প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা প্রশাসক হন কীভাবে

দেশ রূপান্তর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রকাশিত: ০৬ এপ্রিল ২০২২, ০৯:৪১

বর্তমান সরকারের নির্ভরতা প্রসঙ্গে বলতে গেলে কেবল যে পুলিশ তা নয়, সরকারের নির্ভরতা জেলা প্রশাসকদের ওপরও। ‘প্রশাসক’ এই নামটাই তো বলে দিচ্ছে তাদের গুরুত্বের কথা। ইংরেজিতে নামটি ডিসি; ইংরেজ আমলে ডিসি’রা ছিল ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টর। তাদের দায়িত্ব ছিল খাজনা ও ট্যাক্স সংগ্রহের তদারকি করা। পাকিস্তান আমলে জমিদারি প্রথা উঠে যায়, খাজনা সংগ্রহও রাজস্ব আয়ের প্রধান অংশ থাকেনি; ট্যাক্সের জন্য অন্য সব দপ্তর তৈরি হয়েছে, তাই ডিসিরা আর ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টর থাকেননি, ডিস্ট্রিক্ট কমিশনার হয়ে গেছেন। কিন্তু বাংলাদেশে তাদের বাঙালিকরণ ঘটেছে। জেলা কমিশনার হয়েছেন জেল প্রশাসক। অনুবাদ যে যথার্থ হয়নি সেটা বলাই যাবে, কেবল যে শব্দার্থের দিক থেকে তাই নয়, ভাবার্থের দিক থেকেও। ভাবার্থের দিক থেকেই বরঞ্চ অধিক। প্রশাসন পর্যন্ত চলতে পারে, অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের বাংলা হিসেবে; কিন্তু ‘প্রশাসক’ একেবারেই অগ্রাহ্য। ডিসিরা মোটেই প্রশাসক নন, তারা হচ্ছেন প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী।


এমনকি ব্রিটিশ আমলেও, রাষ্ট্র যখন চলত আমলাদের শাসনে, তখনো ডিসি ছিলেন একজন পাবলিক সার্ভেন্ট; আর এখন তো সাংবিধানিকভাবেই রাষ্ট্রের মালিক হচ্ছে জনগণ; রাষ্ট্রের সব কর্মচারীই এখন জনগণের সেবক (সার্ভেন্ট অর্থে)। আমলাদের নিয়োগ দেয় যে সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান তার নাম ‘পাবলিক সার্ভিস কমিশন’ই, অন্যকিছু নয়। আর আমাদের সংবিধানে তো (অনুচ্ছেদ ২১) প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের সম্পর্কে পরিষ্কার নির্দেশই রয়েছে যে, তারা “সকল সময়ে জনগণের সেবা করিবার চেষ্টা” করাকে কর্তব্য জ্ঞান করবেন। প্রজাতন্ত্রের ‘কর্মচারী’রা তা হলে ‘প্রশাসক’ হন কীভাবে? কিন্তু যতই অসাংবিধানিক হোক, কিংবা প্রত্যক্ষরূপ সাংঘর্ষিক হোক সংবিধানের সঙ্গে তাতে বাস্তবতার কোনো হেরফের ঘটবে না; ওই অফিসাররা নিজেদের প্রশাসক হিসেবেই দেখতে অভ্যস্ত থাকবেন, এখন যেমনটা আছেন। সরকারকে তারা অনেক কাজেই সাহায্য করে থাকেন; সাহায্য করেন জাতীয় নির্বাচনের বেলাতেও; আর নির্বাচন যদি ‘ভোটারবিহীন’ বা ‘মধ্যরাতে’র কর্ম হয় তাহলে তো তাদের একটা বিশেষ রকমের কর্তব্য থাকেই, থাকবেই। ওদিকে জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ যে রাষ্ট্রের এই কর্মচারীরা তাদের যথাযোগ্য সম্মান দিতে যথেষ্ট কার্পণ্য করে থাকেন। এমনকি পিয়নরাও নাকি জনপ্রতিনিধিদের মর্যাদা দানে অপারগ হয়।


