতকাল শনিবার দিনভর নাটকীয়তার পর মধ্যরাতে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে অনাস্থা প্রস্তাবে তিনি হেরে যান ১৭৪-০ ভোটে। ৩৪২ আসনের জাতীয় পরিষদে প্রস্তাব পাসের জন্য প্রয়োজন ছিল ১৭২ ভোট। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ১৪৪টি আসন পাওয়া ইমরানের পিটিআই কয়েকটি ছোট দলের সমর্থন নিয়ে কোয়ালিশন সরকার গঠন করে।
প্রশ্ন উঠেছে, কার বলে হেরে গেলেন ইমরান। দৃশ্যমান হলো বিরোধী দল তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে। কিন্তু এই দৃশ্যের বাইরেও অনেক খেলোয়াড় আছেন। এক—পাকিস্তানের রাজনৈতিক পালাবদলে আদালতকেও অতীতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। নওয়াজ শরিফ সরকারের আমলে আদালত ও নির্বাহী বিভাগ মুখোমুখি ছিল। একাধিক সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে আদালত কারাদণ্ড দিয়েছেন। পাকিস্তানের প্রথম গণপরিষদ ভেঙে দেওয়ার বিরুদ্ধে যে রিট হয়েছিল, হাইকোর্ট তাকে অবৈধ ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট সেই আদেশ উল্টে দিয়ে গভর্নর জেনারেলের সিদ্ধান্তকে অনুমোদন করেছিলেন।
২.
পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনাবাহিনী বরাবরই হস্তক্ষেপ করে আসছে। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে সেনাশাসন জারি করেন। প্রথমে তিনি ঢাল হিসেবে ইসকান্দার মির্জাকে নিয়েছিলেন। তিন সপ্তাহের মাথায় তাঁকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেন। এর আগে বারবার সরকার পতন ও প্রধানমন্ত্রী বদলেও সেনাবাহিনী নেপথ্যে ভূমিকা রেখেছে। পাকিস্তানই একমাত্র দেশ, যেখানে সেনাবাহিনীর প্রধান বেসামরিক মন্ত্রিসভার সদস্য হয়েছিলেন। একাত্তরে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে বাদ সাধে সেনাবাহিনী। সে সময় পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত রাখতে। পরে তিনি ইয়াহিয়া খানকে হটিয়ে সেনাবাহিনীর একাংশের সমর্থনে প্রথমে প্রেসিডেন্ট ও পরে প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু পাঁচ বছরের ব্যবধানে ১৯৭৭ সালে জেনারেল জিয়াউল হক তাঁকে পদচ্যুত করেন। পরবর্তীকালে একটি হত্যা মামলায় জড়িয়ে ভুট্টোকে ফাঁসি দেওয়া হয়। ১৯৮৮ সালে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বেনজির ভুট্টো ক্ষমতায় আসেন। কিন্তু দুই বছরের মাথায় তাঁকে হটিয়ে নওয়াজ শরিফকে ক্ষমতায় আনা হয়। তিনি মেয়াদ পূরণ করতে পারেননি। একটি নির্বাচনে পিপিপিকে হারানোর জন্য কীভাবে মুসলিম লীগসহ ডানপন্থী দলগুলোকে আইএসআই টাকা দিয়েছিল, তার বিস্তারিত বিবরণ আছে সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান আসগর খানের বইয়ে। তিনি আইএসআইর বিরুদ্ধে মামলাও করেছিলে।
৩.
২০১৮ সালের নির্বাচনে ইমরান খানের ক্ষমতায় আসার পেছনেও সেনাবাহিনীর সমর্থন ও ভূমিকা ছিল বলে পাকিস্তানের রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন আছে। আড়াই বছরের মাথায় তিনি কেন সেনাবাহিনীর বিরাগভাজন হলেন, সেটাও ভেবে দেখার বিষয়। পাকিস্তানে যে নেতা বা দল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, তাকে সরানোর জন্য নানা অপকৌশল নিয়ে থাকে নেপথ্য শক্তি। খবরে প্রকাশ, পাকিস্তানে ‘রাষ্ট্রের ভেতরে রাষ্ট্র’ বলে পরিচিত আইএসআইর প্রধান পদে ফাইজ হামিদকে বহাল রাখতে চেয়েছিলেন ইমরান। তাঁর ইচ্ছা ছিল, এই আইএসআই প্রধানই পাকিস্তানের পরবর্তী সেনাপ্রধান হবেন। কিন্তু বর্তমান সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়া রাজি হননি। পরে সেনাপ্রধানের মনোনীত নাদিম আঞ্জুমকেই আইএসআইর প্রধান পদে নিয়োগ দিলেও সেনা নেতৃত্বের সঙ্গে ইমরানের চাপান-উতোর থেকেই যায়। পাকিস্তানের সেনা নেতৃত্ব কখনোই চায় না, রাজনৈতিক সরকার শক্তিশালী হোক।
- ট্যাগ:
- মতামত
- ক্ষমতাচ্যুত
- অনাস্থা ভোট
- ইমরান খান