ডিসিদেরও সম্মেলন হয়েছে। তাদের কাছ থেকে সরকারি প্রত্যাশাগুলোর কথা বিভিন্ন অধিবেশনে তুলে ধরা হয়েছে। যেমন, সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে তারা যেন জনগণের সেবক হিসেবেই কাজ করেন, কর্তা হিসেবে নয়। মহামান্য রাষ্ট্রপতি তার বক্তৃতায় তাদের পরিষ্কারভাবেই বলেছেন কথাটা : “মনে রাখবেন, জনগণের টাকায় আপনাদের বেতন হয়।” মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়রা তাদের দায়িত্বগুলোও মনে করিয়ে দিয়েছেন। যেমন, জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করা; খাদ্য নিরাপত্তা স্থিতিশীল রাখা; দূষণ ও দখল রোধের ব্যাপারে নজর দেওয়া; সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ করা; পশুখাদ্যে ভেজাল রোধে সতর্কতা অবলম্বন; দুর্নীতি রোধে সচেতনতা তৈরি করা (বলা হয়েছে, দুর্নীতির সুযোগ কোথায় কোথায় রয়েছে ডিসিরাই তো ভালো জানেন)। গুজব এবং অপপ্রচার ঠেকানোর ব্যাপারে সতর্ক থাকার নির্দেশও রয়েছে। এবং বলা হয়েছে সবকিছু ঢাকায় পাঠাবেন না, নিজেরাও সিদ্ধান্ত নেবেন। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলো যেন বাতিল করা হয় এই রকমের পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।


এসব নির্দেশ ও পরামর্শের বিপরীতে ডিসিরাও তাদের প্রত্যাশার কথাগুলো বেশ গুছিয়েই জানিয়েছেন। তাদের একটি প্রত্যাশা হচ্ছে তারা যাতে জাতিসংঘের শান্তি মিশনে যেতে পারেন তার ব্যবস্থা করা। (অনুক্ত বক্তব্যটি সম্ভবত ছিল এই রকমের যে অন্যান্য বাহিনীর কর্মকর্তারা যেখানে সুযোগ পাচ্ছেন, সেখানে তারা কেন পাবেন না, তারা অযোগ্য কোন দিক দিয়ে?) আরেকটি প্রত্যাশা হচ্ছে উন্নয়ন প্রকল্পের তদারকির ও মূল্যায়নের দায়িত্ব দেওয়ার এবং গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য এককালীন অর্থ বরাদ্দকরণের। [আজকের পত্রিকা, ২০-০১-২২] তাৎক্ষণিকভাবে এই দুটি দাবি মেনে নেওয়া হয়নি, এবং মনে হচ্ছিল হয়তো স্থগিতই থাকবে। অতিরিক্ত ‘দায়িত্ব’ তারা পাবেন না। কিন্তু এই প্রবন্ধটি লিখতে লিখতেই দেখি খবর এসে গেছে [ডেইলি স্টার, ১০-০২-২২] যে প্রথম দাবিটা মেনে নেওয়া হয়েছে। তার অর্থ এখন থেকে ডিসিরাই উন্নয়ন প্রকল্পের তদারকি ও মূল্যায়নের কাজটি করবেন। উল্লেখ্য, উন্নয়ন প্রকল্পের বিশেষ সৌন্দর্য ও গুণ হচ্ছে এই যে, এরা আকারে বৃহৎ হতে পছন্দ করে এবং এদের বাস্তবায়নের সময়সীমা ধাপে ধাপে বৃদ্ধি পায় এবং সঙ্গে সঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে ব্যয় বরাদ্দও বেড়ে যায়। তবে ডিসিদের এই নতুন কর্তব্যপ্রাপ্তিতে উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত প্রকৌশলী ও পেশাজীবীরা মোটেই উৎফুল্ল হননি; তারা অবিলম্বে এই নির্দেশনার প্রত্যাহার চেয়েছেন, এবং হুমকি দিয়েছেন যে অন্যথায় তারা কর্মবিরতি পালন, এমনকি তারচেয়ে শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণেও বাধ্য হবেন। তাদের যুক্তি হলো উন্নয়নের ব্যাপারে যে কারিগরি ও প্রকৌশলী জ্ঞান আবশ্যক ডিসিরা তা কোথায় পাবেন? ক্ষমতায়ন এবং তার বিরুদ্ধে ‘বঞ্চিত’দের বিরোধ যে কোনো সুসংবাদ নয় তা কি আর বলতে!

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও